টাকা আপনাকে হয়তো ভালোবাসা কিনে দিতে পারবে না, তবে টাকার জোরে বর্তমান যুগে আপনি লাভ করবেন সম্মান; এমনকি মানুষের শ্রদ্ধাও। তবে জীবনে সুখী হতে হলে ঠিক কত টাকার প্রয়োজন হবে আমাদের? ঠিক কত টাকা পেলে মানুষ মনে করবে যে সে যথেষ্ট সম্পত্তির মালিক? আজ পর্যন্ত এটি নিয়ে জোরালো কোনো আলোচনা হয় নি, তবে জেনে চমকে উঠবেন। বিজ্ঞানীরা ঠিক এই বিষয়টিতেই একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন।
ঠিকই শুনেছেন। কত টাকা পেলে জীবনে সুখ আসবে, তা নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। একজন ব্যক্তি কোথায় বসবাস করছেন, অর্থাৎ বাসস্থানের ওপর টাকার পরিমাণের তারতম্য ঘটবে।
পারড্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এবং উক্ত গবেষণার অগ্রগণ্য গবেষক অ্যান্ড্রু জ্যাব তার দেয়া একটি মন্তব্যে বলেছেন, ‘টেলিভিশন কিংবা বিজ্ঞাপনে কখনো এটা আমাদের বলা হয় না যে সুখী থাকবার জন্য ঠিক কত টাকার প্রয়োজন হবে। তবে কিছুটা আভাস এখন আমরা এই গবেষণার মাধ্যমে পাচ্ছি।’ জ্যাব উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ব বিভাগে পড়াশোনা করছেন।
জ্যাব এবং তার সহকর্মীরা গ্যালাপ ওয়ার্ল্ড পোল থেকে প্রায় ১৭লক্ষ নমুনাকে নিয়ে এই গবেষণাটি করেছেন। ১৬৪টি দেশের অধিবাসীদের মাঝে এই গবেষণাটি করা হয়। এদের মাঝে ১৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরাও রয়েছেন। জীবনের সন্তুষ্টি ও কীভাবে ভালো থাকা যায়, তা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে এই গবেষণাটি সম্পন্ন করা হয়। এছাড়াও কোনো পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে কী করে মানসিক সুখ লাভ করা যায়, তার ওপরেও ছিল বিস্তর আলাপন। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনো থেকে শুরু করে নানা ধরণের আবেগিক কথাবার্তা ও বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয় প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে।
আলোচনা করে জানা গিয়েছে বাৎসরিক ৯৫,০০০ ডলার আয় করবার মাধ্যমে জীবনে সুখ পাওয়া যায় এবং মানসিক অবস্থা ঠিকঠাক রাখবার জন্য বাৎসরিক ৬০,০০০ ডলার আয় করলেই চলে। তবে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের দিকে বোধহয় মানুষের চাওয়ার পরিমাণটা আরেকটু চড়া। ১,২৫,০০০ ডলার বাৎসরিক আয়ের মাধ্যমেই মানুষ সেখানে খুঁজে পায় সুখ। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দিকে গেলে মানুষের চাওয়াটা একটু কমে যায় বৈকি। সেখানে মাত্র ৩৫,০০০ ডলারেই মানুষের মুখে হাসি ফোটে। উত্তর আমেরিকার দিকে মানুষের চাহিদা আরেকটু বেশি, ১,০৫,০০০ ডলার। এই তথ্যগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ধনী দেশগুলোতে মাথাপিছু আয়ের মতোই ব্যক্তিগত আয়ও বেশ তারতম্য ঘটে থাকে।
‘তবে একটি কথা ঠিক। ব্যক্তিগত হিসেব থেকে যদি পারিবারিক হিসেব করেন, তাহলে টাকার পরিমাণ অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। এছাড়াও পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে টাকার পরিমাণ ও সুখের মাত্রার তারতম্য ঘটে থাকে। মানুষের চাহিদা ও চাওয়া পাওয়ার হিসেবে কখনো মিল হয় না।’
মানুষের মৌলিক চাহিদাটা মিটে গেলেই ঝুঁকে পড়ে নতুন নতুন আকর্ষণের দিকে, চাইতে থাকে আরো নানা নতুন কিছু। সৃষ্টি হয় প্রতিযোগিতার এবং অন্যের সাথে নিজের তুলনার। এক ধরণের হাহাকারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মানুষ নিজেই। সামাজিক প্রেক্ষাপট ও অন্যান্য চাওয়া পাওয়ার দিকে এসে দেখা যায় যে মানুষ এক ধরণের অযথা মোহের পেছনে ছুটতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাত্রার মান কমতে শুরু করে।
‘আমার কী আছে? কেমন করে বসবাস করছি আমি? নতুন আর কী কী দরকার?’- এধরণের প্রশ্ন মানুষের মনে আসাটা খুবই স্বাভাবিক বলে দাবী করেন জ্যাব। পরিমাণটা একটু কম হলেই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে যায় মানুষ।
এছাড়াও লিঙ্গভেদেও নানা গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা তবে নারী পুরুষের আলাদা করে কোনো আয়ের হিসাব রয়েছে কি না, তা নিয়ে একক সমাধানে আসতে পারেন নি তারা। একটা কথা ঠিক, পড়াশোনার সাথে আয় ব্যয়ের একটি প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে। পড়াশোনার মান যত উন্নত কিংবা যে যত শিক্ষিত, তার মাঝে কাজ করবার এবং আয় করবার ইচ্ছা তত বেশী জাগে।
গবেষণায় আরো জানা যায়, যাদের কাজ করার সামর্থ্য বেশী, তাদের মাঝে অধিক পরিমাণে আয় করবার ইচ্ছাও বেশী। এছাড়াও বিবাহিত পুরুষদের নানা ধরণের চাপ থাকে এবং সংসারের দায়িত্ব কর্তব্যের কারণে চাওয়া পাওয়াগুলো চোখের সামনে বড় হয়ে এসে ধরা দেয়।
‘এই গবেষণার মাধ্যমে কেবলমাত্র বিভিন্ন সংস্কৃতির নানা ধরণের উপলক্ষ্যগুলোই এসে ধরা দেয়। টাকাপয়সা শুধুমাত্র এর অংশমাত্র, যা আমাদের খুশি করে তোলে। তবে কতটুকু হলে আমাদের সুখী থাকা উচিত, তা নিয়ে গবেষণা করবার সময় কিন্তু আসলেই এসে গিয়েছে।’
জানুয়ারির ৮তারিখে নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার জার্নালে উক্ত গবেষণাটি ছাপা হয়।
(ফিচারটি লেখা হয়েছে লাইভ সাইন্সের সাহায্যে)