আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন উপাদান হল গাছ। যা ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। প্রতিনিয়ত আমাদের অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে। আমরা জানি গাছ প্রাণযুক্ত জড়বস্তু যে কিনা হাটতে, চলতে, হাসতে পারে না কিন্তু গাছ নাকি কাঁদতেও পারে। কি অবাক হচ্ছেন??সত্যিই অবাক করার মতই কথা। এটাও মনে করতে পারেন পাগলের প্রলাপ বকছি আমি। কিন্তু আমি মোটেও আমি প্রলাপ বকছি না। সত্যিই এমন গাছ আছে যে কি না দিন রাত কেঁদেই চলছে। আসুন গল্প শুনি সেই কাঁদুনে গাছের।
গাছটির নাম লরেল গাছ। এই কাঁদুনে গাছকে কেন্দ্র করে রয়েছে গ্রীক উপ্যাখানে এক রসাত্মক লরেল গাঁথা। উপ্যাখানটা রূপকথাকে হার মানায় বটে।
গ্রীক পুরাণে বলা হয়ে থাকে পিউনিস নদীর দেবতা পিউনিসের কন্যা জলপরী দাফনি। অসম্ভব সুন্দরী এই জলপরী কিছুটা ভিন্ন। সে পিউনিস নদীর তীরে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতো এবং তার বিশেষত্ব ছিল যে সে পুরুষ সঙ্গ পছন্দ করতনা কিন্তু অসম্ভব সুন্দরী হওয়ায় অতীব সুদর্শন পুরুষ তাকে প্রেম নিবেদন করত এবং সে তা ফিরিয়ে দিত। একদিন দাফানি তার বাবা দেবতা পিউনিসকে বলে, “বাবা আমি আমি বিয়ে করবনা আজীবন কুমারী থাকব”। বাবা মেয়ের কথা মেনে নেয় হাসিমুখে।কিন্তু সেই হাসি বেশিদিন ধরে রাখা গেল না। পুরুষের লোভার্ত দৃষ্টি পড়ে দাফানির উপর।
একদিন দাফনি গভীর বনে শিকারে ব্যস্ত, খোলা এলোমেলো চুল বাতাসে উড়ছে, চর্মের পোশাক অবিন্যস্ত, উত্তেজিত মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সূর্যদেব অ্যাপোলো এই অবস্থায় দাফনিকে দেখে একেবারে যাকে বলে একদেখায় ঘোরতর প্রেমে পড়ে গেলেন।
দাফনির দিকে দৌড়ে আসছেন সূর্যদেব, দাফনি দেখতে পেয়েই উল্টোদিকে দৌড় দিলো। দাফনি খুব দ্রুত ছুটতে পারতো, অচিরেই সূর্যদেব পিছিয়ে পড়লেন। পিছন থেকে তিনি চিৎকার করে বললেন, ” ভয় পেয়ো না, আমি কোনো বাজে লোক না, আমি স্বয়ং সূর্যদেব অ্যাপোলো। একবার পিছন ফিরে তাকাও। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না, আমি তোমায় ভালোবাসি। আমি তোমাকে বিবাহ করতে চাই।”
দাফনি আরো জোরে দৌড়ালো। পালাতেই হবে, পালাতেই হবে। এদিকে অ্যাপোলোও দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে, তার তখন একেবারে প্রেম আর মানসম্মানেরও ব্যাপার। একটা মেয়ে দৌড়ে হারিয়ে দেবে তাকে? অ্যাপোলো দাফনিকে প্রায় “ধরি-ধরি মনে করি ধরিতে পারি না” অবস্থায়, এমন সময়ে দাফনি সামনে দেখলো নদী। দাফনির বাবা পিউনিস এই নদীর দেবতা। দাফনি করজোড়ে প্রার্থনা জানালো, “বাবা, আমাকে রক্ষা করো।”
পিতা কন্যার প্রার্থনা শুনলেন। মুহূর্তের মধ্যে দাফনির পা মাটিতে শিকড় হয়ে ছড়িয়ে গেল, সর্বাঙ্গ ছেয়ে গেল বাকলে, বাহু হয়ে গেল শাখাপ্রশাখা, হাজার হাজার পাতা বার হয়ে এলো শাখায় প্রশাখায়। দাফনি হয়ে গেল লরেল গাছ।
অ্যাপোলো ছুটে এসে দাফনিকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে দেখলেন দাফনি পাল্টে গেল, মানুষ থেকে হয়ে গেল লরেল গাছ। সূর্য দেবতা হেরে গেলেন সুন্দরী দাফনির কাছে কিন্তু তিনি ভালবেসে গেলেন গাছরুপি দাফনি কে।
সুন্দরী দাফনি উপলব্ধি করল সেই ভালবাসা কিন্তু তার করার কিছুই ছিল না। তাই সে কাঁদত। গ্রীক উপ্যাখানে সেই বৃক্ষকে লরেল বৃক্ষ বলা হয়।
গ্রীক উপ্যাখানের লরেল গাঁথা ভাব রসাত্মক রূপকথার আরেক রূপ।
এমন সব মজার তথ্য জানতে চোখ রাখুন প্রিয়লেখার পাতায়।
তথ্য ও ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট