অবশেষে এসেই গেল নতুন আরো একটি বছর। পাওয়া না পাওয়া, সুখে দুঃখে কাটানো ২০১৭-কে বিদায় দিতেই হচ্ছে আমাদের। তাই বলে কি নতুন বছরকে আমরা বরণ করে নেব না? নিশ্চয়ই নেব। গতরাত থেকেই যারা কান পেতেছিলেন, তারা নিশ্চয়ই শুনতে পেয়েছেন পটকা, বাজি ইত্যাদির শব্দ। প্রশাসন যত ব্যবস্থাই নিক না কেন, উদযাপন থেকে যেন কাউকে নিরস্ত করার কোন সুযোগ নেই। অনেকেই নানা উৎসাহ উদ্দীপনা ও নতুন নতুন শপথের সাথে শুরু করেছেন ২০১৮ সালকে। আসুন, প্রিয়লেখার পাতায় আজ জেনে নিই বিশ্বের নানা দেশে নতুন বছর বরণ করতে কি কি অদ্ভুত রীতিনীতি পালন করা হয়ঃ
১) স্পেনে রাত ১২টা বাজবার পর থেকেই উৎসাহী মানুষ তাদের হাতে ১২টি আঙুর নিয়ে নেন। ঘন্টার ধ্বনির সাথে সাথে প্রতি মিনিটে একটি করে আঙুর মুখে পুরতে শুরু করেন। প্রতিটি আঙুরের সাথে যুক্ত হয় নতুন একটি করে ইচ্ছা।
২) স্কটল্যান্ডের স্টোনহ্যাভেনে রাত ১২টার পর থেকেই আগুনে গোলক নিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে। চারপাশে এই গোলক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রীতিমত মার্চ পাস্ট করতে শুরু করে তারা। রীতিটি এসেছে ভাইকিংদের কাছ থেকে। দুর্বল চিত্তের মানুষের জন্য এই মার্চ দেখা যেমন নিষেধ, ঠিক তেমনি প্রশিক্ষিত ছাড়া এটি কেউ করতেও পারবেন না।
৩) মধ্যযুগীয় আমলে তুরস্কে লাল রংকে খুব বেশি ভালো চোখে দেখা হতো না। কারণ, মানুষ মনে করত যে লাল রং দূর্ভাগ্য আর অশনি সংকেত বয়ে নিয়ে আসে। তবে বছরের প্রথম দিনে লাল রং পরিধান করলে বছরটা ভালো যাবে, এমন একটি বিশ্বাস তখন থেকেই ছিল। তাই তো আজও বছরের পয়লা দিনে লাল রঙের অন্তর্বাস পরিধান করে তুরস্কের অধিবাসীরা। এই সময় দেদারসে বিক্রি হতে থাকে লাল রঙের বাহারী সব অন্তর্বাস। নারী পুরুষ সকলেই মহাসমারোহে নতুন বছর শুরুর আগে থেকেই দোকানে হানা দিতে শুরু করে।
৪) রোমানিয়াতে অদ্ভুত এক রীতি পালন করেন সেখানকার অধিবাসীরা। নতুন বছরের প্রাক্কালে তারা নিজেদের গবাদি পশুর ফিসফিসানি শুনতে চেষ্টা করেন। এর মাঝে কেউ যদি এই ফিসফিসানির অর্থ বুঝে উঠতে পারেন, তাহলেই কেল্লা ফতে! নতুন বছর মহাসমারোহে কাটবে তার জন্য।
৫) ভেনিসের সেন্ট মার্ক’স স্কয়ার শুধুমাত্র আতশবাজির জন্যই বিখ্যাত নয়, বরং এটি চমৎকার একটি রীতি পালনের জন্যও বেশ প্রসিদ্ধ। প্রায় ৭০,০০০এরও অধিক আগ্রহীরা নতুন বছরের প্রাক্কালে এসে ঘণ্টাধ্বনির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ঘণ্টার ঢং ঢং ধ্বনি শুনলেই একে অপরকে আলিঙ্গন করে চুম্বন এঁকে দেন ঠোঁটে। একে ‘কিস্যাথন’ (Kissathon) নামে অভিহিত করা হয়।
৬) নতুন বছরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হবে না, তাই কি হয় নাকি? তবে নাও তো হতে পারে, তাই না? ইকুয়েডরের অধিবাসীরা তাই নতুন বছরের প্রাক্কালে অদ্ভুত একটি রীতি পালন করেন। খালি একটি স্যুটকেস নিয়ে তারা ঘরের বাইরে বের হয়ে যান। সমগ্র ব্লক চক্কর দেবার পর কোন প্রতিবেশী যদি ঘরের পর্দা উঠিয়ে না দেন, তাহলে মনে করতে হবে যে নতুন বছর অনেক অনেক ভ্রমণ নিয়ে আসছে।
৭) নতুন বছরে রাশিয়ানরা অদ্ভুত একটি রীতি পালন করে থাকে। তারা বৈকাল হ্রদের নিচে একটি গর্ত খুঁড়ে সেখানে একটি গাছের চারা পুঁতে দিয়ে আসে। তবে একটি কথা। প্রশিক্ষিত ডুবুরীরাই কেবল এতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
৮) নতুন বছরের শুরুতে রোমানিয়ানরা মজাদার একটি রীতি পালন করে থাকে। তারা নিজেদের শরীরকে ভাল্লুকের মতো একটি পোষাকে আবৃত করে এবং প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাচতে শুরু করে। এতে করে সকল অমঙ্গল ও শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায় বলে তাদের বিশ্বাস।
রোমানিয়ানরা আরো একটি রীতি পালন করে থাকে। একে বলা হয় ‘ছাগলের নাচ’ (The Dance Of The Goat). অনেকে মৃত ছাগলের মাথা নিজেদের মস্তকে পরিধান করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাচতে শুরু করে।
৯) চিলির টালকাতে নতুন বছরের আগমন উপলক্ষ্যে সেখানকার অধিবাসীরা মোমবাতি নিয়ে চলে যায় স্থানীয় কবরস্থানে। কারণ, নতুনকে যতই স্বাগত জানানো হোক না কেন, পুরনো বন্ধুদের তো আর ছেড়ে যাওয়া চলে না। কেউ কেউ সারারাত সেখানে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সাথে সাথে মধ্যপান করে থাকেন এবং মৃতের প্রতি শান্তি কামনা করেন।
১০) দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইতালির অধিবাসীরা নতুন বছরের আগমন উপলক্ষ্যে মজাদার এক কাণ্ড করে থাকে। ঘরের যতো পুরনো আসবাব রয়েছে, তা জানলা দিয়ে ফেলে দিতে শুরু করে। এর ফলে নতুন বছর আনন্দ ও শান্তিতে কাটবে বলে তাদের বিশ্বাস।
এছাড়াও বিশ্বের আরো নানাদেশে অনেক মজার ও অদ্ভুত উপায়ে পালন করা হয়ে থাকে নতুন বছরের উদযাপন। একটু গুগল করলেই জেনে নিতে পারবেন অদ্ভুত সব কান্ডকারখানা সম্পর্কে। থাকুন প্রিয়লেখার সাথেই।
(ফিচারটি তৈরি করতে সাহায্য নেয়া হয়েছে এই সাইটের)