দ্য গিফটেড
কমিকপ্রেমীদের কাছে এক্স মেন কোন নতুন নাম নয়। নানা কার্টুন, অ্যানিমেটেড সিরিজ, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চার্লস জেভিয়ার ইন্সটিটিউশনের অতিমানবীয় ক্ষমতাধর ছাত্রছাত্রীরা এসেছে রুপালী পর্দায়। তবে ফক্স টেলিভিশনের দ্য গিফটেড -এর মাধ্যমে আরো নতুন কিছু চরিত্রের সাথে পরিচয় হলো দর্শকদের। সাইক্লপস, স্টর্ম, উলভারিন, জিন গ্রে ইত্যাদি জনপ্রিয় চরিত্রের ছায়ায় এতদিন ঢেকে ছিল আরো কিছু ক্ষমতাধর চরিত্র। তবে টেলিভিশন সিরিজের স্টোরিলাইনের মাধ্যমে দর্শকদের মনের খোরাক যে ভালোভাবেই জুটেছে, সেটি রিভিউ পড়লেই বোঝা যায়। মার্ভেল’স এজেন্টস অব শীল্ডের মতো নতুন কোন গল্প বেছে নেয় নি ফক্স কর্তৃপক্ষ, বরং চেনা কমিকেরই গল্প এখানে অনুসরণ করা হয়েছে। আর একইসাথে গল্পের প্রয়োজনে আনা হয়েছে নতুন কিছু চরিত্র। প্রথম সিজন শেষ হবার পর মিউট্যান্টদের মাঝেই একটি গৃহযুদ্ধের দামামা শুনতে পাই আমরা। দ্বিতীয় সিজনে যে নতুন একটি বিরোধ আসতে যাচ্ছে, সেটি বলাই বাহুল্য। আসুন,আজ দ্য গিফটেড সম্পর্কে কিছু জেনে নিই।
দ্য গিফটেড সিরিজের চরিত্রগুলো বেশ গোছানো
দ্য গিফটেড সিরিজের স্রষ্টা ম্যাট নিক্স সাহসী একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। জনপ্রিয় চরিত্রগুলো এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে এনেছেন নতুন কিছু মুখ। কাজটা হয়তো খুব একটা ভালো মনে না হলেও সিরিজ শুরুরপর দেখা গেল দর্শকরা এক্লিপস, থান্ডারবার্ড, স্ট্রাকার দম্পতির ছেলেমেয়েদের খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করছেন। থান্ডারবার্ড চরিত্রটির কথাই ধরা যাক। নেটিভ আমেরিকানদের সাধারণত টিভি সিরিজগুলোতে চিত্রায়ন করা হয়, সে হিসেবে বলতে গেলে থান্ডারবার্ডকে খুব ভালোভাবেই দেখানো হয়েছে। প্রধান চরিত্রগুলোর মাঝে এটি অন্যতম। কমিক বইতে এই চরিত্রটিকে যখন পাঠকদের কাছে পৌঁছানো হয়, তার মাত্র তিন ইস্যু পরেই মেরে ফেলা হয়। তবে দ্য গিফটেডের লেখকরা কথা দিয়েছেন কমিকবইয়ের মতো একই পরিণতি সিরিজে ঘটবে না। অর্থাৎ, থান্ডারবার্ড বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে গোটা সিরিজে।
মানবাধিকার চিত্রায়ন
গোটা যুক্তরাষ্ট্রে মাইনোরিটি (সংখ্যালঘু) কী ধরণের সমস্যায় ভুগছে, তা মিউট্যান্টদের মাধ্যমে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এছাড়া কালোদের প্রতি পুলিশদের আচরণ, অভিবাসী শিশুদের প্রতি নাগরিকদের আচরণ, নানা বিষয়ে বৈষম্য ইত্যাদি সম্পর্কে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই সিরিজের মাধ্যমে। এছাড়াও “মিউটিজ” (Muties) কথাটির মাধ্যমেও বর্ণবৈষম্য, শ্রেণীবৈষম্য ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে।
‘দ্য ওয়াল’ নামক এপিসোডের মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের কথাটি মিউট্যান্ট আন্ডারগ্রাউন্ডের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আমেরিকান যুদ্ধে যাওয়া সৈনিক থান্ডারবার্ডকে একটি সন্ত্রাসী হামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় শুধুমাত্র সে মিউট্যান্ট বলে। এখানে মিউট্যান্টদের সাথে আমেরিকার বর্তমান সংখ্যালঘুদের চিত্রায়ন খুব জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
নারীশক্তিকে প্রদর্শন
ওয়ান্ডার উওম্যান মুক্তি পাবার পর হলিউডে রীতিমতো একটি ঝড় বয়ে গিয়েছে। চলচ্চিত্রে নারীদের কীভাবে চিত্রিত করা যেতে পারে কিংবা সুপারহিরো জনরায় পিছিয়ে থাকা নারী চরিত্রগুলোকে কেমন করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা যায়, তা নিয়ে রীতিমতো নিরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। পোলারিস, ব্লিঙ্ক, সেইজ, ড্রিমার ইত্যাদি চরিত্রগুলোর মাধ্যমে নারীশক্তিকে জোরালোভাবে রুপায়ন করা হয়েছে। নিজেদের মতামত, ব্যক্তিস্বাধীনতা ইত্যাদি নানা বিষয়গুলো এখানে উঠে এসেছে।
পারিবারিক সম্পর্কে প্রাধান্য
