পানির নিচে আজ পর্যন্ত যত ধরনের গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে, তাদের মাঝে সর্ববৃহৎ আবিষ্কার বুঝি হয়েই গেল।মেক্সিকোর উখাতান পেনিনসুলার অভ্যন্তরে গত মাসে এক ডুবুরী চমকে দেবার মতো কিছু আবিষ্কার করেছেন। মাত্র এক ফুট দীর্ঘ ও তিন ফিট প্রস্থবিশিষ্ট সরু সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ইতিহাস আবিষ্কার করেছেন এ ডুবুরী। স্যাক অক্টুন গুহা ও দস ওখোস গুহার মাঝে সম্পর্ক রচিত হয়েছে এই সুড়ঙ্গের মাধ্যমে। এতোদিন ধারণা করা হতো যে এই দুই সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে কোনো ধরনের সংযোগ নেই। কিন্তু এই ধারনাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ আন্ডারওয়াটার কেভ সিস্টেম (জলের অভ্যন্তরীন গুহা) আবিষ্কার করলেন এই ডুবুরী। এটির দৈর্ঘ্য ২১৬ মাইল।
কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক গুইলেরমো দে আন্দা মনে করছেন যে এটি মাত্র সূচনা। বর্তমানে যেটিকে স্যাক অক্টুন নামা ডাকা হচ্ছে, তার সাথে এই আবিষ্কারের দীর্ঘসূত্রিতা থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই দীর্ঘসূত্রিতা কেবলমাত্র প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, বরং এটি বর্তমানের মানব সভ্যতাকে টেনে নিয়ে যাবে প্রাচীন বরফ যুগে। খননকাজে দে আন্দা ও তার দল কমসে কম ২০০ এরও অধিক জায়গা সনাক্ত করেছেন যেখানে প্রাচীন নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।এদের মাঝে মায়া সভ্যতার নিদর্শনই বেশি।প্রাচীন মানুষের হাড়, বিলুপ্ত প্রাণীদের ফসিল এমনকি নাম না জানা প্রাচীন মানুষের দেশের অবশিষ্টাংশও পেয়েছেন এই গুহায়।
“ মনে হয়, এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন যা এতোদিন জলের অভ্যন্তরে লুকিয়ে ছিল। এখানে এতো পরিমাণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যে ১৫,০০০ বছরের মাঝে পৃথিবীতে যত ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, তার নীরব সাক্ষী হয়ে আছে এই গুহা,’ লাইভ সাইন্সকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন দে আন্দা।
দে আন্দা মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যান্থ্রোপোলজি এন্ড হিস্টোরির একজন গবেষক। গ্রেট মায়া অ্যাকুইফায়ার প্রজেক্টের পরিচালক হিসেবেও তিনি দায়িত্বে আছেন। রবার্ট শ্মিটার নামের এক ডুবুরী কয়েক বছর ধরেই এই কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন কিন্তু সফলতা আসে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। তার খুঁজে বের করা এই সুরঙ্গের মাধ্যমেই উন্মোচিত হয় জলের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা এই প্যাসেজের রহস্য।
দে আন্দা এখন বর্তমানে জীবজ নানা ধরনের দ্রব্যাদি খুঁজে বের করবার চেষ্টায় রয়েছেন। কাঠের কোনো দ্রব্য, জামাকাপড়, কাগজ কিংবা নতুন কোনো ভূমির সন্ধান পাওয়া যায় কী না, তার খোঁজ করে চলেছেন তিনি।
মায়া সভ্যতা থেকে আজ পর্যন্ত সুরক্ষিতভাবে যে কাপড়ের নিদর্শনটি আবিষ্কার হয়েছে, তা পাওয়া গিয়েছে চিচেন ইতজার পবিত্র সিনোটে। দে আন্দা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ভবিষ্যতে এই গুহা থেকে চিচেন ইতজার চাইতেও আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাপড়ের টুকরো আবিষ্কার করা যাবে। কালের বিবর্তনে এই পানির নিচের গুহায় যে সকল নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে, তা অপরাপর নানা নিদর্শন থেকে অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে।
দে আন্দার এই অভিযান সফল হোক, উন্মোচিত হোক নতুন আরো বিস্ময়কর তথ্য, এটিই আমাদের ঐকান্তিক কামনা।
(লাইভ সাইন্স অবলম্বনে)