হোয়াইট হাউজ, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের বাসভবন। একে ঘিরে সাধারণ মানুষের আগ্রহও তাই চরমে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তিটি যেখানে থাকেন, সেই জায়গাটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। আজ আপনাদের জন্য থাকছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজ সম্পর্কে কিছু অজানা ও চমকপ্রদ তথ্য।
- আজ যেটিকে আমরা সবাই হোয়াইট হাউজ নামে চিনি, শুরুর দিকে এটি হোয়াইট হাউজ নামে পরিচিত ছিল না। ১৯০১ সালে টেডি রুজভেল্ট সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এর ‘হোয়াইট হাউজ’ নামকরণ করেন। এর আগে ‘প্রেসিডেন্টস প্যালেস’, ‘দ্য প্রেসিডেন্টস হাউজ’, ‘এক্সিকিউটিভ ম্যানশন’ সহ নানা নামে পরিচিত ছিল হোয়াইট হাউজ।
- হোয়াইট হাউজ বানানো শেষ করতে সময় লেগেছিল ৮ বছর। তখনকার সময়ে খরচ পড়েছিল ২ লাখ ৩২ হাজার ৩৭২ ডলার, বর্তমান সময়ের হিসেবে যা প্রায় ৪০ লাখ ডলারের কাছাকাছি।
- হোয়াইট হাউজের নকশা করেছিলেন আইরিশ বংশোদ্ভূত স্থপতি জেমস হোবান। ১৭৯২ সালে এক প্রতিযোগিতায় জিতে তিনি হোয়াইট হাউজের নকশা করার সুযোগ পান। ডাবলিনের একটি ভিলা, লেইন্সটার হাউজের আদলে তিনি হোয়াইট হাউজের নকশা করেন।
- ১৬৮ ফুট লম্বা ও ৮৬ ফুট প্রশস্ত হোয়াইট হাউজ ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দালান ছিল।
- হোয়াইট হাউজে ১৩২ টি কক্ষ, ৩৫ টি বাথরুম, ৪১২ টি দরজা, ১৪৭ টি জানালা, ২৮ টি ফায়ারপ্লেস, ৮ টি সিঁড়ি ও ৩ টি এলিভেটর আছে।
- প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন হোয়াইট হাউজের জন্য সাইট নির্ধারণ করলেও তিনি হোয়াইট হাউজে বাস করে যেতে পারেননি। হোয়াইট হাউজ বানানো শেষ হওয়ার ১ বছর আগেই, ১৭৯৯ সালে ওয়াশিংটন মৃত্যুবরণ করেন। হোয়াইট হাউজের প্রথম বাসিন্দা তাই আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস ও তাঁর স্ত্রী অ্যাবিগাইল। তবে হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনের একটি বড় ছবি টানানো ছিল।
- ১৮০০ সালের ০১ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট অ্যাডামস ও তাঁর স্ত্রী যখন হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করলেন, তখনো হোয়াইট হাউজ সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি। যে কারণে পূর্ব দিকের একটি কক্ষকে অ্যাবিগাইল তাঁর জামা কাপড় শুকানোর কাজে ব্যবহার করতেন।
- ১৯৩৩ সালে ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট হোয়াইট হাউজে আসার পর এটি ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রথম হুইল চেয়ার বান্ধব সরকারি ভবনে পরিণত হয়।
- ১৮৯০ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউজে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। ১৮৯১ সালে বেঞ্জামিন হ্যারিসনের সময়ে হোয়াইট হাউজে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ আসে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের পরিবার সুইচ স্পর্শ করতে এতটাই ভয় পেত যে সারা রাত লাইট অন রেখেই ঘুমাত তারা।
- ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট হোয়াইট হাউজের ভেতরে তাঁর পোলিও থেরাপি নেয়ার জন্য একটি ইনডোর সুইমিং পুলের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭০ সালে রিচার্ড নিক্সন সেটিকে বর্তমান প্রেস কনফারেন্স রুমে পরিণত করেন। ১৯৭৫ সালে প্রেসিডেন্ট জেরালড ফোর্ড আবারো সুইমিং পুলের ব্যবস্থা করেন, তবে সেটি ছিল আউটডোর পুল।
- হোয়াইট হাউজের বেজমেন্টও একটি মিনি মলের মত। ফুলের দোকান, ডেন্টিস্টের চেম্বার, চকলেটের দোকান, রংয়ের দোকান- কি নেই সেখানে!
- মজার তথ্য হচ্ছে, হোয়াইট হাউজের প্রথম বাসিন্দাদের তাদের খাবার, মুদি দ্রব্য, টয়লেট্রিজ জিনিসপাতি- এসবের জন্য টাকা দিতে হত! প্রেসিডেন্টের বেতন থেকেই ওই টাকা কেটে রাখা হত।
- হোয়াইট হাউজের ভেতর প্রথম মুভি দেখার ব্যবস্থা করেন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন, ১৯১৫ সালে। মুভিটি ছিল ‘বার্থ অফ অ্যা ন্যাশন’।
- বিখ্যাত অভিনেতা টম হ্যাঙ্কসের উপহার দেয়া একটি কফি মেকার সযত্নে রাখা আছে হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরে।
- এটিই বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধানের সরকারী বাসভবন, যেটি দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে দর্শন করতে পারেন।
- নতুন প্রেসিডেন্টের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্থানান্তরের জন্য হোয়াইট হাউজের কর্মচারীরা মাত্র ১২ ঘণ্টা সময় পান।
- উইনস্টন চার্চিল একবার এক অদ্ভুত দাবি করেছিলেন। তিনি নাকি হোয়াইট হাউজে আব্রাহাম লিংকনের প্রেতাত্মা দেখতে পেয়েছিলেন! এছাড়া ডাচ রাণী উইলহেলমিনাও একই দাবি করেছিলেন।
- ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউজে কোন পানির টেপ ছিল না। প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন সর্বপ্রথম পানির টেপের ব্যবস্থা করেন।
- হোয়াইট হাউজ রিপেইন্ট করার জন্য প্রায় ৫৭০ গ্যালন সাদা পেইন্টের দরকার হয়।
- প্রেসিডেন্টদের খেয়াল মোতাবেক হোয়াইট হাউজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পশুর জায়গাও হয়েছে। উড্রো উইলসন হোয়াইট হাউজে রেখেছিলেন ভেড়া, আব্রাহাম লিংকন ছাগল, থিওডোর রুজভেল্ট সাপ, ক্যালভিন কুলিজ সিংহ ও হার্বার্ট হুভার কুমির পালতেন হোয়াইট হাউজে।
- অন্যতম বিলাসবহুল ভবন হলেও সব প্রেসিডেন্ট যে হোয়াইট হাউজে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন, তা না। প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান যেমন এটিকে ‘গ্ল্যামারাস প্রিজন’, ‘দ্য গ্রেট হোয়াইট জেল’ নামেও অভিহিত করেছিলেন!
- হোয়াইট হাউজে যেই বিখ্যাত জগিং ট্র্যাক আছে, সেটি তৈরি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। ওজন কমানোর জন্য তিনি এই জগিং ট্র্যাক বানিয়েছিলেন।
- ১৯৯৫ সালে ভিয়েতনামের এক ইঞ্জিনিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় হুবহু হোয়াইট হাউজের একটি রেপ্লিকা তৈরি করেন। ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’ মুভিতে এই ভবনটি হোয়াইট হাউজ হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছিল।
- প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডি যখন একান্ত গোপন সময় কাটানোয় ব্যস্ত থাকেন, তখন যেন কেউ তাদের বিরক্ত না করে, সেজন্য হোয়াইট হাউজে একটি কোড প্রচলিত আছে। কোডটি হল- ‘তারা বসনিয়া সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছেন’!