কালো চিতা এসেই পড়ল বলে! ইউটিউবে যারা প্রতিনিয়তই নতুন ছবির ট্রেইলার দেখছেন, তাদের জানতে আর বাকি নেই যে ব্ল্যাক প্যান্থারের একক ছবি এ বছরই আসছে। মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের তো বটেই, সমগ্র সুপারহিরোদের মাঝে সবচেয়ে ধনী সুপারহিরো ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ পর্দা কাঁপাতে আসছেন। জ্বি, ব্রুস ওয়েইন বা ব্যাটম্যান কিংবা আয়রন ম্যান খ্যাত টনি স্টার্কের চাইতেও অধিক ধনী টি’চালা। তবে কমিক যারা পড়েন, তাদের কাছে ওয়াকান্ডার এই রাজাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ সিভিল ওয়ার ছবিতে ব্ল্যাক প্যান্থারের সরব উপস্থিতি দেখে নড়েচড়ে বসেছেন মার্ভেল ফ্যানরা। এবার বেশ জম্পেশ কিছু একটা হতে যাচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন কিছু অ্যাকশন দৃশ্য আর গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে নজর কেড়েছেন ব্ল্যাক প্যান্থার চরিত্রটিকে রুপদানকারী ৪১ বছর বয়সী চ্যাডউইক বজম্যান। তা সত্ত্বেও অনেকের কাছেই ব্ল্যাক প্যান্থারের অনেক কিছুই অজানা থাকতে পারে। আসুন, ওয়াকান্ডার এই রাজাকে কিছুটা হলেও আজ জানতে চেষ্টা করি।
পুরো একটি জাতির রাজা তিনি
আফ্রিকা মহাদেশের প্রযুক্তিনির্ভর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি ওয়াকান্ডা। বিরল প্রজাতির ধাতু ভাইব্রেনিয়াম উৎপন্ন করা হয় এই দেশে, যা ওয়াকান্ডাকে করেছে সমৃদ্ধশালী (ক্যাপ্টেন আমেরিকার শক্তিশালী ঢালটি এই ধাতু দিয়েই তৈরি) ওয়াকান্ডার নারী ও পুরুষ যোদ্ধারা দেশকে ভিনদেশীদের হাত থেকে বাঁচাতে বদ্ধ পরিকর।
এই ওয়াকান্ডা দেশটির রাজা হচ্ছেন ব্ল্যাক প্যান্থার।
ব্ল্যাক প্যান্থারের দেহরক্ষীরা সকলেই নারী
রাজা যেমন, তার সুরক্ষা ব্যবস্থায় নিয়োজিতদেরও তো তেমনি থাকা চাই, নাকি? ব্ল্যাক প্যান্থারকেও ঘিরে আছেন অত্যন্ত শক্তিশালী কিছু নারী। রাজার সকল ধরনের বিপদ ও সুরক্ষায় ছায়ার মতো পাশে থাকে ‘ডোরা মিলাহে’ গোত্রের এই নারীরা। শারীরিক নৈপুণ্য, মার্শাল আর্টের কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চিত্ত গড়ে তুলেছে তাদের রাজার যোগ্য দেহরক্ষী হিসেবে গড়ে তুলতে। এই ডোরা মিলাহেদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তাদের সকলের মাথায়ই চকচকে টাক। এছাড়াও মিডনাইট এঞ্জেলস নামক একটি দল হিসেবে তাদের আবির্ভাব হয় কমিকের পাতায়।
প্রযুক্তির সাথে শক্তির মেলবন্ধন
একজন রাজাকে যোগ্য হয়ে গড়ে ওঠার জন্য চাই কঠোর অনুশীলন। টি’চালা (ব্ল্যাক প্যান্থারে প্রকৃত নাম)-কেও অসংখ্য সব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। একজন অলিম্পিক খেলায় অংশগ্রহণকারী অ্যাথলেটের শারীরিক সক্ষমতা, গতি, ক্ষিপ্রতা, অতিমানবীয় স্নায়বিক শক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলেন ব্ল্যাক প্যান্থার। তার পরনে যে ‘সুপারহিরো স্যুট’ বা পোষাকটি রয়েছে, সেটি সমগ্রটিই ভাইব্রেনিয়াম দ্বারা তৈরি এবং যোগ করা হয়েছে চমৎকার সব প্রযুক্তির সন্নিবেশ। ক্যাপ্টেন আমেরিকার নয়া কিস্তিতে যারা ব্ল্যাক প্যান্থারের সাথে ক্যাপ্টেন ও তার বন্ধু বাকি বার্ণসের যুদ্ধটি দেখেছেন, তারা সকলেই একবাক্যে এটি স্বীকার করবেন। এছাড়াও ব্ল্যাক প্যান্থারের একক ছবির ট্রেইলারটিও দৃষ্টিনন্দন সব প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখানো হয়েছে।
কমিকে প্রথম আগমন ঘটে ফ্যান্টাস্টিক ফোরে
ব্ল্যাক প্যান্থারের রুপালী পর্দায় আগমন ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ সিভিল ওয়ার ছবিতে হলেও কমিক বইয়ে তার আগমন আরো আগে। ১৯৯৬৬ সালে ফ্যান্টাস্টিক ফোরের ৫২ নম্বর ইস্যুতে প্রথম আগমন ঘটে ওয়াকান্ডার রাজার।
মূলধারার কমিকে তিনিই প্রথম কালো সুপারহিরো
ঠিকই পড়ছেন। ডিসির গ্রীন ল্যান্টার্ন (জন স্টুয়ার্ট ভার্সন), টাইরক কিংবা ব্ল্যাক লাইটিং-এর আগে তো বটেই, মার্ভেল ফ্র্যাঞ্চাইযের অন্যান্য কালো সুপারহিরো যেমন লিউক কেইজ কিংবা ফ্যালকনের আগে ব্ল্যাক প্যান্থারের আগমন। এককথায় বলতে গেলে, আফ্রিকান এই রাজাই প্রথম কালো সুপারহিরো।
১৯৯৪ সাল থেকেই রুপালী পর্দায় ব্ল্যাক প্যান্থার
যারা মনে করছেন ক্যাপ্টেন আমেরিকাতে ব্ল্যাক প্যান্থারের প্রথম আগমন ঘটে, তাদের জন্য একটি তথ্য। ১৯৯৪ সাল থেকেই নিয়মিত রুপালী পর্দায় হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ফ্যান্টাস্টিক ফোর কার্টুন সিরিজের একটি পর্বে প্রথম আসেন তিনি। ৯০ এর দশকে এক্স মেন ফ্র্যাঞ্চাইযেও ছোট একটি ঝলক দেখিয়ে যান। এভেঞ্জারসঃ আর্থ’স মাইটিয়েস্ট হিরোস ফ্র্যাঞ্চাইযেও ব্ল্যাক প্যান্থারের আগমন ঘটে। বেট (BET) চ্যানেলে ব্ল্যাক প্যান্থারের একক একটি সিরিজ চলে বেশ কিছুদিন।
প্রায় সকল সুপারহিরো দলেই আছেন তিনি!
