মুশফিকুর রহিম এর তান্ডব
৩ ওভারে তখন ২৭ রান লাগে, হাতে আছে ৬ উইকেট। ক্রিজে আছেন দলের অন্যতম দুই ভরসা মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। খেলা তো তখন বাংলাদেশেরই পক্ষে! কিন্তু তারপরেও কি দর্শকদের মনে একটু হলেও অবিশ্বাসের দোলাচল খেলা করে যায়নি? দুই বছর আগে এর চেয়ে হাজার গুণ সহজ সমীকরণও যে মেলাতে পারেননি এই দুই ব্যাটসম্যান!
ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে সেদিন স্বাগতিক ভারতকে বিশ্বকাপ থেকে ঠেলে বের করে দেয়ার কাজটা ৯৯% করেই ফেলেছিল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার পরপর দুই বলে বাউন্ডারি মেরে সমীকরণটাকে যখন ৩ বলে ২ এ নামিয়ে এনেছিলেন মুশফিক, বাংলাদেশের জয় ছাড়া অন্য কোন ফলাফল ভাবাকে তখন মনে হচ্ছিল এই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম চিন্তা। কিন্তু সেই কঠিন কাজটাকেই অবলীলায় করে ম্যাচটা অবিশ্বাস্যভাবে ১ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ, পরপর দুই বলে একই ভঙ্গিতে আউট হয়েছিলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। প্রেমাদাসায় তাই ৩ ওভারে ২৭ রানের সমীকরণকেও কঠিনই লাগার কথা বাংলাদেশের!
কিন্তু সেদিনের মুশফিক আর এই মুশফিকের মধ্যে যে আকাশ পাতাল পার্থক্য! সেদিন পরপর দুই চার মেরে ম্যাচ শেষের আগেই মুষ্টিবদ্ধ উদযাপন করে ফেলেছিলেন, কিন্তু এই মুশফিক ম্যাচ শেষ না করে উদযাপনে বিশ্বাসী নন। তাইতো থিসারা পেরেরার শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মেরে সমীকরণটাকে ৪ বলে ৩ এ নামিয়ে আনার পরেও একইরকম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। দুই বছর আগের ব্যাঙ্গালুরুর ভূতকে যে এদিন কলম্বোতেই মাটিচাপা দেবেন বলে ঠিক করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান!
কাজটা নিঃসন্দেহে কঠিন ছিল। যেই দল এর আগে টি-২০তে ১৬৬ এর বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি কখনো, সেই দলের পক্ষে ২১৫ তাড়া করা হিমালয়শৃঙ্গে ওঠার চেয়ে কম কিছু নয়। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের সকলের অবদানে সেই পর্বতসমান লক্ষ্য টপকে গেল টাইগাররা, আর তার অগ্রভাগে ছিলেন মুশফিকুর রহিম । ১০ বলে ১৬ রানের লক্ষ্যটাকে যখন দূর আকাশের তারা বলে মনে হচ্ছিল, তখনই নুয়ান প্রদীপকে ডিপ মিড উইকেটের বলে ছয় মেরে আশায় প্রাণ সঞ্চার করেছেন তিনিই। আর শেষ ওভারে একাই ৯ রান নিয়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন মুশফিক।
এর আগে তিনি খেলেছেন টি-২০তে বাংলাদেশের হয়ে অন্যতম সেরা ইনিংস। উইকেটে যখন এলেন, ৬৩ বলে দরকার ১১৫ রান। লিটন আর তামিমের এনে দেয়া ঝোড়ো শুরুটা ধরে রাখাই তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জটা ভালভাবেই জিতেছেন মুশফিক। জীবন মেন্ডিসকে রিভার্স সুইপে চার মেরে শুরু, এরপর পুরো ইনিংসজুড়েই স্ট্রোকের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। কখনো বা শানাকাকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের উপর দিয়ে ছয় মেরেছেন, আবার কখনো বা স্লগ সুইপে গুনাতিলকাকে সীমানাছাড়া করেছেন মিড উইকেটের উপর দিয়ে। ৩৫ বলে ৭২ রানের ইনিংসে ৫ টি চারের পাশে মেরেছেন ৪ টি ছয়ও।
এই জয়ে বেশ কিছু রেকর্ডও পায়ে লুটিয়েছে বাংলাদেশের। টি-২০ তে রান তাড়া করে জয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি, সব মিলিয়ে রান তাড়া করে ২০০+ করার দশম উদাহরণ। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের প্রথম ২০০ পার করার নজিরও এটি। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডও এটি। সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটা কিছুদিন আগেই করেছে অস্ট্রেলিয়া। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে নিউজিল্যান্ডের করা ২৪৪ রানের বিশাল স্কোরও অবলীলায় পার হয়ে গিয়েছিল অজিরা। এছাড়া ২০১৫ সালে ওয়ান্ডারার্সে সাউথ আফ্রিকার ২৩২ রান টপকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ২৩৬ রান, আর ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপে ওয়াংখেড়েতে সাউথ আফ্রিকারই দেয়া ২৩০ রানের লক্ষ্য টপকে গিয়েছিল ইংল্যান্ড।