একই দিনে নেয়া দুটি শাস্তির ঘটনায় বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কিত অবস্থায় পড়েছে বিসিবি। সাব্বির রহমানকে দেয়া শাস্তির ঘটনায় কমবেশি প্রশংসিত হলেও তামিম ইকবালকে আর্থিক জরিমানা করে সমালোচনার মুখে পড়েছে বিসিবি। তামিমকে জরিমানা করে ক্রিকেটারদের উপর একপ্রকার ‘সেন্সরশিপ’ জারি করছে কিনা বিসিবি, উঠছে সে প্রশ্নও। তামিমকে আর্থিক জরিমানা করা কোন কারণে উচিত হয়নি, সেটিই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো।
ঘটনা গত ২ ডিসেম্বর বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও রংপুর রাইডার্সের মধ্যকার ম্যাচের। ১০০ রান পেরোতেই প্রায় ২০ ওভার করে ব্যাট করতে হয়েছিল দুই দলকেই। ওই ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাৎক্ষণিকভাবেই পিচ ও কিউরেটরের কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন তামিম। মূলত মিরপুরের এমন জঘন্য টি-২০ উইকেটের সমালোচনায়ই মুখর ছিলেন তিনি।
তামিম সরাসরিই বলেছিলেন, “এটি হরিবল, হরিবল, হরিবল উইকেট। দশ দিন ছুটি পেয়েও কিউরেটর ভালো একটা উইকেট বানাতে পারলেন না। ৯০-৯৫ রানের ম্যাচ দেখার জন্য দর্শক মাঠে আসেন না।”
পরে সংবাদ সম্মেলনে এসেও এই বিষয়ে কথা বলেন তামিম। এবার উইকেটের সাথে কথা বলেন বাজে আউটফিল্ড নিয়েও। গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ঢাকা টেস্টের পরে এই আউটফিল্ডকেই ‘বাজে’ ট্যাগ লাগিয়েছিল আইসিসি, ঢাকার স্টেডিয়ামের নামের পাশে যোগ হয়েছে দুইটি ডিমেরিট পয়েন্টও। আগে মিরপুরের সবুজ আউটফিল্ড ও ড্রেনেজ সিস্টেম সকলেরই অনেক প্রশংসা কুড়াত। কিন্তু গত বছর সংস্কারকাজের পর থেকে মিরপুরের সবুজ আউটফিল্ড বদলে গিয়ে বাদামী রং ধারণ করেছে।
তামিমের এই আউটফিল্ড নিয়ে কথা বলাতেই বিসিবির আপত্তি। গত ১ জানুয়ারি বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান বলেছেন, “অন্য খেলোয়াড়দের মত তামিমও পিচ নিয়ে কথা বলতে পারে। কিন্তু সে আউটফিল্ড নিয়ে কথা বলবে কেন? আউটফিল্ডে কি সমস্যা? সে কিউরেটর নিয়ে কথা বলবে কেন? অস্ট্রেলিয়া টেস্টের পর এই আউটফিল্ডের জন্য এরই মধ্যে দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়েছি আমরা। আর দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে ঢাকায় ম্যাচ হওয়াই বন্ধ হয়ে যাবে। একজন অধিনায়ক এভাবে কথা বলতে পারেন না, তাকে কথাবার্তার ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।”
নাজমুল হাসানের ভাষ্যমতে, তামিমের এমন মন্তব্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ‘ক্ষতিকর’। কিন্তু তিনি নিজেই যে মিডিয়ার সামনে খোলাখুলিভাবে দল নির্বাচনে তার হস্তক্ষেপের কথা স্বীকার করেন, এগুলোও যে দেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর, সে ব্যাপারে তিনি বিন্দুমাত্রও বিচলিত নন!
অধিনায়কের আচরণ শেখাতে গিয়ে নাজমুল হাসান টেনে এনেছেন কিছুদিন আগের ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দিল্লী টেস্টের কথা। তার কথা, “দিল্লীতে ম্যাচ চলাকালীন সময়েই খেলোয়াড়েরা মাস্ক ব্যবহার করেছে। অধিনায়ক বিরাট কোহলি ইঙ্গিত করার সাথে সাথেই ভারতীয় খেলোয়াড়েরা নির্দ্বিধায় মাঠে খেলতে নেমে গেছে। ওইদিন কিন্তু কন্ডিশন নিয়ে কোন ভারতীয় খেলোয়াড় অভিযোগ করেননি। তাহলে আমাদের সহ-অধিনায়ক কেন পিচ নিয়ে, আউটফিল্ড নিয়ে কথা বলবে, তাও আবার মিডিয়ার সামনে? এগুলো বলে কি কোনকিছু বদলাতে পারবে সে? বরং সে যদি আমাদের বলত, আমরা ব্যাপারটা দেখতাম।”
অর্থাৎ ব্যাপারটা এমন দাঁড়াচ্ছে, আইসিসি পর্যন্ত যেই মাঠের আউটফিল্ডকে বাজে বলছে, একজন খেলোয়াড় হয়ে সেই ব্যাপারটাই খোলাখুলিভাবে বলতে পারবেন না তামিম! আইসিসি কি এমনিতে মিরপুরের আউটফিল্ড পর্যবেক্ষণ করছে না? শুধু তামিমের কথা উপর ভিত্তি করেই তারা মিরপুরের আউটফিল্ডের ভালো মন্দ বিচার করবে? তাহলে কেন এই লুকোছাপা? বাজে আউটফিল্ডকে ভালো করার বদলে কেন খেলোয়াড়দের উপর এভাবে সেন্সরশিপ আর জরিমানার বোঝা চাপিয়ে দেয়া? উত্তরটা বোধহয় বিসিবিই ভালো দিতে পারবে!