ছোটবেলায় আমরা অনেকেই বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট এর গল্প পড়েছি, তাই না? ঐ যে হতভাগ্য এক যুবতী ঝড়ের রাতে আটকা পড়ে গেলেন কদাকার এক রাজপুত্রের দূর্গে, সেখানে তাদের মাঝে পরিণয় হলো, নানা ঘাত প্রতিঘাতের মাঝে অবশেষে মিলন হলো তাদের। আপনাদের কাছে গল্প মনে হলেও এমন একটি ঘটনা কিন্তু সত্যিই আছে। আমাদের এই ‘জন্তুকে’ অনেকেই দানব হিসেবে মেনে নেন। তবে গল্পের মতোই ইনি কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজে পান।
পেড্রো গঞ্জালেসের জন্ম ক্যানারি দ্বীপে। জন্ম কীভাবে, কোথায় হলো সেটি যদিও আজও একটি রহস্য, তবে ধারণা করা হয় ফ্রান্সের রাজা দ্বিতীয় হেনরির কাছে তাকে একটি খাঁচায় ভরে নিয়ে যাওয়া হয়। দেখতে কুৎসিত, কদাকার, আকারে ছোট এই ছেলেটিকে রাজা হেনরি কিছুটা ‘মানুষ’ করবার দায়িত্ব নিলেন। আধা শয়তান আধা মানুষ হিসেবে এই বালক মানুষের মনে কেমন প্রভাব ফেলে, সেটা জানার জন্য রাজা হেনরি একে একটি বদ্ধ ঘরে আটকে রাখলেন। কাঁচা মাংস ও পশুর খাবার দেয়া হলো ক্ষুধা মেটাবার উপকরণ হিসেবে।
ধীরে ধীরে বালকটির মাঝে কেবল সাহিত্যের দক্ষতাই এল না, বরং মহত্ত্ব ও ভালো ব্যবহারের চরম পরাকাষ্ঠা হয়ে উঠল সে। রাজদরবারের মূল্যবান একটি সম্পদ হিসেবে বিবেচ্য হতে থাকল আমাদের কদাকার যুবক। দেশ বিদেশের দূতেরা তাকে চিনতে শুরু করল এবং যোগ্য সম্মান দিতে শুরু করল। লোমে ঢাকা চেহারা ঢাকবার জন্য উঁচু কলারওয়ালা পোষাক পরিধান করতে শুরু করল সে। কসাইয়ের কাছে গিয়ে লোম কাটবার কোনো প্রয়োজনই পড়ল না। এখানে সে নির্বিবাদে ও বিনা সঙ্কোচে সকলের সাথে বসে খাবার খেতে লাগল।
১৭ বছর বয়সে ক্যাথেরিন নামক এক বালিকার সাথে বিয়ে হয়। গল্পের বেলার মতো ক্যাথেরিনের ভাগ্যেও নেমে এসেছিল দুর্ভাগ্য। বাবা বিয়ে ঠিক করেছিলেন একজন অসৎ মহাজনের সাথে। তবে শেষ পর্যন্ত লোমওয়ালা স্বামীর ব্যবহার শেষ পর্যন্ত তার মন জয় করে নেয়। তাদের ঘরে সাতটি বাচ্চার জন্ম হয়। এদের মধ্যে দুটি সন্তান বাবার মতো লোমওয়ালা হয় এবং রাজদরবারে তাদের স্মারক সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট
ষোড়শ শতাব্দীর এই সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সপ্তদশ শতাব্দীতে এসে ‘ বিউটি এন্ড দ্য বিস্ট ’ নামক রুপকথাটি লেখা হয়।
আসলে কী ঘটেছিলঃ
পেড্রো গঞ্জালেস অবশ্যই জন্তু জানোয়ার গোছের কেউ ছিলেন না। হাইপারট্রিকোসিস নামক এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন এই মানুষটি। এই রোগে সারা শরীরের চামড়া পশুর মতো লোম দ্বারা আবৃত হয়ে যায়। ১৫০০ সালের দিকে ঘটা এই ঘটনা হাইপারট্রিকোসিস রোগীর ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম উদাহরণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কারণ, এর আগে এমন কোনো ঘটনা ইতিহাসে নথিযুক্ত নেই। বর্তমান পৃথিবীতে এসে দেখা যাচ্ছে এই রোগের রোগীদের সামাজিক মর্যাদা খুব একটা মেলে না এবং তাদেরকে সার্কাসে ব্যবহার করা হয়, যেটি খুবই দুঃখজনক।
(রিপ্লি’স বিলিভ ইট অর নট)