বাংলাদেশ দলে তিনি এসেছিলেন অনেক আশার প্রদীপ হয়ে। একজন পিওর হার্ডহিটারের অভাব বাংলাদেশ দলে বহুদিনে। আফতাব আহমেদের পর সেই অর্থে হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ পায়নি। জিয়াউর রহমানকে দিয়ে চেষ্টা করানো হয়েছিল, কিন্তু ঝলক দেখিয়ে নিভে গেছেন তিনি। সাব্বিরের উপর তাই প্রত্যাশার পারদটা ছিল একটু বেশিই। সেই প্রত্যাশাই কি তবে কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাঁর জন্য? ব্যাটিংয়ের চেয়ে যে মাঠের বাইরের অপ্রীতিকর ঘটনার কারণেই বারবার খবরের শিরোনাম হচ্ছেন তিনি।
সর্বশেষ তোলপাড় জাতীয় লীগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে এক কিশোর দর্শকের গায়ে হাত তোলার ঘটনা নিয়ে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, আউট হয়ে ফেরার পথে এক কিশোর দর্শক সাব্বিরকে উদ্দেশ্য করে ‘ম্যাও’ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যাচ চলাকালীন সময়েই গ্যালারিতে উপস্থিত এক পরিচিতের সাহায্যে ওই ক্ষুদে দর্শককে সাইটস্ক্রীনের সামনে নিয়ে গায়ে আঘাত করেন সাব্বির।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে তাঁর পরিণত আচরণবোধ নিয়ে। মাঠে একজন খেলোয়াড়কে অনেক কথাই হজম করে যেতে হয়। বিশেষ করে রানের মধ্যে না থাকলে কিংবা দুঃসময়ে দর্শকেরা নানান ধরণের মন্তব্য করবেন, ক্রিকেট খেলায় এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক ব্যাপারটাকেই কেন স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছেন না সাব্বির? দর্শক যাই বলে থাকুন না কেন, একজন ক্রিকেটারের কোন অধিকার নেই দর্শকের গায়ে হাত তোলার! আর অধিকার বহির্ভূত অন্যায় এই কাজটি করেই তার মাশুল গুণতে হচ্ছে এবার সাব্বিরকে।
নতুন বছরের প্রথম দিনেই সাব্বিরের জন্য শাস্তি ঘোষণা করেছে বিসিবি। সাব্বিরের অপরাধটিকে গুরুতর অপরাধ বিবেচনা করে বেশ কঠিন শাস্তিই দিয়েছে ক্রিকেটারদের অভিভাবক সংস্থাটি। বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ, নগদ ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জুটেছে তার কপালে।
এবারই প্রথম নয়, সাব্বিরের এমন অর্থদণ্ডের ঘটনা আছে এর আগেও। আর সবটাই নিজের দোষে। বারবার তিনি এমন আচরণ করছেন, যার কারণে তাকে শাস্তি দিতে বাধ্য হচ্ছে বিসিবি। এর আগে ২০১৬ সালের বিপিএলেও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। সেবার জরিমানা দিতে হয়েছিল ১২ লাখ টাকা। নিজের বাজে আচরণের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন সদ্য সমাপ্ত বিপিএলেও। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে এবারের বিপিএলে খেলা সাব্বির আম্পায়ারকে গালি দিয়ে জরিমানা গুনেছিলেন ম্যাচ ফি’র ৪০ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ছিল প্রায় দেড় লাখ টাকা। আর এবার তো জরিমানা করা হল পুরো ২০ লাখ টাকাই।
সাব্বিরের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ শেষ হচ্ছে না এখানেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাকে, সেখান থেকেও তার আয় হতে পারত বিপুল অঙ্কের অর্থ। বিসিএলে খেলে আয় করতে পারতেন প্রায় ২ লাখ টাকা, আর জাতীয় দলের সেনসেশন হিসেবে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের এক মৌসুম খেলেও আয় হত প্রায় ৪০ লাখের মত। সাথে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়ায় ওইখান থেকে ক্ষতি হবে বছরে ২৪ লাখ টাকা। সব মিলে তাই প্রায় কোটি টাকার ঝটকাই লেগেছে এই ব্যাটসম্যানের গায়ে।
কেবল ঘরোয়া ক্রিকেটেই নয়, সাব্বির তার বাজে আচরণের নিদর্শন রেখেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ডিমেরিট পয়েন্ট পাওয়া খেলোয়াড়ও তিনি। এরই মধ্যে নামের পাশে ৩ ডিমেরিট পয়েন্ট যুক্ত হওয়ায় সামনের অক্টোবরের মধ্যে আরেকটি ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে জাতীয় দল থেকে নিষিদ্ধ হতে পারেন কয়েক ম্যাচের জন্য। খেলার মাঠে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করা যে তার স্বভাবে পরিণত হচ্ছে, এসব ঘটনাই তার প্রমাণ।
সাব্বির রহমান একজন জাতীয় দলের খেলোয়াড়। একটি দলকে নয়, বরং একটি গোটা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। তার আচরণেও তাই সেরকম পরিণতবোধ থাকা উচিত। তার এরকম শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় আদতে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, এটুকু বুঝতে হবে তাকে। শিগগিরই তার মধ্যে এটুকু বোধ আসলে তার ও দলের জন্যই ভালো, নাহলে হয়তো নিজের খামখেয়ালিপনাতেই হারিয়ে যাবে আরও একটি দুরন্ত প্রতিভা!