আর্ট গ্যালারীতে কিংবা নামী কোন চিত্রশিল্পীর চিত্র প্রদর্শনীতে যদি আপনি কখনো যেয়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন যে চমৎকার সব ছবি ফ্রেমে আঁটিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালগুলোয়। কোন কোন বোদ্ধা ছবিগুলো দেখে ইতিবাচক, নেতিবাচক মন্তব্য করেন, আবার কেউ বা স্রেফ দেখে যান ছবিগুলো। অনেক সময় দেখা যায় যে ছবিগুলো আসলে কি নিয়ে, তা না বুঝেই মাথা হেলিয়ে চলে আসছেন অনেকে। চিত্রশিল্পীদের মেকি প্রশংসা কিংবা না বুঝে পিঠ চাপড়ে দিয়ে যান অনেকে।
হেকে এক্সেলসন নামক এক সাংবাদিক তিতিবিরক্ত হয়ে একটি ফন্দি আঁটলেন। আচ্ছা, এবার যদি মানুষ ছবি না এঁকে একটি বাঁদরকে দিয়ে ছবি আঁকানো হয়, তাহলে কেমন হবে? তার কাছে মনে হতো সাদা একটি কাগজের বুকে অর্থহীন কিছু আঁকিবুঁকি যদি দর্শকদের মনে এতোটা আয়াস তৈরি করে, তাহলে একটা পরীক্ষা করেই দেখা যাক না! তো এই কাজের জন্য প্রয়োজন হবে একটি বাঁদরের। পিটার নামক একটি বাঁদরকে ভারিক্কি একখানা ফ্রেঞ্চ নামও দিয়ে দেন তিনি, “পিয়েরে ব্রাজাউ”। সমালোচক দর্শকদের জানানো হয়, এই নামের একজন চিত্রকর অনেকদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার ছবিগুলো এখন প্রদর্শিত করা হবে একটি চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে। রাতারাতি সুইডেনের একটি চিড়িয়াখানা থেকে ধরে নিয়ে আসা বাঁদর হয়ে যায় গুণী চিত্রশিল্পী। শত শত মাইল দূরের পথ অতিক্রম করে বোদ্ধারা আসেন বাঁদরের আঁকা ছবি দেখতে।
অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, অর্থহীন কিছু আঁকিবুঁকিকেও তারা চমৎকার কর্ম বলে আখ্যায়িত করেন। শুধুমাত্র একজন সমালোচক বলেন, “এমন ছবি আঁকা কেবলমাত্র একটি বাঁদরের পক্ষেই সম্ভব।” তখনও তিনি জানতেন না যে কত বড় সত্যি কথাটি নিজের অজান্তেই বলে ফেলেছেন। তবে এক্সেলসনের এই চালাকি ফাঁস হয়ে যাবার পরেও বোদ্ধারা ভূয়সী প্রশংসা করেন পিয়েরে ব্রাজাউর। এমনকি একজন এই বাঁদরের ছবি কিনে নিজ ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়েও রাখেন। একজন বাঁদরের পক্ষে এমন ছবি আঁকা নাকি রীতিমতো বিস্ময়কর!
রলফ এন্দারবার্গ বলেন,
‘চমৎকার তুলির আঁচড়ে ছবি এঁকেছে ব্রাজাউ। সংক্ষিপ্ত কিন্তু ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ছবিটির পেছনে সে কতটা শ্রম দিয়েছে। নির্ভীক, দৃঢ়চিত্তের অধিকারী এই বাঁদরের ছবিটি যেন কাগজের ওপর ব্যালে নাচের শিল্প।’
১৯৬৪ সালে আঁকা এই ছবিটি তৎকালীন সময়ে ৯০ ডলারে বিক্রয় হয়, যা আজকের দিনে প্রায় ৭১০ ডলারের সমান।
১৯৬৯ সালে ইংল্যান্ডের চেস্টার চিড়িয়াখানায় পিটার ওরফে পিয়েরে ব্রাজাউকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।