খাবার সুস্বাদু করে রান্না করাই শেষ কথা নয়, খাবারের পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন রাখা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। সাধারণত আমরা রান্না করা খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে রান্নার চেয়ে কাঁচা খাওয়ায় উপকার হয় বেশি। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেসব খাবার কাঁচা খাওয়া যায়, সেগুলো রান্না করলে তার পুষ্টিমান আরো শক্তিশালী হয়। আদতে কোনটি বেশি উপকারী তা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাতেই আমাদের আজকের আয়োজন।
ফাইবার ও ফলেটযুক্ত শতমূলীর কথাই যদি বলি, এতে রয়েছে ক্রোমিয়াম নামে এক ধরনের খনিজ পদার্থ। ক্রোমিয়াম ইনসুলিনের ক্ষমতা বাড়িয়ে গ্লুকোজকে রক্ত থেকে কোষে পরিবাহিত হতে সাহায্য করে। শতমূলী রান্না করে খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান আরো প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। মাশরুমের বেলায়ও একই নিয়ম। যত বেশি সিদ্ধ হবে, তত বেশি পটাশিয়াম বাড়বে। যারা আধা সিদ্ধ শাকসবজি খেতে ভালোবাসেন, তারা জেনে রাখুন পালংশাক রান্না করলে এটি আরো বেশি ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম শুষে নিতে পারে। আবার ব্রোকলি যদিও আমরা আধা সিদ্ধ বা রান্না করে অভ্যস্ত। কিন্তু ব্রোকলির মধ্যে মাইরোজিনাস নামে এনজাইম তাপে নষ্ট হয়ে যায়।
এবার আসা যাক সালাদ আইটেম হিসেবে পরিচিত কয়েকটি উপাদানের কথায়। জুস ও সালাদ হিসেবে অনায়াসে কাঁচা বিট খেতে পারেন। রান্না করলে এর ভিটামিন সি, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফলেট ২৫ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। জেনে অবাক হবেন, আগুনের তাপে পেঁয়াজের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট অ্যালিসিনের মান কমে যায়। যদিও প্রায় সব তরকারিতেই আমরা পেঁয়াজ দিয়ে থাকি। ক্যাপসিকাম রান্না ও কাঁচা দুইভাবেই ব্যবহূত। কিন্তু ৩৭৫ ডিগ্রিতে রোস্ট, ফ্রাই বা গ্রিল করলে এর ভেতরের ভিটামিন সি ভেঙে যায়। সালাদের অন্যতম জনপ্রিয় উপকরণ টমেটো দিয়েই শেষ করা যাক। পুষ্টিমানের ভিত্তিতে রান্না টমেটোই সেরা। কারণ রান্না করলে টমেটোর ক্যান্সার প্রতিরোধক লাইকোপেনের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যায়।
ফল, সবজি, বাদাম, শস্যজাতীয় খাবার ইত্যাদিতে অপরিশোধিত অবস্থায় পুষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে। অন্যদিকে ডিম, অপরিশোধিত দুগ্ধজাত খাবার, কাঁচা মাছ ও মাংস ইত্যাদি মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। তাই কোন খাবার কাঁচা এবং কোনগুলো রান্না করে খাওয়া উচিত তা জানা থাকা উচিত। কাঁচাখাবার খাওয়ার ভালো দিক – রান্নার ফলে খাবারের অনেকটা প্রাকৃতিক এনজাইম ও পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। এসব উপাদান শরীরের গঠন, শক্তি সঞ্চার এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কাঁচা খাবারে এসব উপাদান অক্ষত অবস্থায় থাকে। ফুলকপি বা বাঁধাকপিজাতীয় সবজি রান্না করা হলে তা থেকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান ও ক্ষতিকর আরও কিছু মৌলিক উপাদান উৎপন্ন হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই সবজিগুলো কাঁচা খেলে শুধু যে এসব ঝুঁকি এড়ানো যায় তা-ই নয়, পাশাপাশি প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও পাওয়া যায়।
কাঁচা খাবারে প্রচুর আঁশ পাওয়া যাবে। পরিশোধিত ও প্রক্রিয়াজাত খাবারে ট্র্যান্স-ফ্যাট ও ট্রান্স-সুগার থাকে যা অপরিশোধিত ও কাঁচাখাবারে থাকে না। কাঁচাখাবারের বিপক্ষে বলা যায়, রান্না করার মাধ্যমে বেশ কিছু ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়। কাঁচা খাবার খেলে এসব জীবাণু থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়া ও পাকস্থলীতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। গাজর, টমেটো ইত্যাদি সবজির পুষ্টি উপাদান রান্নার সময় নিঃসৃত হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদিক ও চায়নিজ বিশ্বাস অনুসারে রান্নার ফলে খাবারের আঁশ এবং বেশ কিছু উপাদান ভেঙে যায়। যা হজমে সুবিধা হয়। বিশেষত গ্রীষ্মের সময় খাবার হজম হতে সমস্যা হয় আর এ সময় ভালোভাবে রান্না করা খাবার খেলে তা সহজেই হজম হবে। কাঁচা খাবারে প্রায়ই ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের স্বল্পতা থাকে। কাঁচা কিছু ফল ও সবজি বেশ শক্ত হয়ে থাকে যা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। আসল বিষয় হল কাঁচা অথবা রান্না করা দু ধরনের খাবারেই সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। তবে তা নির্ভর করে কোন খাবার খাওয়া হচ্ছে তার ওপর। তাই দুই রকম খাবারের সমন্বয়েই খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।