“Showmanship” টার্মটা বেশ চমৎকার। শোম্যান বলতে মধ্য উনিশ শতকের থিয়েটার পারফর্মারদের কথা বলছি না, বলছিলাম আমাদের চারপাশের “শো অফ” ট্রেন্ডের কথা। কম-বেশি আমরা সবাই কিন্তু শো অফ করি, তবে বিচিং করার সময় চট করে আরেকজনের দিকে আঙুল তুলে দিতে কিন্তু বেশ মজা লাগে!
শো অফের পক্ষে কথা বলার মতো মানুষ হাতে গোণা দুই-একজন যদি দৈবাৎ পাওয়াও যায় তো তাদের বিরুদ্ধে কুরুক্ষেত্রে নেমে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম হবে না। কথা সেটা না, কথা হল এতো যে শো অফের নিন্দা-মন্দ আমরা করছি, দিনশেষে কিন্তু এই শো অফই আপনাকে একটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। সারাদিনে একের পর এক যাচ্ছেতাই কিংবা জ্ঞানগর্ভ ভরা স্ট্যাটাস দিয়ে আপনার হোমপেজ ভরিয়ে ফেলা বন্ধুটিকে আপনার যতই বিরক্ত লাগুক না কেন, তার বন্ধু তালিকায় থাকা বেশ কিছু জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির কিন্তু মনে হতেই পারে “বাহ! সে তো দারুণ লিখছে!”। কাজেই ভবিষ্যতে যদি কখনও লেখালেখি সংক্রান্ত কোন কাজের প্রয়োজন হয়, ঐ ব্যক্তি কিন্তু আপনার স্ট্যাটাসের বন্যা বইয়ে দেয়া বন্ধুটিকেই খুঁজে নেবেন, আপনাকে নয়।
আপনি হয়তো ফেসবুকে নিয়মিত স্ট্যাটাস দেন না, তার মানে এই নয় যে আপনি কিছু ভাবছেন না। ফেসবুকের ঐ নীল-সাদা দুনিয়ার “what’s on your mind” কথাটি আপনাকে টানছে না, এটা একটা কারণ হতে পারে। হয়তোবা আপনার মনের ভাবনাগুলো অবলীলায় সবার সামনে তুলে ধরতে আপনি সংকোচ বোধ করছেন, সেটি একটি কারণ হতে পারে।
অথবা “আমি এমন কি হয়ে পড়েছি যে সবাইকে জানাতে হবে আমি কি ভাবছি?” কিংবা “আপনার ভাবনাগুলো প্রকাশ করার প্ল্যাটফরম ফেসবুকের মতো সস্তা একটা জায়গা না” এজাতীয় চিন্তাগুলোও আপনাকে স্ট্যাটাস দেয়া থেকে বিরত রাখতে পারে। তবে আপনি স্ট্যাটাস দিয়ে বিশ্ববাসীকে নিজের মতামত জানাচ্ছেন না বলে আপনি আদতেই লিখতে পারেন না বা সৃষ্টিশীল কিছু ভেবে বের করার ক্ষমতা আপনার নেই, এমনটা ভাবা নিছকই বোকামি।
সময়টা প্রতিযোগিতার, চারপাশে প্রতিনিয়ত চলছে হাজারো পলিটিক্স। এতো শত সমস্যার ভিড়ে কে কি করছে, আর তাকে বা তার কাজকে গুরুত্ব দিয়ে নিজে হীনমন্যতায় ভুগে আদৌ কি কোন সমাধান আসতে পারে? আমাদের সয়াজের প্রতিটি বিষয় খুব ক্ষণস্থায়ী, খুব দ্রুত পরিস্থিতিগুলো পরিবর্তিত হয়। এই শো অফ ট্রেন্ডও হয়তো আস্তে আস্তে চলে যাবে। আপনার যদি মনে হয় আপনি এই ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না, তবে ফেসবুকে খুব বেশি দরকার না হলে না যাওয়াটাই ভালো।
পালিয়ে বাঁচাটা যেহেতু কোন সমাধান নয়, তাই চাইলে আপনি নিজের মতগুলো টুকটাক করে প্রকাশ করতে পারেন ফেসবুকে। আজকালকার যুগে আপনার কথা বলার বা শোনার জন্য সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম কিন্তু এটিই। কাজেই নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে বরং মেলে ধরুন জগতের সামনে।
তথ্যসূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