“সত্যিকারের বুদ্ধিমান এক দল লোকের সাথে কাজ করাটা একদিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে ঠিক ততটাই চ্যালেঞ্জের,” বলছিলেন মাইক সাইমন। গত প্রায় দু বছর ধরে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের বিজনেস ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টে চাকরি করছেন তিনি। ক্যাজুয়াল জামা-কাপড় পরে কাজ করতে আসা মানুষগুলোর কাজেরপরিবেশ কিন্তু অসাধারণ। পাইন কাঠের প্যানেল, হোয়াইটবোর্ডের আধিপত্য- সব মিলিয়ে যেকোনো সময় বৈশ্বিক যেকোনো সমস্যার সমাধানে সদা তৎপর একটি দলের হাতছানি।
সবাই খুব দ্রুত কাজ করে এখানে। চারদিকে সংঘটিত হতে থাকা নানাবিধ ইস্যু নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, দ্রুত চিন্তা করার ক্ষমতা থাকলে আপনার বেতনও বাড়তে থাকবে তরতরিয়ে। স্টার্ট আপ স্টাইল যত দ্রুত শিখে নিতে পারবেন, আপনার প্রফেশনাল উন্নতির ভারও তত তাড়াতাড়ি কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত হবে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন কিন্তু স্টার্ট আপ স্টাইলেই পরিচালিত হয়। অফিসটাকে দেখে কর্মক্ষেত্রের চেয়ে বরং বিশ্রামাগারই মনে হবে। কাঁধে কালো ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে, জিন্স পরে দিব্যি বিকেল বেলা অফিসে ঢুকে যার যার কাজে লেগে পড়ে কর্মকর্তারা।
বিজিএমএফ (বিল গেটস অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন) কোনো অবসাদগ্রস্ত না নিরুৎসাহী ব্যক্তিদের জায়গা নয়। শার্প, ইন্টেলিজেন্ট আর বিভিন্ন রকমের কাজ করার ক্ষমতা ও মানসিকতা সম্পন্ন লোকদের জন্য বিজিএমএফের দরজা আজীবন খোলা থাকবে। তো আপনি কি বিজিএমএফে যোগদানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত? চলুন তবে দেখে নেয়া যাক এই সংস্থায় যোগ দেয়ার সহজ তিনটি টিপস।
১. পেশাদার বেসরকারি কাজে আত্মনিয়োগ উপযোগী হয়ে উঠুন
নিঃসন্দেহে বিল গেটসের প্রত্যাশা প্রতিটি শিশু কম্পিউটার ব্যবহার করতে করতে বেড়ে উঠুক। তবে সেই কম্পিউটারটি যেন মাইক্রোসফটেরি হয়, সেটি নিশ্চিত করাও তার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আমেরিকার অসংখ্য মিলিয়নারের পথ ধরে বিজিএমএফও বিজ্ঞান, শিক্ষা, গণস্বাস্থ্য, কৃষির মতো বিষয়গুলোকে ব্যক্তিগত উদ্যোগের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। তবে এই উদ্যোগকে সবাই ভালোভাবে নেয় না।
এনওয়াইইউ শিক্ষাবিদ ডায়ান র্যাভিচের মতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন “গণশিক্ষাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য মানুষকে রীতিমতো উস্কাচ্ছে”। এমনকি ধানের বীজ বেসরকারিকরণের জন্যও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের ভালো খ্যাতি আছে। সাব-সাহারান আফ্রিকার দরিদ্র কৃষকরা অনেকাংশেই বিজিএমএফের উপরে নির্ভরশীল।
বিজিএমএফে যোগ দিলে আপনার হাতে আর কোনো অপশন থাকবে না। বিশ্বখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানের মিশন এবং ভিশনের সাথে তাল মিলিয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বেসরকারি উদ্যোগের জয়গান করার মানসিকতা থাকলে এখানে চাকরি করার চিন্তায় মাথায় রাখুন, অন্যথায় সে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
২. কথা হবে শুধু ইস্যু নিয়ে, গেটসদের নিয়ে নয়
“ফাউন্ডেশন নিয়ে কোনো কথা বলার অনুমতি আমাদের নেই,” বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের নাইজেরিয়া শাখায় কর্তব্যরত এক অফিসার বলছিলেন কথাটি। “জনসম্মুখে বিল গেটসের নাম নিতে হলেও আপনাকে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে!” বিচক্ষণতা এবং সতর্কতা এখানে বিশেষভাবে প্রয়োজন। প্রজেক্ট, অফিস সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষণ আর আপনার নিজস্ব মতামত একেবারে ঝুলিতে পুরে অফিস থেকে সাথে করে বাসায় নিয়ে যেতে হবে, আবার অফিসে এসেই খুলতে হবে। মধ্যম কোনো পন্থার আশ্রয় নেয়ার সুযোগ এখানে নেই।
“মাইক্রোসফটের পুরো কাজটাই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি নিয়ে,” বলেন জেফ রাইকেস। প্রায় ছয় বছর ধরে তিনি এই ফাউন্ডেশনটি চালিয়েছেন। “ফাউন্ডেশনের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য”। আপনার প্রতিটি কাজই এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে, যার মালিকানা থাকবে কেবল মাইক্রোসফটের। সিভিতে কী কী সংযোজিত করতে পারবেন তা ঠিক করে দেবেন বিল আর মেলিন্ডা গেটস, আপনি নিজে নন।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতনামা সংস্থায় চাকরি করে আপনার ব্যক্তিগত মানসিক দক্ষতার উন্নয়ন ঘটবে- এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যায়। আর দিনশেষে সিভিতে যে কথাগুলো যুক্ত হবে, তা বাকি জীবন আপনার সেরা অর্জন হয়ে থাকবে।
৩. জার্গন উদ্ভাবনের ব্যাপারে পারদর্শী হন
“আচ্ছা ঠিক আছে, কাজটা করতে পার”, এতগুলো কথা খরচ করার চেয়ে বরং চটজলদি “করো” বলে দেয়াটা অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া খুব একটা পরিচিত নয় এমন কিছু শব্দ দিয়ে সমৃদ্ধ করুন আপনার শব্দভাণ্ডার। ভোকাব্যুলারি যত ধনী হবে, কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে আপনার চাহিদাও তত বাড়তে থাকবে। ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় বোঝা যায় না, এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করাও কিন্তু স্মার্টনেস!
ভারিক্কি, ক্যাজুয়াল চমকে দেয়ার মতো কিছু শব্দ শিখে রাখুন। সিভি, কভার লেটারে যোগ করুন। দৈনন্দিনের কথ্যভাষায় তা প্রয়োগ করুন। ইন্টারভিউয়ে বোর্ডে অপরিচিত সুন্দর কিছু শব্দ বলে তৈরি করুন মুগ্ধতা। আপনার সহকর্মী থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই আপনাকেই খুঁজবে! তো এবার ঠিক করে ফেলুন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন আপনার জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র কিনা, আর প্রস্তুতি নিন সেই অনুযায়ী।