ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস, লীগ অফ লেজেন্ডস, ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্রাফট, ডাইন্যাস্টি ওয়ারিওর্স, ওভারওয়াচ থেকে শুরু করে ক্যান্ডি ক্রাশ, ফার্ম হিরোস, টেম্পল রানের মতো শত শত গেমে ভরপুর অনলাইন জগতে আটকে পড়া গেমারের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। এই বিপুল সংখ্যক জনগণ একদিকে যেমন গেমের নেশা থেকে বের হতে পারেন না, ঠিক তেমনি গেম খেলার পর সময়ের অপচয় নিয়ে কপাল চাপড়ে হতাশা ঝাড়তেও পিছপা হন না। কিন্তু এমন যদি হয় যে অনলাইনে গেম খেলে ঘরে বসেই আয় করা সম্ভব, তাহলে হয়তো গেম খেলার ব্যাপারটা হতাশার বদলে আশার আলো দেখাতে পারবে। সার্বক্ষণিকভাবে কেউ গেম খেলতে উৎসাহিত করাটা মোটেই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য নয়, তবে কেউ যদি অনলাইন গেমকে অর্থ উপার্জনের উৎস বানাতে পারেন তাহলে বোধহয় খুব একটা খারাপ হয় না। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক জনপ্রিয় সেই কার্যকরী গেমগুলোর বৃত্তান্ত।
১. এক্সোডাস ৩০০০
এক্সোডাস ৩০০০ একটি জনপ্রিয় মাল্টিপ্লেয়ার আরপিজি স্ট্র্যাটেজি গেম। এই গেমের ফিচার অনুযায়ী আপনাকে পাঠিয়ে দেয়া হবে এখন থেকে প্রায় ১,০০০ বছর পরের কোনো একটি জগতে। গেমটির গল্প অনুযায়ী আমাদের এই পৃথিবী বসবাসের জন্য এতটাই অযোগ্য যে এখানকার পরিবেশে কোনো প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কাজেই গেমারদের সবাইকে তাদের হোম বেস থেকে মিনারেল এবং ‘মার্স ডলারস’ সংগ্রহ করতে হবে।
মার্স ডলারস সংগ্রহ করার তিনটি উপায় আছেঃ ধ্বংসস্তূপে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করা, আগ্নেয়গিরি খুঁড়ে দেখা এবং অন্যান্য গেমারদের আক্রমণ করা। নির্দিষ্ট পরিমাণের ডলার আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার পর সেটিকে আপনি প্রকৃত ডলার রুপে ক্যাশ করিয়ে নিতে পারবেন। আর দশটি খেলার মতো এটিও দারুণ মজা আর উত্তেজনাময় হলেও বাকিদের সাথে এটির পার্থক্য হলো, খুব সহজে এখান থেকে টাকা ভাঙ্গিয়ে নিতে পারবেন। মেম্বার হিসেবে এক্সোডাসের সাথে যোগদানের পর ওয়েলকাম বোনাস হিসেবে আপনাকে ৫ হাজার মার্স ডলার ফ্রি দেয়া হবে। ৩ লক্ষ মার্স ডলারের বিনিময়ে আপনাকে দেয়া হবে ২০ ডলার। টাকার অংকটা খুব একটা মন্দ নয় কিন্তু!
