তামিম ইকবাল
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানের নাম বলতে বললে নির্দ্বিধায় মনে আসবে তাঁর নামটাই। দেশের ব্যাটিং ইতিহাসের অনেক প্রথম এসেছে তাঁর হাত ধরে। আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরও একটি প্রথমের মালিক হলেন তামিম ইকবাল । বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৬ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন তামিম । সেই উপলক্ষ্যেই ক্রিকইনফোর বিশেষ আয়োজন তামিমকে ঘিরে। প্রিয়লেখার পাঠকেরাও বঞ্চিত থাকবেন না সেই স্বাদ থেকে! লেখাটি অনুবাদ করা হল আমাদের পাঠকদের জন্য।
শূন্য থেকে ১ হাজার : তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে দুর্বার তামিম ইকবাল
বিশ্ব ক্রিকেটে তামিম ইকবালের সদর্প পদচারণা শুরু ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি দিয়ে। জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে হাঁকানো ছক্কাটা এখনো যেকোনো ক্রিকেটপ্রেমীর চোখে লেগে থাকার কথা। নতুন দিনের ভয়ডরহীন বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তামিম। তবে তামিমের ‘মধুচন্দ্রিমা’ টিকেছিল খুব কম সময়ই। লেগ সাইডে তাঁর দুর্বলতা খুঁজে বের করতে মোটেও সময় লাগেনি প্রতিপক্ষ বোলারদের। হাতে তাঁর শট ছিল অনেক কম, স্কোরিং এরিয়াও ছিল হাতেগোণা কয়েকটা। অভিষেকের ঠিক ১ বছর পর নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম। প্রথম ১ হাজার রানে পৌঁছাতে তাঁর লেগেছিল ৩৭ ইনিংস।
১ হাজার থেকে ২ হাজার : জেমি সিডন্স প্রজেক্ট
২০০৮ সালে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসার পর তামিমের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন জেমি সিডন্স। সিডন্স বুঝতে পেরেছিলেন, এই ছেলেটিই হতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের কাণ্ডারি। নেটে তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিয়েছেন তামিমের পেছনে। লেগ সাইডের বল ফ্লিক করতে শিখিয়েছেন, অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছাড়তে শিখিয়েছেন, ইনিংস বিল্ড আও করতে শিখিয়েছেন। তবে প্রক্রিয়াটা ছিল সময়সাপেক্ষ, মাঝে তামিমের ব্যাটে রান খরা ছিল প্রবল। টানা ছয়টা সিরিজে ১০০ করেও রান করতে পারেননি তিনি তখন!
অবশেষে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফিরেন সেই ধারালো তামিম, ৫ ম্যাচে করেন তিন শতাধিক রান, যার মধ্যে আছে ১৫৪ রানের ইনিংসটিও, যেটি এখনো ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস।
২ হাজার থেকে ৩ হাজার : বড় কিছুর আভাস
জানুয়ারি ২০১০ থেকে আগস্ট ২০১১, এই দেড় বছরে রিদম খুঁজে পান তামিম। এই সময়ে ওয়ানডেতে হাজারের বেশি রান করেন তিনি। শুধু ওয়ানডেতে না, টেস্টেও ছন্দে ছিলেন তিনি এই সময়ে, ৫৫.৯৩ এভারেজে করেছিলেন ৮৯৫ রান। দুর্বলতা ছিল একটাই, ফিফটিগুলোকে বড় ইনিংসে রূপ দিতে পারছিলেন না। এই দেড় বছরের মধ্যেই ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন, পেয়েছিলেন জাতীয় দলের সহ অধিনায়কত্বও।
৩ হাজার থেকে ৪ হাজার : কঠিন দুঃসময়
চিন্তা করতে পারেন, এই এক হাজার রান করতে তামিমের সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছে! মাঠে এবং মাঠের বাইরে দুই জায়গায়ই ভয়ানক দুঃসময় কাটিয়েছেন তখন ‘খান সাহেব’। ২০১১ তে দুঃস্বপ্নের জিম্বাবুয়ে সফরের পর হারালেন জাতীয় দলের সহ-অধিনায়কত্ব। এরপর ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খারাপ ফর্মের কারণে বাদ দেয়া হল ২০১২ এশিয়া কাপের দল থেকে। শেষমেশ দলে ফিরেছিলেন, টানা ফিফটিও করেছিলেন, কিন্তু বড় কোন ইনিংস কিছুতেই আসছিল না। অফ ফর্মের কারণেই কিনা, মাঠে এবং মাঠের বাইরে দুই জায়গাতেই মেজাজ হারানোর ঘটনা কয়েকবার ঘটিয়েছেন তিনি এই সময়ে। ইন্টারনেটে তাঁকে নিয়ে হওয়া নোংরা ট্রলগুলোও ভূমিকা রেখেছে তাঁর মেজাজ হারানোর ঘটনায়।
৪ হাজার থেকে ৫ হাজার : এক নতুন তামিম ইকবাল
২০১৫ বিশ্বকাপই যেন জন্ম দিয়ে গেল নতুন এক তামিম ইকবালের। তামিমের বডি ফিটনেস, ব্যাটিং স্টাইলে দেখা গেল নতুন এক পরিবর্তন। আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত এই তামিম, যখন তখন উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন না। পাকিস্তানের বিপক্ষে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন, প্রতি সিরিজেই দেখা গেছে নতুন ও ধারাবাহিক তামিমকে। ২০১৬ এর অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে করেন ৫ হাজার রান।
৫ হাজার থেকে ৬ হাজার : এক বিশ্বসেরা ওপেনারের গল্প
তামিমের ব্যাটিং দেখার পর এখন যে কেউ বলতে বাধ্য, তিনি এখন বিশ্বের সেরা কয়েকজন ওপেনারের একজন। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা, দায়িত্ববোধ ও পরিসংখ্যান মিলিয়েই তামিম হয়ে উঠেছেন সেরাদের একজন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৪ ইনিংসে করেছেন ২৯৩ রান। এই ত্রিদেশীয় সিরিজেও পেয়েছেন টানা ৩ ফিফটি। আজকের ফিফটি দিয়ে হয়ে গেছেন ৬ হাজার ওয়ানডে রান করা প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান।
আজকের ম্যাচ দিয়ে আরেকটি বিশ্বরেকর্ডও হয়ে গেছে তামিমের। কোন একটি নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে রানের মালিক এখন তামিম, মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তাঁর মোট ওয়ানডে রান এখন ৭৩ ইনিংসে ২৫৪৯। রেকর্ড করার পথে তামিম পেছনে ফেলেছেন সনাথ জয়াসুরিয়াকে। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ৭০ ইনিংসে ২৫১৪ রান ছিল জয়াসুরিয়ার।