বিগ ব্যাং তত্ত্ব দিয়ে পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন স্টিফেন হকিং। তার বই আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ টাইম (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে সারা বিশ্বকে। শারীরিকভাবে চলাফেরা করতে অক্ষম, মেধাবী এই বিজ্ঞানী আরো একবার আলোচনায় এলেন। না, কোন তত্ত্ব দিয়ে নয়।
তিনি বেঁচে আছেন কি নেই, তা নিয়ে। যদি উইকিপিডিয়াতে গিয়ে একবার ঢুঁ মেরে আসেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে সেখানে এই বরেণ্য বিজ্ঞানীর মৃত্যু সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়া নেই। অর্থাৎ, উইকিপিডিয়া অনুসারে তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তবে কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ বিশ্বাস করেন যে ‘আসল’ বিজ্ঞানী মারা গিয়েছেন অনেক আগেই এবং তার স্থলে উঁচু মহলের রাজনীতিবিদ এবং বিজ্ঞানীরা একটি স্রেফ পুতুল রেখে দিয়েছেন! স্টিফেন হকিংকে নিয়ে নানা বই, চলচ্চিত্র, প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করা হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি নিজের ৭৬তম জন্মদিন পালন করলেন বর্ষীয়ান এই বিজ্ঞানী।
মেইল অনলাইনে প্রকাশিত একটি সংবাদ অনুযায়ী, কিছু কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন স্টিফেন হকিং কয়েক দশক আগেই মারা গিয়েছেন এবং তারই মতো কাউকে কিংবা একটি যান্ত্রিক পুতুলকে চেয়ারে বসিয়ে রেখে মানুষের চোখে ঠুলি পড়ানো হচ্ছে। কেউ কেউ তো আরো এককাঠি সরেস। তারা মনে করেন স্টিফেন হকিংয়ের সমস্ত চিন্তাধারা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে এই যান্ত্রিক পুতুলের মাঝে দিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সতিকারের বিজ্ঞানী তার বিখ্যাত বই আ ব্রিফ হিস্টোরি অব টাইম প্রকাশিত হবার তিন বছর আগেই (১৯৮৫) সালে মৃত্যুবরণ করেন।
যারা যারা তাদের বিশ্বাসে অটল আছেন, মূলত কয়েকটি বিষয়ের ওপর নিজেদের সিদ্ধান্তকে জোর প্রদান করছেন।
হকিংয়ের বর্তমান অবস্থাঃ
১৯৮২ সালের তুলনায় ২০১৭ সালের প্রেক্ষাপটে হকিংকে বরং আরো অনেক তরুণ লাগছে। ৭৬ বছর বয়সী কোন মানুষকে এতোটা তরতাজা দেখায় না, যদি তার ALS (Amyotrophic Lateral Sclerosis) থাকে। তারা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছেন যে বয়সের সাথে সাথে মানুষের কানের দৈর্ঘ্য কমে না। তবে দাঁতের অবস্থা পরিবর্তন হয়। ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং মাড়ি থেকে খসে পড়ে। তবে বড় ধরনের কোন দন্ত পরিবর্তন না হলে দাঁতের এমন আমূল পরিবর্তন হওয়া কখনো সম্ভব নয়। সন্দেহপোষণকারীরা যখন স্টিফেনের ছবি ভালো করে দেখেন, তারা লক্ষ্য করেন যে তার ছবিতে যে দাঁত দেখানো রয়েছে, সেগুলোর অবস্থা দিনে দিনে বেশি খারাপ হয়ে পড়েছে কিন্তু নিচের পাটির দাঁতগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক বড়।
শারীরিক পরিবর্তনঃ