২. সোয়াগবাকস
শুরুর দিকে সোয়াগবাকস সার্চ ইঞ্জিনকে জনপ্রিয় করে তুলতে ব্যবহারকারীদের জন্য অর্থের প্রলোভন দেখায় কর্তৃপক্ষ। অনলাইন জগতে বসে সার্চ করেই যদি কামানো যায় অর্থ বেতাহলে হয়তো ব্যবহারকারীরা সার্চ ইঞ্জিনের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হবে- এমনটাই ছিল তাদের ভাবনা। কিন্তু তাদের সে ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে গুগল আর ইয়াহুর সার্চ ইঞ্জিনেই আটকে থাকে অনলাইন জগতের বাসিন্দারা। কাজেই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবসায় মুখ থুবড়ে পড়ে নিজেদের জিপিটি সাইটে পরিণত করে সোয়াগবাকস।
অনলাইনে গিয়ে আপনি যা করেন তার সবকিছুর জন্যই টাকা দিতে রাজি আছে সোয়াগবাকস। সেক্ষেত্রে গেম খেলা তো খুব সাধারণ একটি বিষয়। গেম খেলে আপনি যে ক্রেডিট জমাবেন তাকেও ডাকা হবে সোয়াগবাকস নামে (বাক বলতে এখানে পয়সা বোঝানো হয়)। শুধু গেমই নয়, শপিং, সার্ভে কাজে অংশ নেয়া, বন্ধুদের মেনশন করা প্রতিটি কাজের জন্য সোয়াগবাকস আপনাকে পে করবে। তাদের কাছ থেকে টাকার বদলে অ্যামাজন গিফট কার্ড, কুপন কোডসহ আরও অনেক গিফট নেয়ার সুযোগও থাকবে আপনার জন্য। এমনকি চাইলে নগদ অর্থ তারা আপনার পেপ্যাল অ্যাকাউন্টেও পাঠিয়ে দেবে।
৩. প্লে রামি
অন্যতম জনপ্রিয় এই অনলাইন গেমিং সাইট থেকে আপনি বেশ হ্যান্ডসাম অঙ্কের টাকা কামাতে পারবেন। অনেক গেমারেরই ব্যক্তিগত পছন্দের গেম এটি। আপনি যদি রামি খেলতে পছন্দ করেন আর অনলাইনে গেম খেলে টাকা উপার্জন করতে চান তবে এই গেমটি অবশ্যই একবার খেলে দেখতে পারেন।
অনলাইন রামি পোর্টালটির মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্বে আছে ইনোপার্ক ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। এই অ্যাপটি আপনি গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন, আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্যও রয়েছে ডাউনলোডের সুব্যবস্থা। ২৪/৭ গেম দুনিয়ায় সাপোর্ট দেয়ার পাশাপাশি এখান থেকে টাকা ক্যাশ করাও খুব সহজ।
৪. সেকেন্ড লাইফ
অনলাইন গেম জগতের অন্যতম বৃহৎ একটি অংশ দখল করে আছে সেকেন্ড লাইফ। কথিত আছে, গেমটি খেলে আনশে ছুংতে নাকি মিলিয়নার বনে গেছে! এই ওয়েবসাইটে প্রায় ২ মিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় সদস্য আছে। অ্যাভাটার ইমেজ ব্যবহার করে তারা সবাই নিজেদের সাথে সংযুক্ত থাকেন সারাক্ষণ। ৩ডি চরিত্র ব্যবহার করে নিজের প্রোফাইল তৈরি করার সুযোগও আছে এখানে।
রিয়েল স্টেট ট্রেডিং (ভার্চুয়াল জগতে সম্পত্তি কেনা-বেচা) এখানকার খুব জনপ্রিয় একটা গেম। এ বাদেও জামা-কাপড়ের ব্যবসা, কন্টেন্ট তৈরি করা ও তা বিক্রি করা থেকে শুরু করে গ্যাজেট বানানো, বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নেয়া, রক গান গাওয়া- কী নেই এখানে! এমনকি ক্যাম্পিং চেয়ারে বসে বসে গেম খেলার সুব্যবস্থাও রাখছে কর্তৃপক্ষ।
৫. পেইড গেম প্লেয়ার
এতি একটি প্রতিযোগিতামূলক অনলাইন গেমিং ওয়েবসাইট। ২৫টিরও বেশি গেম খেলার সুযোগ রয়েছে এখানে। অন্যান্য গেমে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করে জেতার সুযোগও পাচ্ছেন গেমাররা। গেমটির প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনাকে বিজয়ীদের কাতারে পৌঁছে দেয়া। প্রতিবার বিজয়ের সাথে সাথে আপনার ক্রেডিট আর বেনিফিটও বাড়তে থাকবে চক্রবৃদ্ধি হারে। তবে মেম্বারশিপকে উপরের লেভেলে নিতে আপনাকেও দিতে হবে সামান্য কিছু অর্থ যা এন্ট্রি ফি নামেই পরিচিত। আপনার জয়ের পরিমাণ যদি কম হয় অর্থাৎ নগদ অর্থের পরিমাণ যদি খুব বেশি না হয়, তাহলে মেম্বারশিপ আপগ্রেড না করেও আপনি গেম খেলে যেতে পারবেন।
ওয়েবসাইটটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২,৫০,০০ ডলারেরও বেশি অর্থমূল্যের উপহার সদস্যদের মাঝে বিতরণ করে তারা। গেম না খেলেও সার্ভেতে অংশ নিয়ে, গেমের রিভিউ দিয়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।
অনলাইনে গেম খেলাটা পুরোপুরি একটি উইন-উইন সিচুয়েশন। উপরের গেমগুলো আপনাকে শুধু বিনোদিতই করবে না, পাশাপাশি আপনার আয়ের জন্যও নতুন একটি পথ খুলে দেবে।