মেডিকেলের ভাষায় একজন মানুষ কখন মারা যায় বলতে পারেন? ডাক্তার জেমস বার্নাট বলছেন কারো মৃত্যু ঘটেছে বা সে বেঁচে আছে কিনা, এটা বলে দেয়া খুব সহজ হলেও অন্তত দুটো জিনিস মাথায় রাখা জরুরী। কেউ কেউ হয়তো এটাও ভাবেন যে ডাক্তার যদি কাউকে মৃত ঘোষণা করে দেয়, তখনই কেবল একজন মানুষকে মৃত বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। কারো হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা মস্তিষ্ক আর কাজ না করলে সে মেডিকেলের ভাষ্যমতে মৃত। মস্তিষ্কের সচলতায় যখন স্নায়বিক কোন কাজকর্ম করে না, বৈদ্যুতিক কোন ইমপালস যখন কোষগুলোতে বার্তা পাঠানো বন্ধ করে দেয়, তখনই একটি প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এতো কথা কেন বলছি বলতে পারবেন? কারণ, মৃত্যুর এই দুটো শর্তই পালন করবার পর একজন অটোপসি টেবিলে জেগে উঠেছেন!
গত ১০ জানুয়ারি, স্পেনের গঞ্জালো মনতোয়া খিমেজেযকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন ডাক্তাররা। দেশটির উত্তরাঞ্চলের একটি জেলের আসামী হিসেবে শাস্তি কাটাচ্ছিলেন তিনি। লা ভ্য দে আস্তুরিয়াস নামক একটি পত্রিকার বরাতে জানা যায় যে হঠাত করে বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়ায় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। আশ্চর্যের ব্যপার হলো, অটোপসি টেবিলে যখন গঞ্জালো নাক ডাকা শুরু করেন, ডাক্তাররা অবাক হয়ে যান! খানিক আগেই মৃত ঘোষণা করা মানুষটি দিব্যি বেঁচে আছে।
বর্তমানে গঞ্জালো অভাইডোতে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অব আস্তুরিয়ায় নিবিড় তত্ত্বাবধানে আছেন। কিন্তু এরকম কিছু একটা ঘটা কিভাবে সম্ভব?
কারো মস্তিষ্ক সচল আছে কিনা, তা জানবার জন্য ডাক্তাররা নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন। গঞ্জালোও তার ব্যতিক্রম নন। ডাক্তার ডায়ানা গ্রীন-চান্ডোসের মতে গঞ্জালোকেও একই ধরনের নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। তখন সবকিছুই ‘স্বাভাবিক’ ছিল।
গঞ্জালোর পরিবারের মতামত নেবার সময় তারা বলেন, গঞ্জালোর এপিলেপ্সি ছিল। এই অসুখটিই হয়তো ডাক্তারদের কাছে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করবার রসদ যোগাতে পারে। যাদের এপিলেপ্সি রয়েছে, তাদেরকে ‘ক্যাটালেপ্সি’ নামক একটি অবস্থার মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝে যেতে হয়। তবে এটা সকল রোগীর জন্য প্রযোজ্য নয়। ক্যাটালেপ্সি হচ্ছে এক ধরনের শারীরিক অবস্থা, যখন মানুষের শরীরের পেশীগুলো আর কাজ করে না এবং মস্তিষ্কের কোন ধরনের কাজে অংশগ্রহণ করে না। এক কথায় বলতে গেলে, মানুষ সকল ধরনের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তবে এই সমস্যাটি সাময়িক। কিছুক্ষণ পরই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে আক্রান্ত ব্যক্তি। গঞ্জালোর সাথেও এমন কিছু ঘটেছে বলে ডাক্তারদের বিশ্বাস।
এই সমস্যায় একমাত্র গঞ্জালোই আক্রান্ত, তা মোটেও বলা যাবে না। এর আগেও এমন অনেক কেস রয়েছে, যেখানে মানুষ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে এসেছেন। ২০১৪ সালে পোল্যান্ডের ৯১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ১১ ঘন্টা লাশঘরে কাটাবার পর তাকে মড়াদের যে ব্যাগে রাখা হয়েছিল, সেটি নড়তে শুরু করে। জ্ঞান ফিরে পেয়েছিলেন বৃদ্ধা।
(তথ্যসূত্রঃ লাইভ সাইন্স)