Amyotrophic Lateral Sclerosis রোগে ভুগতে থাকা কোন রোগী চিকিৎসাধীন থাকার পর খুব বেশি হলে চার বছর জীবিত থাকতে পারে। কিন্তু স্টিফেন হকিং যখন চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন, খুব বেশি হলে তার আয়ুষ্কাল দুই বছর ছিল। তারপরও দেখা যাচ্ছে যে ৫৫ বছর পরও স্টিফেন হকিং দিব্যি তার ৭৬ বছরের জন্মদিন পালন করছেন।
বিয়ের ছবিঃ
স্টিফেন হকিংয়ের প্রথম স্ত্রী জেইন ওয়াইল্ডের সাথে তোলা বিয়ের ছবিগুলো বেশ স্বাভাবিকই ছিল। তবে তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাইন ম্যাসন (যিনি হকিংয়ের নার্স ছিলেন)-এর সাথে তোলা ছবিগুলো বেশ সন্দেহ জাগানিয়া। বিয়ের প্রতিটা ছবিতেই মেসন ভিন্ন ভিন্ন পোষাক পরেচ ছিলেন এবং তার বয়স যেন একেক ছবিতে একেক রকম লাগছিল। চুলও অপেক্ষাকৃত ছোট ও লালচে লাগছিল।
ভয়েস-সিন্থেসাইজিং কম্পিউটারঃ
স্টিফেন যে যন্ত্রের সাহায্যে কথা বলেন, সেটিও সকলের মাঝে এক ধরনের সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। বলা হয়ে থাকে, গালের একটি পেশী নাড়িয়ে হকিং স্ক্যান করেন এবং শব্দচয়ন করে পর্দায় সেটিকে ফুটিয়ে তোলেন। এই ফুটিয়ে তোলা শব্দটিই আওয়াজ হয়ে শ্রোতাদের কানে পৌছায়। কেবলমাত্র গালের একটি পেশী নাড়িয়ে পর্দায় একটি শব্দ ফুটিয়ে তোলা সম্ভব, এটা সন্দেহপোষণকারীরা একেবারেই বিশ্বাস করেন না। তাদের ধারনা, স্টিফেন হকিংয়ের বদলে এখানে যে বসে আছেন, তিনি কিছুই করছেন না। সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে নাসা’র স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারের মাধ্যমে।
যদি এই ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্বটি সত্য হয় এবং আসল স্টিফেন হকিং নাই-ই থাকেন, একটি প্রশ্ন আমাদের মনে উদয় হয়। সেটি হচ্ছে, কেন? মেইল অনলাইন বলছে, মানবসভ্যতা আগামী একশ বছর পরে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এর পেছনে থাকতে পারে ভিনগ্রহবাসীদের হাত। এজন্য একজন ‘পথপ্রদর্শক’ হিসেবে কাউকে দরকার মানবসভ্যতার। স্টিফেন হকিংয়ের মতো এমন একজন বিজ্ঞানী যদি মানুষকে সঠিক দিক দেখাতে পারেন, তাহলে সেটিই কি কাম্য নয় সকলের?
অবিশ্বাসীদের মতে, ‘পুতুল বিজ্ঞানী’ স্টিফেন হকিং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে অনেক জ্ঞান রাখেন। গত দশ বছরে স্টিফেন হকিং ট্রাম্প বিরোধী, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতায় বিরোধী এবং ব্রেক্সিট বিরোধী ছিলেন। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে তিনি রাজনীতি সম্পর্কেও বেশ ভালোই জ্ঞান রাখেন। কেউ কেউ বলেন ১৯৮৫ সালে স্টিফেন হকিং নিউমোনিয়ায়ও মারা গিয়েছিলেন।
কথাগুলো সত্যি না মিথ্যে তা কেবল সময়ই বলে দেবে। তবে এসব নিয়ে যে স্টিফেন হকিং একদমই মাথা ঘামাচ্ছেন না, তা তার ৭৬তম জন্মদিন পালন করা দেখলেই বোঝা যায়। কিংবা কে জানে ঐ চেয়ারে সত্যিই বসে আছে হকিংয়ের রুপধারী কোন যান্ত্রিক পুতুল!
(ফিচারটি তৈরি করা হয়েছে এই সাইটের সাহায্যে)