দ্য গিফটেডের মূল কাহিনী আবর্তিত হয়েছে রীড স্ট্রাকারের দুই ছেলেমেয়ে অ্যান্ডি এবং লোরেইন স্ট্রাকারকে ঘিরে। মিউট্যান্টদের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া আইনজীবী রীড স্ট্রাকারের নিজের ছেলেমেয়ে যখন ফেরারী হয়,তখন মানসিক দ্বন্দ্বে না ভুগে তাদের পাশে থেকে এবার মিউট্যান্টদের পক্ষে লড়তে আসাকে খুবই শক্তভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে। বর্তমান আমেরিকায় পারিবারিক সম্পর্কের ভঙ্গুর চিত্রের এই বিপরীত দৃশ্য খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন দর্শকরা। এছাড়াও মিউট্যান্ট আন্ডারগ্রাউন্ডে ঠাই নিতে আসা শিশুদের প্রতি কেইটলিনের মানবিক আচরণও দর্শকদের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়।
এক্লিপসের নয়া আগমন
থান্ডারবার্ড, পোলারিস, ব্লিঙ্ক ইত্যাদি চরিত্রগুলো কমিকে খুব শক্তিশালী ভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে। তবে দ্য গিফটেডের অন্যতম প্রধান চরিত্র এক্লিপসকে শুধুমাত্র এই সিরিজের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। কোন কমিকেই এর আগে এক্লিপস ওরফে মার্কো ডিয়াজকে দেখানো হয় নি। আলো থেকে শক্তি গ্রহণ করা এক্লিপসের মতো কিছু চরিত্র কমিকে রয়েছে। তাই কেউ কেউ অবাক হয়ে যান এই ভেবে যে নতুন একটি চরিত্র সৃষ্টি করবার প্রয়োজন কী ছিল। দ্য গিফটেডের স্রষ্টারা চেয়েছিলেন মূল চরিত্রদের মাঝে এমন একটি মিউট্যান্ট থাকুক, যে কাহিনীর প্রয়োজনেই নতুনভাবে আবর্তিত হবে।
স্লিপার এজেন্ট সেইজ
২০০১ সালের আগে মূলধারার এক্স মেন কমিকে সেইজ চরিত্রটি তেমনভাবে আসে নি। তবে ১৯৮০ সালের কমিক বইগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে প্রফেসর চার্লস জেভিয়ায়ের হয়ে সেইজ একজন স্লিপার এজেন্টের কাজ করত।
সেইজের প্রকৃত নাম জানা যায় নি তবে কমিকে তাকে ‘টেসা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। হেলফায়ার ক্লাবের সেবাস্টিয়ান শ’এর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করত সেইজ। ‘জীবন্ত কম্পিউটার’ হিসেবে খ্যাত সেইজ চার্লস জেভিয়ারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবাস্টিয়ানের সকল তথ্য পাচার করত। জেভিয়ারের তৈরি প্রথম এক্স মেন দলেও সেইজের অবস্থান ছিল। এছাড়াও মানুষের জেনেটিক কোডের মাঝে মিউট্যান্ট জিন আছে কিনা, সেটিও নির্ধারণ করবার ক্ষমতা আছে সেইজের। প্রথম সিজনে সেইজকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তাতে দর্শকের মাঝে একধরণের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এবার দেখাই যাক,আসছে সিজনে কেমন রুপে আবির্ভূত হয় সেইজ।
আলফা মিউট্যান্ট পোলারিস
এক্স মেন ফ্র্যাঞ্চাইযের অন্যতম একটি জনরা হচ্ছে আলফা মিউট্যান্ট। আলফা মিউট্যান্টদের রয়েছে অতুলনীয় ক্ষমতা, যা অন্যান্য মিউট্যান্টদের থেকে তাদের আলাদা করেছে। পোলারিস এই আলফা মিউট্যান্টদের একজন সদস্য। দ্য গিফটেড সিরিজে লোরনা (পোলারিস) আলফা মিউট্যান্ট শক্তি দেখানো হয়েছিল। চৌম্বকক্ষেত্রের নানা বিষয় নিয়ে কারিকুরি করবার শক্তি আছে পোলারিসের। তবে এছাড়াও আরো কিছু ক্ষমতা আছে তার। সেকেন্ডারি মিউটেশনের মাধ্যমে লোরনা দৈহিক আকৃতি ও শারীরিক ক্ষমতা পরিবর্তন করতে পারে।
পোলারিস উড়তে পারে, চৌম্বক ও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। শক্তি নিজের মাঝে শোষণ করতে পারে, পিতার মতো (ম্যাগনিটো) ধাতুকে পরিবর্তন করতে পারে, কারো রক্তের লৌহকণিকাগুলোর মাঝে কারিকুরি করে রক্তের গতিপ্রবৃদ্ধি পরিবর্তন করতে পারে। টেলিভিশন সিরিজেও পোলারিসের চমৎকার কিছু ক্ষমতার প্রদর্শন করা হয়েছে।
এক্স মেন ফ্র্যাঞ্চাইযের প্রতি আগ্রহ থেকে থাকলে দেখে নিতে পারেন দ্য গিফটেড । প্রথম সিজন মাত্রই শেষ হয়েছে। আকাশচুম্বী প্রত্যাশা আস্তে আস্তে তৈরী হচ্ছে এই সিরিজকে ঘিরে। আশা করা যায় এক্স মেন ফ্র্যাঞ্চাইযের আরেকটি চলতি টিভি সিরিজ লিজিয়নের সাথে বেশ ভালো একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে লিজিয়ন হচ্ছে চার্লস জেভিয়ারের মিউট্যান্ট পুত্র, পোলারিস হচ্ছে জেভিয়ারের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাগনিটোর কন্যা। দেখা যাক, জনপ্রিয় এই দুই চরিত্রের তনয়-তনয়া কেমন করতে পারে টিভিতে!