সমগ্র বিশ্বটিই আসলে এক ধরণের রহস্যে ঠাঁসা। প্রযুক্তির কাছে আমরা নিয়তই নিজেদের সঁপে দিচ্ছি, সেটা যেমন সত্য; ঠিক তেমনি প্রযুক্তি নানা ধরণের রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারে নি, এটিও সত্য। যা আমরা দেখি নি, তা বিশ্বাস করা যাবে না; কোন যুক্তির আধারে এটি বিশ্বাস করব? আধুনিক মানুষের আগেও পৃথিবীতে মানুষ আদিমতায় আচ্ছন্ন ছিল, ঠিক তেমনি প্রাচীন নানা নিদর্শন দেখে আমাদেরও মাঝে মাঝে থ বনে যেতে হয়। যেমন মিশরের পিরামিডের গায়ে আঁকা হায়ারোগ্লিফিক্সের কথা বা মায়ানদের আঁকা ছবিতে নানা ধরণের গোপন রহস্যের সংকেত। সব কিছু নিয়েই বলা হবে তবে আজ যা নিয়ে আলোচনা করা হবে তা হচ্ছে, শত শত বছরের একটি পুরনো ধাঁধাঁ।
আটলান্টিসের হারানো শহর!
বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রত্নতাত্ত্বিক কিংবা জ্ঞানপিপাসু মাত্রই আটলান্টিসের প্রশ্নে মাথা চুলকোতে শুরু করেন। একদল বলেন হ্যাঁ, প্রাচীন এমন একটি সভ্যতা ছিল অবশ্যই যারা জ্ঞানে গুণে বর্তমান আধুনিক পৃথিবীবাসী থেকে এগিয়ে ছিল। তাদের ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সমুদ্র সম্পর্কে অসীম জ্ঞান এবং সম্পদের প্রাচুর্য। তবে এসবই ধারণা করা হয়। এর কোন কিছুই এখন পর্যন্ত স্বীকৃত সত্য বলে মতামত দেয়া হয় নি। বিজ্ঞানীরা যেমন একদিকে আটলান্টিসের পক্ষেও কথা বলছেন, আবার অন্যদিকে আটলান্টিসের বিরোধিতা করার সংখ্যাটিও কিন্তু নেহায়েত কম নয়।
এডগার ক্যায়সি নামক একজন ইতিহাসবিদ হারানো শহর আটলান্টিস নিয়ে নানা গবেষণা করেছেন। বিভিন্ন দেশের কথা, উপকথা, সাহিত্যে বারবার ঘুরে ফিরে সাগরতলের এমন একটি সভ্যতার কথা উঠে এসেছে যারা একসময় পৃথিবীতে খুবই দোর্দন্ড প্রতাপের সাথে বসবাস করত। তিনি তার সারাজীবনের অর্জিত জ্ঞান একটি নোটবুকে লিপিবদ্ধ করেছেন। বলা বাহুল্য, সবকিছুই হারানো শহর আটলান্টিসকেন্দ্রিক।
তার সে নোটবুকে চমকপ্রদ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, আটলান্টিস শহরে তারাই প্রবেশ করতে পারবে যারা সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকবে। মিশরের সবচেয়ে বড় যে স্ফিংসটি রয়েছে, তার ডান থাবার নিচে পাওয়া যাবে আটলান্টিস শহরে প্রবেশের টিকিটখানা। তবে তিনি সাথে সাথে এটিও উল্লেখ করে দিয়েছেন যে, এটি কেবলমাত্র উপযুক্ত ব্যক্তিরাই প্রবেশ করতে পারবে।
আটলান্টিস শহরকে নিয়ে নানা ধরণের গল্প গাঁথা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, আটলান্টিস শহর তৈরি করেছিলেন সমুদ্র দেবতা পসেইডন। তিনি ক্লেইটো নাম্নী এক রমণীর প্রেমে পরেন এবং একটি পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় এই শহরটি নির্মাণ করেন। কিন্তু দিন যত যেতে থাকে, পসেইডন তার স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করতে থাকেন। তিনি ক্লেইটোকে একটি পাহাড়ে বন্দী করে রাখেন। পাহাড়টি বেষ্টিত ছিল মোটা মোটা থাম ও পিলারের মাধ্যমে। তার সীমাহীন ক্রোধে একসময় তিনি শহরটি জলের অতলে ডুবে যায়।
আটলান্টিসের বাসিন্দাদের ছিল অসাধারণ সব ক্ষমতা! তারা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারত, সমুদ্রের গতিবিধি পরিবর্তন করতে পারত এমনকি তারা কি করে ধাতু থেকে স্বর্ণ পাওয়া যায়, তা সম্পর্কেও জানত। কেউ কেউ তো আবার বলেন এরাই কি ভিনগ্রহের প্রাণী?
প্লেটোর কিছু লেখায় পাওয়া যায় আটলান্টিসের সঠিক নির্দেশ হতে পারে আটলান্টিক মহাসাগরের কোন একটি স্থানে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আজো এমন কোন অবস্থান খুঁজে পান নি। আবার কেউ কেউ বলেন, আটলান্টিসের খোঁজ মিলতে পারে স্পেন ও মরক্কোর জলসীমায়। বিজ্ঞানীরা বলেন, আটলান্টিসের দেখা যদি সত্যিই পাওয়া যায়, তবে তা হবে সমগ্র এশিয়া ও লিবিয়ার সম্মিলিত অংশ জুড়ে।
পুরোটাই একটি মিথ! পৃথিবীর আরো অনেক অমীমাংসিত ঘটনার মাঝে এটিও একটি অন্যতম অমীমাংসিত ঘটনা। তবে তার চাইতেও বড় সত্য, হারানো শহর আটলান্টিস এখনো মানুষকে বিভোর করে, এখনো মানুষকে চমকে দেয়। কেউ কেউ আবার চান আটলান্টিস একটি মিথ হয়েই থাক।
দেখাই যাক কি হয়! এখনো পর্যন্ত এটি অমীমাংসিতই আছে।