ফ্যান্টাস্টিক ফোর, এভেঞ্জারস, ফ্যান্টাস্টিক ফোর্স, ডিফেন্ডারস এমনকি এক্স মেনেও ছিলেন ব্ল্যাক প্যান্থার। বিখ্যাত এক্স মেন চরিত্র স্টর্মকে বিয়ে করবার বদৌলতে চার্লস জেভিয়ারের সুপারহিরো টিমে যোগ দেবার সুযোগ পান তিনি। এছাড়াও সুসান স্টর্ম ও রিড রিচার্ডসের পরিবর্তে ফ্যনাটাস্টিক ফোরে কিছুদিনের জন্য জায়গা নেন ব্ল্যাক প্যান্থার ও স্টর্ম।
স্টর্মের স্বামী যখন ব্ল্যাক প্যান্থার
রাজার তো একজন রানী থাকা চাই, নাকি? আর সে রানী যদি হন এক্স মেন দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য স্টর্ম, তাহলে তো কথাই নেই। ওয়াকান্ডান রীতিতে বেশ জাঁকজমকের সাথে দুজনার বিয়ে হয়। উপস্থিত ছিলেন সব সুপারহিরো বন্ধুবান্ধবেরা। বিয়ের পরই কূটনৈতিক মিশনে চলে যান স্বামী স্ত্রী। ডক্টর ডুম, ন্যামোর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট- সকলের সাথেই দেখা করতে যান তারা। কিন্তু ন্যামোর ওয়াকান্ডা আক্রমণ করবার পরই ব্ল্যাক প্যান্থারের মনে উদয় হয় যে একজন স্বামীর চাইতেও রাজার কর্তব্য অধিক। নিজ মাতৃভূমি রক্ষার মহান ব্রত পালনে তৈরি হন তিনি।
এভেঞ্জারসের আকাশযানটির পেছনে রয়েছেন ব্ল্যাক প্যান্থার
মার্ভেল ছবিতে আমরা দেখেছি টনি স্টার্ক ও এভেঞ্জারস দল মাঝে মাঝেই অত্যন্ত আধুনিক এবং প্রাযুক্তিক দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ন আকাশযান নিয়ে চক্কর কাটে। তবে ছবিতে কখনোই বলা হয় না যে শিল্ড কিংবা টনি স্টার্ক এই আকাশযান তৈরির পেছনে ছিলেন না। দ্য ওয়াকান্ডা ডিজাইন গ্রুপের নিবিড় তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে এই সুপারজেট। পুরোধা ছিলেন টি’চালা ওরফে ব্ল্যাক প্যান্থার।
হেল’স কিচেনে যখন ত্রানকর্তা ব্ল্যাক প্যান্থার
হেল’স কিচেনের রক্ষাকর্তা হিসেবে আমরা সকলেই ম্যাট মারডক ওরফে ডেয়ারডেভিলের কথাই জানি। কিন্তু শ্যাডোল্যান্ডের যুদ্ধের পর ডেয়ারডেভিলকে কিছুদিন হেল’স কিচেন ছাড়তে হয়েছিল। ততদিনে কোমা থেকে উঠে হারানো শক্তি ফিরে পেয়েছেন ব্ল্যাক প্যান্থার। ডেয়ারডেভিলের জায়গায় কিছুদিন নিজেকে নিয়োজিত রাখেন হেল’স কিচেনে। (আমরা ছাত্ররা স্কুল কলেজ ফাঁকি দিলে বন্ধুরা যেমন প্রক্সি দেয়, এটাও কি তাই?) এই সময় তিনি নিজের নাম রাখেন মিস্টার ওকোনকো।
নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে ব্ল্যাক প্যান্থারের মোট সম্পদের পরিমাণ কত? চোখ কপালে উঠে যাবে আপনার। ৯০.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক ব্ল্যাক প্যান্থার, যেখানে আয়রন ম্যান বা টনি স্টার্কের মোট সম্পদ ১২.৪ বিলিয়ন।
ডিসি কমিকসের সবচেয়ে সম্পদশালী সুপারহিরো ব্যাটম্যান বা ব্রুস ওয়েনের সম্পদ ৯.২ বিলিয়ন।