আচ্ছা, মনের খোরাকের জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা কি হতে পারে বলুন তো? একইসাথে আনন্দ, বেদনা, রোমাঞ্চ, ভয়, শিহরণ, কৌতুহল, রহস্য তৈরি করতে পারে, এমন কি আছে আমাদের চারপাশে?
আরো একটা সুযোগ দিচ্ছি। মানুষের বন্ধু বলা হয় একে, বিপদে সবসময় আর কেউ পাশে না থাকলেও নাকি ইনি যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে যান। এতক্ষণে আপনাদের বুঝে যাবার কথা। যার কথা বলা হচ্ছে, তা হচ্ছে বই। আর কিছুদিন পরেই আসছে প্রাণের বইমেলা। সাহিত্যানুরাগীরা এই মেলায় নিজেদের মনের খোরাক মেটান প্রাণভরে। তবে একথা সত্যি, রাজধানীতে বইপ্রেমীদের জন্য বইয়ের মেলাই যেন যথেষ্ট নয়। চাই স্থায়ী কিছু সমাধান। প্রমথ চৌধুরীর মতে, লাইব্রেরী ছাড়া একটি জাতির প্রকৃত বিকাশ হয় না। দুঃখজনক হলেও সত্য, ঢাকা শহরে লাইব্রেরীর সংখ্যা খুবই কম, প্রায় নেই বললেই চলে। হাতের কাছে রয়েছে নীলক্ষেত, বাংলাবাজার, শাহবাগের পাঠক সমাবেশ। এই তো! পাঠক, এবার একটু ভাবুন তো। চারপাশে আর কোন লাইব্রেরীর কথা মনে আসছে কিনা? ভাবতে থাকুন। সাথে সাথে নতুন কিছু বইয়ের দুনিয়ার খবরও দেখে নিন। রাজধানী ঢাকায় এসেছে নতুন তিনটি বইয়ের দোকান, যেগুলোর মনকাড়া সাজসজ্জা ও বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার ইতোমধ্যেই পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
নাম তিনটি হচ্ছে বেঙ্গল বই, দীপনপুর, বাতিঘর।
বেঙ্গল বইঃ
নজরকাড়া সাজসজ্জা ও সংগ্রহের কারণে বেঙ্গল বই পাঠক ও বইপ্রেমীদের মনে একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যদি আপনি ঢুঁ দেন, তাহলে অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন যে মানুষ যাচ্ছে বই কিনতে, সেখানে বন্ধু বান্ধবকে সাথে নিয়ে ছবি তুলছে, আড্ডা দিচ্ছে। খুবই ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। গত বছরের নভেম্বরে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ধানমন্ডিতে যাত্রা করে বেঙ্গল বইয়ের। দেশ বিদেশের নানা লেখকের বই এখানে পাওয়া যাবে। দেশী বইয়ের ওপর আছে ২০ শতাংশ ছাড়। নিয়মিত পাঠচক্র, নতুন লেখকদের আগমন, কবিতা পাঠের আসর, প্রকাশনা উৎসব, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি পদক্ষেপ বেঙ্গল বইকে নিয়ে গিয়েছে অনন্য এক জায়গায়। বইপ্রেমীরাও বেশ পছন্দ করছেন এই উদ্যোগটিকে।
দীপনপুরঃ
দীপন নামটি কি একটু চেনা চেনা লাগছে? ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে নিহত হন প্রকাশন দীপন।
স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ডাক্তার রাজিয়া রহমান জলি এগিয়ে আসেন স্বপ্ন পূরণে, যাতে মানুষ দীপনকে ভুলে না যায়। এই ভাবনা থেকেই একটি বুকশপ ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করেন রাজিয়া রহমান। নাম দেন ‘দীপনপুর’। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দীপনপুরের যাত্রা শুরু হয়। বিশাল পরিসরে নির্মিত এই বুকশপে রয়েছে সাহিত্য, কবিতা পাঠের আসর, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। এছাড়াও ক্যাফে দীপাঞ্জলিতে চাইলেই সারতে পারেন হালকা জলখাবার। শিশু কিশোরদের জন্য রয়েছে ‘দীপান্তর’ নামের চমৎকার একটি কর্ণার। দেশ বিদেশের নানা বই এখানে পাওয়া যাবে। চাইলে অনলাইনে অর্ডার করেও দীপনপুর থেকে বই সংগ্রহ করতে পারেন।
বাতিঘরঃ
বছরের একদম শেষে বইপ্রেমীদের স্বপ্ন পূরণ করল বাতিঘর। চট্টগ্রামের এই প্রকাশনী অনেকদিন ধরেই ঢাকাবাসীদের একটি দাবি হয়ে আসছিল। তার ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অষ্টম তালায় রীতিমত মোঘল স্থাপত্য কায়দায় নির্মিত হয় বাতিঘর। ভেতরে ঢুকলেই চমকে যাবেন আপনি। এ যেন বইয়ের এক স্বর্গরাজ্য!
কি নেই এখানে? নানা জনরা, নানা লেখকের অসংখ্য বইয়ের সমাহার রয়েছে এখানে তবে মাত্র শুরু হবার কারণে এখনো গুছিয়ে উঠতে পারে নি বাতিঘর কর্তৃপক্ষ। তবে এটা বলে দেয়া যায় যে, অচিরেই বাতিঘর বইপ্রেমীদের খুবই জনপ্রিয় একটি মিলনমেলায় পরিণত হবে। বই কেনার পাশাপাশি এখানে আপনি পাবেন জলখাবারের সুযোগ।
সবশেষে একটি কথা বলে নিই। ওপরের এই তিনটি বইয়ের রাজ্যেই আপনি পাবেন বিনামূল্যে বই পড়বার সুযোগ। অর্থাৎ, পাঠকদের বসার স্থান এখানে রয়েছে। চাইলেই পছন্দসই বই নিয়ে ডুবে যেতে পারেন জ্ঞানের অতল সমুদ্রে। সেঁচে আনতে পারেন মণি-মাণিক্য।
তবে আর দেরী কেন? আজই চলে যান না!
(ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট)