পৃথিবীতে কত আশ্চর্যই না ঘটে! এই যেমন ধরুন, একজন ছাত্র পড়াশোনা করে না, ক্লাসে নিয়মিত যায় না, শিক্ষকের দেয়া বিধি বিধান মেনে চলে না। ফলস্বরুপ, পরীক্ষা ভালো হয় না। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, যদি পরীক্ষা ভালো না হয়ে থাকে, তাহলে তার কি হবে? অবশ্যই সাজা পেতে হবে কিংবা করুণ পরিণতি বরণ করে নিতে হবে। যদি সে সত্যই পড়াশোনা ঠিকভাবে করতো, তাহলে শাস্তি পেতে হতো না। ঠিক একইভাবে, আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাস করি, তারা সকলেই মানি যে ঈশ্বর বলে কেউ একজন আছেন এবং আমাদের সকল কাজের বিচার পরপারে করা হবে। ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টান যে কোন ধর্মের কথাই বলুন না কেন, স্বর্গ নরক বলে একটি জগতের কথা বলা হয়েছে, যেখানে মানুষের ভালো কাজ আর খারাপ কাজের বিচার করে যে কোন একটি প্রদান করা হবে। আবার কেউ কেউ রয়েছেন যারা স্বর্গ নরকের অস্তিত্বে একেবারেই বিশ্বাস করতে চান না। তাদের মতে পৃথিবীতে মানুষ তার সময় কাটিয়ে যাবার পর আর কোন কিছুরই অস্তিত্ব থাকে না। এখানেই শুরু, এখানেই শেষ।
স্বর্গ, নরক আছে কি নেই, সে প্রশ্নে আমরা যাচ্ছি না। আমরা আজ এমন কিছু ব্যক্তি সম্পর্কে জানবো, যারা স্বীকার করেছেন যে পৃথিবীতেই তাদের নরকের স্বাদ কেমন হবে, তা গ্রহণ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। জীবনের ভীতিকর কিছু অভিজ্ঞতা তাদের বানিয়েছে নাস্তিক থেকে আস্তিক, করেছে অবিশ্বাসী থেকে বিশ্বাসী।
১) ম্যাথিউ বটসফোর্ডঃ
১৯৯২ সালে ম্যাথিউ বটসফোর্ডের সাথে এমন একটি দূর্ঘটনা ঘটে, যা তার জীবনকে আমূল বদলে দেয়। আটলান্টায় অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁর বাইরে তার মাথায় একটি পিস্তলের গুলি এসে আঘাত করে। তার মতে, ঐ স্থলেই তার “মৃত্যু” ঘটে এবং এমন এক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে শুধু নিস্তব্ধতা এবং একরাশ শূন্যতা। চারপাশে ছিল ভয় আর আর্তনাদ। ম্যাথিউ বলেন যে তাকে এমন একস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যাকে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তিনি এও উল্লেখ করেন যে তার হাতে শেকলের বেড়ি লাগানো ছিল এবং পায়ে ছিল কড়া।
সৌভাগ্যক্রমে ম্যাথিউর মৃত্যু তখনো এসে উপস্থিত হয় নি। তার সামনে যীশু এসে আবির্ভূত হন এবং জীবন রক্ষা করেন। তাকে বলেন, “তোমার সময় এখনো আসে নি।”
ম্যাথিউর সাথে এই দূর্ঘটনা ঘটবার পর অবাক হয়ে যান ডাক্তাররা। মাথায় গুলির আঘাত লাগবার পরও বেঁচে যাওয়াকে অলৌকিক ঘটনার সাথেই তুলনা দেন তারা। ২৭ দিন কোমায় থাকতে হয় ম্যাথিউকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, দূর্ঘটনা ঘটবার আগে সে ধর্মে বিশ্বাস করতো না কিন্তু যীশুর ওপর আস্থা ছিল। তবে ম্যাথিউ বটসফোর্ডের ভাষায়, “যীশু আমার একান্ত গুরু।”
সত্য নাকি মিথ্যা, এটি যাচাই করবার কোন উপায় নেই তবে ডাক্তাররা বলেন ম্যাথিউ যা বলছেন তা বানিয়ে বলছেন। এতো বড় একটি দূর্ঘটনা থেকে যে বেঁচে ফিরে আসতে পারে, তাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস সে করতেই হবে! এ নিয়ে ম্যাথিউ বটসফোর্ডের একটি সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়। জানতে হলে ক্লিক করতে পারেন এই লিংকে।
