দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ধরা হয় তাঁকে। বর্তমানে ব্যস্ত আছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ খেলতে। এর মধ্যেই সময় করে ওয়েবসাইট ক্রিকেটসকার ডট কমকে দিয়েছেন সাক্ষাৎকার, যেখানে কথা বলেছেন নিজের ক্যারিয়ার, স্বপ্ন ও সাবেক কোচকে নিয়ে। প্রিয়লেখার পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।
প্রায় ছয় বছর হয়ে গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন। এখন তো টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানদের একজনই হয়ে উঠেছেন। নিজের এই যাত্রাকে কিভাবে বর্ণনা করবেন?
মুমিনুল: দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে এখনো পর্যন্ত। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। নিজের জন্য ও দেশের জন্য এখনো পর্যন্ত যা অর্জন করতে পেরেছি তাতে আমি খুশি। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমি এখনো নবীন, এবং আমাকে আরও অনেক কিছু শিখতে হবে।
কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে রেকর্ড করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কিভাবে বর্ণনা করবেন?
মুমিনুল: দারুণ মুহূর্ত ছিল সেটা। দ্বিতীয় ইনিংসে আমি সেঞ্চুরি না করলে হয়তো দল ম্যাচটা হেরে যেত। দলের প্রয়োজনে আমি অবদান রাখতে পারছি, এতে আমি খুশি।
যেভাবে আপনি সেঞ্চুরির পর উদযাপন করলেন, কাউকে কি কোন বার্তা দিতে চেয়েছিলেন উদযাপনের মাধ্যমে?
মুমিনুল: (হেসে) একদমই না। আমি জানি অনেকে মনে করেছেন আমি কাউকে বার্তা দিতে চেয়েছি। কিন্তু আসলে তা নয়। আসলে ২০১৪ এর পর আমি আর কোন সেঞ্চুরি করিনি। নিজের পারফরম্যান্সে নিজে খুশি ছিলাম না। ৯০ এ পৌঁছার পর আমি বেশ নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর খুব স্বস্তি পেয়েছিলাম।
একসময় বলা হত যে শর্ট বলে আপনার দুর্বলতা আছে। কিভাবে কাটিয়ে উঠলেন সেটা?
মুমিনুল: দেখুন, আমার কখনো মনে হয়নি যে আমি শর্ট বল খেলতে পারিনা। আমি শক্তভাবে বিশ্বাস করি, যখন আপনার খারাপ সময় যাবে, সবকিছুতেই আপনি প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করবেন। আপনার মনে যদি বিন্দুমাত্রও সন্দেহ থাকে যে আপনি আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন কিনা, তাহলে আপনার ব্যর্থ হওয়ার সবরকম সম্ভাবনাই থেকে যায়। সেরকমভাবেই আপনি যদি ভয় পান যে শর্ট বল এলে আপনি ভুগবেন, তাহলে অবস্থা কেবল আরও খারাপই হবে। আমার নিজের উপর বিশ্বাস ছিল, আর ফলাফল তো আপনারা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছেন।
বাংলাদেশের শততম টেস্টে আপনাকে একাদশ থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল এই অজুহাতে যে আপনি দিলরুয়ান পেরেরার অফ স্পিন সামলাতে পারছেন না। ওই সময়কার পরিস্থিতি কিভাবে সামলেছিলেন?
মুমিনুল: কিছুটা সমস্যা হয়তো হচ্ছিল। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি আমি। ব্যক্তিগত কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অধীনে প্রায় দেড় মাস অনেক ঘাম ঝরিয়েছি। উনি কিন্তু সাকিব আল হাসানেরও কোচ। স্যার আমাকে বলেছেন কিভাবে সমস্যাগুলো মোকাবেলা করে হবে, আর আমি সেভাবেই উন্নতি করেছি।
আপনার ক্যারিয়ারে সাবেক কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের অবদান কতটুকু বলবেন কী?
মুমিনুল: হাথুরুসিংহেই আমার ভুলগুলো আমাকে বুঝতে শিখিয়েছেন। আমি এটাকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছি। আমি মনে করি দল থেকে বাদ পড়াটা আমার জন্য কাজে দিয়েছে। এটা আমাকে সাফল্যের জন্য আরও ব্যগ্র করেছে। ওই সময়টা আমার ক্যারিয়ারের একটা বিশুদ্ধিকরণ অধ্যায় ছিল, যা আমার বেশিরভাগ দুর্বলতাগুলোকে শুষে নিয়েছে। তবে সত্যি বলতে গেলে আমার ব্যক্তিগত কোচের কথা মেনেই আমি সবকিছু কাটিয়ে উঠেছি।
টেস্ট ক্রিকেটে তো নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছেন। কিন্তু লিমিটেড ভার্শনে নিয়মিতভাবে খেলতেই পারছেন না। কেন?
মুমিনুল: হতে পারে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে আমার শুরুটা খুব একটা ভাল হয়নি তাই। ওয়ানডেতে মাত্র ৩ টা ফিফটি করেছি, যেখানে টেস্টে বড় বড় স্কোর করেছি।
সামনে তো ২০১৯ বিশ্বকাপ। ওয়ানডে দলে জায়গা পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
মুমিনুল: অবশ্যই। ওয়ানডে টিমে কামব্যাক করার ব্যাপারে আমি বেশ আশাবাদী। আরও কঠোর পরিশ্রম করছি। দেখা যাক কি হয়।
ছয় বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন কি?
মুমিনুল: বাংলাদেশ জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করাই সবচেয়ে বড় অর্জন। খুব বেশি মানুষ এই সুযোগ পায় না। আমি দেশের জন্য অবদান রাখতে চাই। এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা।