হারারে স্পোর্টস ক্লাবের আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফাইনালের ২৩ তম ইনিংসের খেলা চলছে তখন। শাই হোপকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেললেন রশিদ খান, হয়ে গেলেন ইতিহাসের অংশ। ইতিহাসের দ্রুততম বোলার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০০ উইকেটের মালিক এখন আফগানিস্তান সেনসেশন রশিদ খান, মিচেল স্টার্ককে পেছনে ফেলে এখন চূড়ায় জ্বলছে আফগান এই লেগ স্পিনারের নাম।
এতদিন ৫২ ম্যাচে ১০০ উইকেট নিয়ে রেকর্ডটা আগলে রেখেছিলেন স্টার্ক। স্টার্কের চেয়ে ৮ ম্যাচ কম খেলে মাত্র ৪৪ ম্যাচেই সেই রেকর্ড ভেঙ্গেচুরে দিলেন রশিদ। অনবদ্য এই অর্জনের পথে দুর্দান্ত ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন রশিদ। ৪৪ ম্যাচে ১০০ উইকেট নেয়ার পথে রশিদের গড় মাত্র ১৪.৪০, অর্থাৎ প্রতি ১৪ রানের বিনিময়ে একটি করে উইকেট পেয়েছেন রশিদ। আর প্রতিটি উইকেট পেতে তাকে খরচ করতে হয়েছে মাত্র ২১.৮ টি করে বল! অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৩ ওভার বল করেই একটি করে উইকেট পেয়েছেন তিনি, যা তার দুর্দান্ত উইকেট টেকিং ক্ষমতার প্রমাণই দেয়। ধুমধারাক্কা এই ক্রিকেটের যুগে রশিদের ইকোনমিও চোখ কপালে তুলে দিতে বাধ্য, ক্যারিয়ারে এখনো পর্যন্ত তার ইকোনমি রেট ৩.৯৬! ব্যাটসম্যানদের কাছে তিনি কতটা দুর্বোধ্য, তারই জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ এই রেকর্ড।
দ্রুততম ১০০ উইকেটের মালিক হওয়া বোলারদের তালিকা
নাম | দল | ম্যাচ | গড় | কত বল লেগেছে |
রশিদ খান | আফগানিস্তান | ৪৪ | ১৪.৪০ | ২১৮১ |
মিচেল স্টার্ক | অস্ট্রেলিয়া | ৫২ | ১৯.৫২ | ২৪৭৪ |
সাকলাইন মুশতাক | পাকিস্তান | ৫৩ | ১৯.২৫ | ২৭৯৭ |
শেন বন্ড | নিউজিল্যান্ড | ৫৪ | ১৯.৫২ | ২৭৪৩ |
ব্রেট লি | অস্ট্রেলিয়া | ৫৫ | ২২.৪৮ | ২৮৬৪ |
ট্রেন্ট বোল্ট | নিউজিল্যান্ড | ৫৬ | ২৫.২১ | ৩০৪৮ |
ইমরান তাহির | সাউথ আফ্রিকা | ৫৮ | ২২.৭৫ | ৩০৭৫ |
ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মত ১০০ উইকেটে ক্লাবে ঢুকেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান গতিদানব ডেনিস লিলি, তাঁর লেগেছিল ৬০ ম্যাচ। ১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনিস ভেঙে দেয়ার আগে পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর রেকর্ডটি নিজের করে রেখেছিলেন লিলি। লিলির রেকর্ড ভাঙতে ওয়াকারের লেগেছিল ১ ম্যাচ কম, ৫৯ ম্যাচে ১০০ উইকেট নিয়ে প্রথমবার এই রেকর্ড ভেঙ্গেছিলেন ওয়াকার। ওয়াকার আবার রেকর্ডটা হারিয়েছিলেন তারই তরুণ সতীর্থ সাকলাইন মুশতাকের কাছে। মাত্র ২০ বছর বয়সী সাকলাইন রেকর্ডটা কেড়ে নিয়েছিলেন ৫৩ ম্যাচ খেলেই, যেই রেকর্ড ভাঙা একসময় অসম্ভবই মনে হয়েছিল। বছর দুয়েক আগে মিচেল স্টার্ক ভেঙে দেয়ার আগে পর্যন্ত সাকলাইনের রেকর্ডটা টিকে ছিল প্রায় দুই দশক। আর এবার স্টার্কের রেকর্ড দুই বছরের আগেই ভেঙে দিলে রশিদ।
২০১৫ এর অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকের সময় রশিদের বয়স ছিল কেবল ১৭ বছর। এরপর থেকে তিনি যা ছুঁয়েছেন তাই যেন সোনায় পরিণত হয়েছে! ২০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ১০০ উইকেট পাওয়া একমাত্র বোলার তিনি, দ্রুততম ৫০ ও ১০০ উইকেটের মালিকও এখন তিনিই।
অভিষেকের পর থেকে ১০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছাতে মাত্র ৮৯০ দিন লেগেছে রশিদের, কেবল সাকলাইনই ৫৯২ দিনের মাথায় ১০০ উইকেট পেয়েছিলেন। তবে অন্য একটি জায়গায় সাকলাইন সহ বাকি সবাইকেই ছাড়িয়ে গেছেন রশিদ। ১০০ উইকেট পেতে সবচেয়ে কম বল খরচ করতে হয়েছে রশিদকে, করতে হয়েছে ২১৮১ টি বল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্টার্ককে করতে হয়েছিল ২৯৩ টি বল বেশি, মোট ২৪৭৪ টি বল করতে হয়েছিল স্টার্ককে।
সবচেয়ে কম বয়সে ১০০ উইকেট পাওয়া বোলারদের তালিকা
নাম | দল | বয়স | ম্যাচ |
রশিদ খান | আফগানিস্তান | ১৯ বছর ১৮৬ দিন | ৪৪ |
সাকলাইন মুশতাক | পাকিস্তান | ২০ বছর ১৩৪ দিন | ৫৩ |
আব্দুল রাজ্জাক | পাকিস্তান | ২০ বছর ৩৩৩ দিন | ৬৯ |
ওয়াকার ইউনিস | পাকিস্তান | ২১ বছর ৭৭ দিন | ৫৯ |
ইরফান পাঠান | ভারত | ২১ বছর ১৭৪ দিন | ৫৯ |
শহীদ আফ্রিদি | পাকিস্তান | ২১ বছর ৩৩০ দিন | ১৩৯ |
তবে রশিদের এই ১০০ উইকেটের প্রায় চার ভাগের তিন ভাগই এসেছে জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে! তবে এতে রশিদের তো আর দোষ নেই, তিনি যে এখনো শীর্ষ সারির কোন দেশের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলেনইনি! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৮ ম্যাচে নিয়েছেন ৪০ উইকেট, আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচে ৩৩ টি। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ ম্যাচে আছে ১২ উইকেট, যার মধ্যে আছে গত বছর এক ম্যাচে ১৮ রানে ৭ উইকেট নেয়ার নজিরও।
লেগ ব্রেক, ফ্লিপার, স্লাইডার, টপ স্পিনার, বিভিন্ন রকমের গুগলি- রশিদের তূণে আছে সম্ভাব্য সবরকম অস্ত্রই। যে কারণেই কিনা রশিদ তাঁর মোট উইকেটের ৫৬% ই পেয়েছেন ব্যাটসম্যানকে বোল্ড কিংবা লেগ বিফোর করে! বোল্ড করেছেন ২১ বার, আর এলবিডব্লিউ করেছেন ৩৫ বার।
তবে রশিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে আছে সামনের ২০১৯ বিশ্বকাপে। বড় বড় দলের মুখোমুখি হবেন প্রথমবারের মত, নিজের সামর্থ্যের পরীক্ষাটাও তাই ভালোই হবে তাঁর। তবে তিনি যে সেই চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গত আইপিএলেই। বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে সাফল্য পেয়েই হয়েছিলেন আইপিএলের সেরা উদীয়মান তারকা। এবারও বিশাল অঙ্কের বিনিময়ে রশিদকে ধরে রেখেছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ, রশিদও নিশ্চয়ই চাইবেন তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ আরও একবার রাখতে!
ক্রিকবাজ অবলম্বনে