নতুন বছর চলেই এলো। বছরের শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের কোন নিস্তার নেই। নতুন বছরে নতুন বই, নতুন পড়াশোনা, নতুন সিলেবাস, স্কুল কলেজের সে একই বাঁধাধরা নিয়ম। কেউ কেউ তো আবার অভিযোগ করে বসেন, শুধু ক্লাসের পড়াটাই পরিবর্তন হলো। নিয়মের কোন হেরফের হলো না। অথচ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কিন্তু এমন হবার কথা ছিলো না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের দিকে তাকিয়ে রীতিমত অবাক হতে হয়। চমৎকার শিক্ষাব্যবস্থা, রীতিমত উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে ছাত্র ছাত্রীদের সেখানে পাঠদান করা হয়ে থাকে। আচ্ছা, এমন যদি হয় যে স্কুলে গেলে অবাক হয়ে যেতে হতো? উঠে যাচ্ছে সব প্রচলিত নিয়মকানুন? বদলে যাচ্ছে চেনাজানা বিদ্যাপীঠগুলো? কেমন হবে তাহলে? পরিবর্তন হোক বা নাই হোক, কিছু কিছু পরিবর্তন হয়তো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আনা যেতেই পারে। প্রিয়লেখার পাতায় আজ সেগুলো নিয়েই আলোচনা করা হবে।
স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশঃ
সুস্থ দেহের সাথে কর্মের সংযোগ একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চারপাশের পরিবেশ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে কাজ করতে ভালো লাগবে না। আর ছাত্রদের জন্য কথাটা তো আরো সত্যি। বিদ্যালয়ে শরীর চর্চার জন্য খুব ভালো পরিবেশ নেই, খেলাধূলার জন্য নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। যদি এগুলো নিয়মমাফিক সরবরাহ করা হতো, তাহলে পড়াশুনায় যেমন শিক্ষার্থীদের মন বসতো, ঠিক তেমনি শরীরচর্চার ফলে শরীর ও মনের ওপর খুব ভালো প্রভাব পড়ে।
জীবনমুখী শিক্ষার প্রচলন বাড়ানোঃ
বিদ্যালয়ে নানা কিছুর শিক্ষা আমাদের দেয়া হয়ে থাকে। যেমন, গুরুজনদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে, পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হবে, কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করতে হবে- এমন ধরনের নানা উপদেশমূলক শিক্ষা আমাদের দেয়া হয়ে থাকে। তবে শুধুমাত্র বইয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে এই শিক্ষাটিকে যদি হাতে কলমে দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে শিশুরা বেড়ে ওঠার সাথে সাথে নিজেদের মাঝে এই গুণাবলির সঞ্চার করতে পারে। এছাড়াও অযথা খরচ থেকে কি করে নিজেকে দূরে রাখতে হয়, অর্থ কিভাবে সঞ্চয় করা যায়, পড়াশুনাকে কিভাবে আনন্দের সাথে গ্রহণ করা যায়- এসব কিছুই শিক্ষার্থীদের প্রদান করতে হবে।
শিক্ষক বনাম শিক্ষকঃ
আসলে সত্য বলতে গেলে শিক্ষকের মাঝে ভালো খারাপ কিছু নেই। যা রয়েছে, তা হচ্ছে কেউ কেউ ভালো বোঝাতে সক্ষম, কেউ সক্ষম নন। এদের মাঝেই কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের মন জয় করেন। তবে কোন শিক্ষক ভালো বোঝাতে না পারলে তার সম্পর্কে কিছু বলার সুযোগ আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের নেই বললেই চলে। যদি এমন কোন সুযোগ রাখা যেত যে শিক্ষকেরা তাদের পড়ানো নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন করছেন বা কি করলে আরো ভালোভাবে তারা বুঝতে পারবে, তাহলে খুব ভালো হয়।
বন্ধে কোন বাড়ির কাজ নয়ঃ
এই কথা শুনলে অনেক শিক্ষক তেড়ে আসবেন কিন্তু বাইরের দেশে এই কাজটিই কিন্তু করা হয়। সেখানে হলিডে বা উইকেন্ডে কোন ধরনের বাড়ির কাজ শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় না। লকারে বইপত্র সব রেখে তারা বাড়ির পথ ধরে। তবে সময়ে সময়ে তাদের এসাইনমেন্ট দেয়া হয়। এই এসাইনমেন্টগুলো শিক্ষা সহায়িকা হিসেবেই কাজ করে বেশি।
স্টাডি হলঃ
আচ্ছা, কখনো কি আপনার সাথে এমন হয়েছে যে শিক্ষকের পড়া ক্লাসে বুঝতে পারছেন না কিন্তু ঐ একই পড়াই আপনার বন্ধু চট করে বুঝিয়ে দিচ্ছে? এমনটা হতেই পারে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে একজন শিক্ষার্থী শিক্ষকের চাইতে বন্ধুর কাছে পড়া বুঝতেই বেশি স্বস্তি বোধ করে। তবে এক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে। বাড়িতে কিংবা বাইরে কোথাও বন্ধুর সাথে সবসময় বসা হয়তো সম্ভব হয়ে উঠবে না। এইকারণে বিদ্যালয়েই যদি একটি স্টাডি হল বা পড়াশুনার উন্মুক্ত স্থান থাকে, তাহলে বেশ সহজেই কয়েকজন বন্ধু মিলে সেখানে পড়াশুনা করা যায়। যেটিকে আমরা ‘দলগত অধ্যয়ন’ বা গ্রুপ স্টাডি বলে অভিহিত করে থাকি।
শিক্ষকদের জন্য প্রণোদনাঃ
শিক্ষকেরা তাদের পড়ানোর জন্য বেতন পেয়ে থাকেন, একথা সত্যি। তবে যদি এমনটা চালু করা হয় যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের জন্য আলাদা প্রণোদনার ব্যবস্থা রয়েছে, তাহলে কিন্তু পুরো ব্যবস্থাটাই আরো ভালো হয়ে যায়। কারণ সকলেই চাইবে শিক্ষার্থীদের প্রতি আলাদা একটু যত্ন নিতে, তাদের ভালো করে বোঝাতে। ফলে শিক্ষকদের মাঝেও একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা শুরু হবে যা শিক্ষার্থীদের জন্যই ফলদায়ক হিসেবে গণ্য হবে।
কেবলমাত্র সুশিক্ষার ও সদিচ্ছার মাধ্যমেই একটি প্রজন্ম পুরোপুরিভাবে গড়ে উঠতে পারে। তবে তা যদি একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে ওঠে, সেটির চাইতে ভালো আর কোন কিছুই হতে পারে না।