২) জেনিফার পেরেযঃ
ম্যাথিউ বটসফোর্ডের মতোই জেনিফার পেরেয একজন অবিশ্বাসী ছিলেন। ১৫ বছর বয়সে কিশোরী জেনিফারের সাথে এমন কিছু ঘটে, যা তার বিশ্বাসকে আমূল বদলে দিতে বাধ্য করে। জেনিফার একটি ক্রিশ্চিয়ান পরিবারেই পালিত হচ্ছিলো। তবে বেশিরভাগ সমবয়সীদের মতোই পিতামাতার ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে দ্বিমত পোষণ করে সে। বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এইসময় বিপথে যাওয়া কিছু বন্ধুবান্ধবও জুটে যায় তার। ড্রাগ, নেশাজাতীয় পানীয়, জুয়া ইত্যাদি নানা ধরণের খারাপ অভ্যাসের সাথে যুক্ত হয়ে যায় কিশোরী জেনিফার।
এক রাতের কথা। জেনিফারের এক বন্ধু তাকে রাতে ঘুরতে যাবার বাহানায় নেশাজাতীয় কিছু সেবন করিয়ে দেয়। মাত্রাটা একটু বেশি কড়া হয়ে যাবার কারণে জেনিফার অজ্ঞান হয়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে সেখানে পুলিশ এসে যায়। তা না হলে হয়তো ঐ বন্ধুর হাতেই সতীত্ব হারাতে হতো কিশোরী জেনিফারকে।
হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বেশ কয়েকদিন অজ্ঞান থাকার পর জেনিফার যা বলে, তা শুনে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। জেনিফারের ভাষায়,
“আমি দেখলাম যে আমার আত্মা শরীর থেকে বেরিয়ে এসেছে। চারপাশে সবাই যারা ঘিরে ছিলেন, সবাইকে দেখতে পেয়েছি। কথা বলতে চেয়েছি, ছুঁতে চেয়েছি, কিন্তু পারি নি। এমন সময় লাল কাপড় পরিহিত দুজন অদ্ভুতদর্শন ব্যক্তি আমায় নিতে এলেন। চমৎকার একটি জায়গায় গেলাম ওদের সাথে। সেটা ছিল স্বর্গ। ঈশ্বর আর যীশু, দুজনকেই দেখতে পেলাম আমি। একে অপরের সাথে কথা বলছিলেন।
আমি গ্যাব্রিয়েল আর মিকাইলকেও দেখতে পেলাম। ওদের মাথায় চকচকে স্বর্ণ দিয়ে নাম খোদাই করা ছিল। হঠাত গ্যাব্রিয়েল আমাকে নিয়ে গরম চুল্লীর মতো একটা জায়গায় গেলেন। সেখানে মানুষ কষ্টে কাৎরাচ্ছে, চিৎকার করছে, শাস্তি কমানোর জন্য আর্জি জানাচ্ছে। শয়তানের অনুসারীরা, পাপী অপরাধীরা সেখানে সাজা ভোগ করছে। গ্যাব্রিয়েল আমাকে তা দেখিয়ে বললেন যে আমার সময় এখনো আসে নি। সৌভাগ্যবতী আমি। পৃথিবীতে ফিরে যদি সৎপথে না চলি, তাহলে নরক ছাড়া আমার আর কোথাও জায়গা হবে না।”
অবাক হয়ে জেনিফারের কথা শুনছিলেন সবাই। এও কি সম্ভব? তবে ডাক্তাররা বলেন মাদকের মাত্রা এতোই বেশি ছিলো যে জেনিফার অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখেছে, যেখানে সে নিজেকে স্বর্গ আর নরকে গিয়েছে বলে দাবী করছে। বস্তুত এমন কিছুই ঘটে নি। তবে জেনিফার পেরেয তার এই দ্বিতীয় জীবনের জন্য ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। সে এখন পুরোমাত্রায় বিশ্বাসী।
গল্পগুলো সত্য নাকি মিথ্যা- তা যাচাই করার কোন উপায় নেই। তবে একটা কথা সত্য। খারাপ কাজের ফলাফল কখনো ভালো হয় না। প্রতিদান ভোগ করতেই হয়।
(এরকম আরো কিছু মানুষের অভিজ্ঞতা জানতে হলে, ক্লিক করুন এই লিংকে)