লিওনেল মেসির ভাণ্ডারে যা নেই, তাঁর তা আছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর এখনো যে অর্জন নেই, তা তাঁর আছে। একজন ফুটবলারের পক্ষে সম্ভাব্য যা যা কিছু জেতা সম্ভব, তার সবই জিতেছেন। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ইতিহাসের অন্যতম সফল গোলকিপারের ছোট্ট তালিকা করলে উপরের দিকেই থাকবে তাঁর নাম। তিনি ভিক্টর ভালদেস।
ক্যারিয়ারে তাঁর যা কিছু অর্জন, তার প্রায় সবই এসেছে বার্সেলোনার জার্সি গায়ে। ছিলেন ক্লাবটির বিশ্বস্ততার প্রতীক, গোলবারের নিচে তিনি যেন ছিলেন চীনের প্রাচীর। বার্সার জার্সি গায়ে ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৩৮৭ টি পেশাদার ম্যাচ, জিতেছেন ২১ টি ট্রফি!
বার্সেলোনাতেই জন্ম নেয়া ভালদেসের ফুটবলে হাতেখড়িও বার্সার যুব দলেই। ২০০২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ম্যাচে লেজিয়ার বিপক্ষে মূল দলে অভিষেক ভালদেসের। প্রথম মৌসুমে দ্বিতীয় পছন্দের গোলকিপার হিসেবে খেললেও পরের মৌসুমেই দলে নিয়মিত হন, হন বার্সার মূল গোলকিপার। ২০০৪-০৫ মৌসুমে বার্সার হয়ে প্রায় সব ম্যাচেই খেলেন, ৬ বছরের মধ্যে বার্সার প্রথম লীগ শিরোপা জয়েও বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। নিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি পান ‘জামোরা ট্রফি’ জিতে।
পরের মৌসুমে যেন আরও দুর্দান্ত ভালদেস। বার্সার ডাবল জয়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। বিশেষ করে ওই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের জন্য ভালদেসের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকবে বার্সা। আর্সেনালের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে থিয়েরি অঁরিকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দুইবার গোলবঞ্চিত করেন ভালদেস। কোচ ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড ওই ম্যাচের পর আলাদাভাবে প্রশংসা করেছিলেন ভালদেসের।
১৭ জুন ২০০৭ লা লিগার শেষ রাউন্ডের ম্যাচে সাবেক বার্সা গোলকিপার অ্যান্দনি জুবিজারেতার একটি রেকর্ডে ভাগ বসান ভালদেস। লীগের ৩৮ টি ম্যাচেই প্রথম একাদশে থাকা এবং একবারও ম্যাচ শেষের আগে মাঠ থেকে উঠে না যাওয়ার রেকর্ড। ওই বছরেরই ৭ নভেম্বর আরও একটি রেকর্ড করেন ভালদেস, এবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগে। রেঞ্জার্সের বিপক্ষে ম্যাচে জালে বল ঢুকতে না দিয়ে ৪৬৬ মিনিট গোল না খাওয়ার নতুন ক্লাব রেকর্ড করেন ভালদেস। শেষ পর্যন্ত অলিম্পিক লিঁওর বিপক্ষে দুই গোল খেয়ে ভাঙ্গে ভালদেসের এই রেকর্ড।
তবে ভালদেসের সেরা রূপটা দেখা যায় পেপ গার্দিওলার অপ্রতিরোধ্য বার্সার সময়ে। মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তাদের চেয়ে কোন অংশে কম ছিলনা নির্ভরতার সাথে গোলবার সামলানো ভালদেসের অবদান। ২০০৯ এ ট্রেবল জয়ের পথে ভালদেসই রেখেছিলেন বড় অবদান, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দুই অর্ধে দুইটি গোল ফিরিয়ে দিয়ে বার্সাকে শিরোপা জিততে সহায়তা করেন। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে আরেক উচ্চতায় ওঠেন স্প্যানিশ এই গোলকিপার। বার্সার জার্সি গায়ে কোন গোলকিপারের পক্ষে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার জুবিজারেতার রেকর্ডে ভাগ বসান তিনি।
২০১৩ সালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হারা ম্যাচে ১৭ তম ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ১০০ ম্যাচ খেলার রেকর্ড করেন ভালদেস। তবে আশ্চর্যজনকভাবে ভালদেস জানিয়ে দেন, ওই মৌসুম শেষে বার্সেলোনার সাথে চুক্তি আর নবায়ন করবেন না। তবে মাঠ থেকে বিদায়টা সুখকর হয়নি কিংবদন্তি এই গোলকিপারের। সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচের ২২ মিনিটে লিগামেন্ট ছিঁড়ে মাঠ থেকে বের হয়ে যান তিনি, ওইটাই ছিল বার্সার জার্সি গায়ে ভালদেসের শেষ বেরিয়ে যাওয়া।
বার্সেলোনা অধ্যায় শেষে মোনাকো হয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসেন ভালদেস। তবে ইউনাইটেডে ভালদেসের স্থায়িত্ব মোটেও সুখকর হয়নি। রেড ডেভিলদের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে পেরেছিলেন মাত্র দুইটি ম্যাচে।
তবে ভালদেসের সেরা অর্জনটা এসেছে স্পেনের জার্সি গায়ে। ইকার ক্যাসিয়াস নামক এক অতিদানবের কারণে একটি ম্যাচেও না খেলা হলেও ২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১২ ইউরো জয়ী দলের গর্বিত সদস্য ছিলেন ভালদেস। বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার হিসেবে আজীবন গর্বটাও তাই সঙ্গী হয়ে গেছে তাঁর।
ব্যক্তিগত অর্জনও কম নয়। জামোরা ট্রফি জিতেছেন সর্বোচ্চ ৫ বার, লা লিগার বর্ষসেরা গোলকিপার হয়েছেন ৪ বার। বার্সেলোনার হয়ে ৬ টি লা লিগা শিরোপা জিতেছেন, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছেন ৩ টি।
বার্সার অনেক সাফল্যের সঙ্গী এই গোলকিপার ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন গত সপ্তাহে। ফুটবল ছাড়লেও ভক্তদের মনে ঠিকই নিজের জায়গা জুড়ে থাকবেন ভিক্টর ভালদেস।