টেস্ট বোলার হিসেবে নিজের সর্বোচ্চ চূড়ায় হয়তো কখনো পৌঁছাতে পারেননি, কিন্তু সাউথ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে মরনে মরকেলের নাম উজ্জ্বলভাবেই লেখা থাকবে। ডেল স্টেইনের সাথে মিলে গড়ে তুলেছিলেন সময়ের অন্যতম ভয়ংকর পেস বোলিং জুটি। ৮৫ টেস্টে ২৭.৭৩ গড়ে ৩০৬ উইকেট, যেকোনো বোলারকে অফার করা হলে নির্দ্বিধায় লুফে নেবেন এই পরিসংখ্যান। তাঁর গতি, উচ্চতার কারণে পাওয়া বাউন্স মিলিয়ে ব্যাটসম্যানদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জোহানেসবার্গ টেস্ট শেষেই অবসরে যাচ্ছেন, যাওয়ার আগে তাঁর পরিসংখ্যানের দিকে একবার চোখ বুলানো যাক।
ভারতের কোন পেসার ২৯ গড়ের নিচে ৩০০ টেস্ট উইকেট পাননি, নিউজিল্যান্ড থেকেও পেয়েছেন মাত্র ৩ জন। কিন্তু মরকেল যে জন্মেছেন সাউথ আফ্রিকায়, যাকে বলা হয় পেসারদের স্বর্গরাজ্য। যে কারণেই কিনা, সাউথ আফ্রিকাতেই মরকেলের চেয়ে ভালো গড়ে ৩০০ উইকেট নেয়া বোলার আছেন তিন জন, অ্যালান ডোনাল্ড (২২.২৫), ডেল স্টেইন (২২.৩২) ও শন পোলক (২৩.১১)। মরকেলের অবদানকে তাই খালি চোখে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী ক্যারিয়ার বিবেচনায় নিলে ২৭.৭৩ গড় হিসেবে হয়তো খুব একটা মন্দ নয়, কিন্তু মরকেল হতাশ হবেন নিয়মিত বিগ পারফরমেন্স দিতে না পারায়। এত লম্বা ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৮ বার, অন্য শীর্ষ সাউথ আফ্রিকান বোলারদের তুলনায় যা ঢের কম। স্টেইন ৮৬ টেস্টে পেয়েছেন ২৬ বার, ডোনাল্ড ৭২ ম্যাচে ২০ বার। এমনকি মরকেলের বর্তমান পেস সঙ্গী ফিল্যান্ডার ৫৩ টেস্টে পেয়েছেন ১২ বার, সবচেয়ে নবীন রাবাদাও ২৯ টেস্টে পেয়ে গেছেন ৯ বার। মরকেলকে পোড়াবে আরও একটি তথ্য, উইকেটের দিক থেকে সাউথ আফ্রিকার সেরা আট বোলারের মধ্যে কেবল দুইজনেরই ম্যাচে দশ উইকেট নেই, একজন জ্যাক ক্যালিস, যার কিনা বোলিংটা ছিল দ্বিতীয় অস্ত্র। আরেকজন? মরকেল নিজে।
মরকেল যেই ৮৫ টেস্টে খেলেছেন, তার মধ্যে ৬২ টিতেই বোলিং সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন স্টেইনকে। অবাক করা বিষয় হল, মরকেল ৮৫ টেস্ট মিলিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৩০৬ টি, আর স্টেইন কেবল ওই ৬২ টেস্টেই পেয়ে গেছেন ৩০৫ উইকেট! এছাড়া ফিল্যান্ডারকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন ৪২ টেস্টে, সেই ৪২ টেস্টে ফিল্যান্ডারের উইকেট ১৫৫ টি, গড়-স্ট্রাইক রেট দুটোই মরকেলের চেয়ে ঢের কম। এমনকি বছর দুয়েক আগে খেলা শুরু করা রাবাদার গড়-স্ট্রাইক রেটও মরকেলের চেয়ে ভাল।
যদিও, ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় দলের থার্ড সিমারের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে মরকেলকে। যেই ১৫৮ ইনিংসে বল করেছেন, তার মধ্যে ৭২ বারই এসেছেন থার্ড বোলার হিসেবে। ওই ৭২ ইনিংসে ২৯.৯৭ গড়ে পেয়েছেন ১২৮ উইকেট। আর যখনই নতুন বল হাতে পেয়েছেন, নিজের কার্যকারিতা বোঝাতে ভুল করেননি। যেই ৭২ ইনিংসে ওপেনিং বোলার হিসেবে বল করেছেন, তাতে ২৫.৭৩ গড়ে পেয়েছেন ১৫৬ উইকেট।
টেস্টে প্রথম ২০ ওভারের মধ্যে বল করে মরকেল উইকেট পেয়েছেন ৯০ টি, সাউথ আফ্রিকান বোলারদের মধ্যে ম্যাচের প্রথম ২০ ওভারে এর চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল স্টেইন (১২৪ টি) ও এনটিনির (১০৭ টি)। তবে আরেক জায়গায় মরকেল সবার উপরে। গত এক যুগে চেঞ্জ বোলার হিসেবে বল করে সব দল মিলিয়েই সবচেয়ে বেশি উইকেট মরকেলের। ৮৬ ইনিংসে তাঁর উইকেট ১৫০ টি, দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিল ওয়াগনারের উইকেট ১৪০ টি।
দেশে এবং বিদেশে প্রায় সমানভাবেই ভাল খেলেছেন মরকেল। দেশের মাটিতে তাঁর গড় ২৬.৩০, বিদেশের মাটিতে সেটা একটু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯.১৫ তে। বিশেষ করে এশিয়ার মাটিতে ৩০.৮৫ গড় তাঁর বোলিং সামর্থ্যেরই প্রমাণ দেয়।
তবে ২০১৭ সালে ক্যারিয়ার হুমকিতে ফেলে দেয়া ইনজুরি থেকে ফিরে আসার পর থেকে আগুনে ফর্মেই আছেন মরকেল। ২০১৭ এর শুরু থেকে ১৪ টেস্টে ২১.৭১ গড়ে নিয়েছেন ৬৪ উইকেট। এই সময়ের মধ্যে কেবল দুইজন বোলারের গড় মরকেলের চেয়ে ভাল ছিল। একজন জেমস অ্যান্ডারসন, আরেকজন তাঁর সতীর্থ কাগিসো রাবাদা। সর্বশেষ কেপটাউন টেস্টেও ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন, পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে মাত্র ৩য় বারের মত। যদি জোহানেসবার্গ টেস্টেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন, প্রথম সাউথ আফ্রিকান বোলার হিসেবে করে ফেলবেন টানা দুই টেস্টে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পাওয়ার নজির।
ক্রিকইনফো অবলম্বনে