সৌন্দর্য পিপাসুদের অন্বেষণ এবং হারিয়ে যাওয়ার মত পৃথিবীতে অসংখ্য জায়গা আছে। কিন্তু, এমন কিছু জায়গার নামও অনুসন্ধানে পাওয়া যায় যা জনসাধারনের দৃষ্টির সম্পূর্ণ অন্তরালে, যেখানে অনুপ্রবেশের একটি মাত্র পরিণতি, মৃত্যু অথবা নিখোঁজ। মহাবিশ্ব থেকে মহাকাশ পর্যন্ত আজ মানুষের অনুসন্ধানের নিরিখে সেখানে আজও এমন জায়গার অবস্থান রয়েছে যা পৃথিবীর বুকে থেকেও কার্যত অদৃশ্য, ভাবতে সত্যি অবাক লাগে। নাইবা পড়লো পদধূলি ছবিতেই আজ পরিচয় হয়ে যাক পৃথিবীর নিষিদ্ধ ১৫টি চমকপ্রদ স্থান এর সাথে।
১৫। বোহেমিয়ান গ্রোভ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
অজানা ও নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তি দ্বারা পরিচালিত ক্লাবের অধীনে সমগ্র অঞ্চলটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তি হিসেবে গণ্য যা ১৮৯৯ সাল থেকে কাজ করছে। এই ক্লাবের উল্লেখযোগ্য কাজের মাঝে রয়েছে সারা বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের স্বাগত জানানো। ১৯২৩ সাল থেকে অনেক ব্যবসায়ী, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং উদ্যোক্তারা এই ক্লাবের একটি অংশ হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই অঞ্চলে এমন একটি হ্রদ রয়েছে যার অস্তিত্ব প্রায় ১০০ বছরের উপর গোপন রাখা হয়েছে। কথিত রয়েছে এখানে এমন এক শস্যভূমি রয়েছে যেখানে শয়তান বাস করে, ও শয়তান উপাসকদের তীর্থ ভূমি। আজ পর্যন্ত কোনও সাংবাদিককে বোহেমিয়ান গ্রোভে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
১৪। হার্প, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
HAARP-High Frequency Active Auroral Research Program , ১৩ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত রহস্য আচ্ছাদিত এলাকা, যা ১৯৯৭ সালে আলাস্কার এক নির্জন উপত্যকায় স্থাপন করা হয়। অনেকেই বিশ্বাস করে যে এই এলাকাটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদদের জন্য স্বর্গ বিশেষ যেখানে নানা প্রোগ্রাম নিয়ে গবেষণা চলছে। কথিত আছে এখান থেকে গবেষকরা মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ করতে, যে কোন উপগ্রহ বন্ধ করতে, এমনকি বিশ্বব্যপী কৃত্রিম ভূমিকম্প, খরা, হারিকেন, বন্যা বা মহামারী ঘটাতে সক্ষম।
১৩। মেজহজিরি, রাশিয়া
কিছু আনুষ্ঠানিক সূত্রের মাধ্যমে জানা যায় যে এই “সর্বাধিক বদ্ধ” শহর প্রজাতন্ত্রের বাশকোস্টোস্টানে অবস্থিত। এখানে একটি ভূগর্ভস্থ রাজধানী নির্মাণ করা হচ্ছে বলে বিশ্বাস করা হয়। কোন গোপন গবেষণা কেন্দ্র, পারমাণবিক শক্তি সুবিধা বা শিল্প অথবা লুকোনো কোন প্রোগ্রাম আছে কি না তা এখনও অজানা, সবার মনেই প্রশ্ন সত্যিই সকলের চোখের আড়ালে কি ঘটে চলেছে মেজহজিরি’র (Mezhgorye) অভ্যন্তরে?
১২। ক্রাউন শহর, রাশিয়া
সেন্ট পিটার্সবার্গ রক্ষার জন্য নির্মিত, এই শহর প্রায় সময়ই পর্যটকদের স্বাগত জানায়। এখানে এমন অনেক দুর্গ রয়েছে যা প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে নির্মিত। এই সমস্ত দুর্গের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সাহসিকতার ইতিহাস ও বিজয়গাঁথা: ক্রোনস্লোট, সিটাডেল, প্রিন্স মেন্সিলকভ এবং আরও অনেক জানা অজানা। এ সকল দুর্গের কিছু অংশ পর্যটকদের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত হলেও কিছু অংশ সর্বসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ। কারণ হিসেবে বলা হয় যে সে সকল দুর্গ নিরাপদ নয়।
১১। মাউন্ট এথোস, গ্রিক মেসিডনিয়া
এই পর্বতমালাটি ২০টি মঠের আবাসস্থল হলেও দুঃখজনকভাবে সত্য, সকলের এখানে প্রবেশের ও দর্শনের অনুমতি নেই। নারীদের প্রবেশ এই এলাকায় আইনত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং আইন ভাঙ্গার দায়ে এক বছর কারাদণ্ড হওয়ার বিধান রয়েছে।
১০। যেখানে সংরক্ষিত কোকাকোলার রেসিপি, কেপলার, জর্জিয়া,যুক্তরাষ্ট্র
এমনটি বিশ্বাস করা হয় যে এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র দুই জন লোকই ‘কোকাকোলা’ নামক সুপরিচিত সোডার গোপন রেসিপিটি জানে এবং তারা উভয়েই ভিন্ন ভিন্ন প্লেনে ভ্রমণ করে, যেন দুর্ঘটনাবশত কেউ যদি মারা যায় তবে অন্যজন যেন রেসিপিটি রক্ষা করতে বেঁচে থাকতে পারে। রেসিপিটি কোকাকোলা কোম্পানির সদর দপ্তরে একটি নিরাপদ লকারে সংরক্ষিত।
৯। ড্যানাকিল মরুভূমি, ইথিওপিয়া
ইথিওপিয়ার সীমান্ত কখনো আঞ্চলিক যুদ্ধ থেকে মুক্তি পায়নি, ঠিক সেখানেই অবস্থান ড্যানাকিল মরুভূমির যেখানে নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটনদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে ইথিওপিয়ার এই অঞ্চলে হয়তো সেই আদি মানবদের বাড়ি যাদের মনুষ্য জাতির পূর্বপুরুষ বলে গণ্য করা হয়। বিজ্ঞানীদের ভাষায় তাদের বলা হচ্ছে গ্রেট এইপ। ড্যানাকিল মরুভূমি এমন একটি স্থান যেখানে লুসি নামক অস্ট্রালোপিথেকাস এফারেনসিসের দেহাবশেষও খুঁজে পাওয়া গেছে।
৮। মোতো কাউন্টি, চীন, তিব্বত স্বতন্ত্র অঞ্চল
এটি বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র ভূমি। কোন রাস্তা নেই যা এর দিকে যায়, বরং আপনাকে পায়ে হেঁটে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে হবে এবং এই মহিমামণ্ডল স্থানে পৌঁছাতে হবে।
৭। ওইমিয়াকোন, রাশিয়া
ঠান্ডায় তাপমাত্রা মাইনাস -৯০.১° ডিগ্রী ফারেনহাইট, এই শহরটি বিশ্বের শীতলতম শহরের মধ্যে অন্যতম যা পর্যটকদের ভ্রমনের চিন্তা থেকে দূরেই রাখে।
৬। জাভেরি উপজাতি রিজার্ভেশন, ব্রাজিল
এই বিশেষ উপজাতিটি সভ্যতা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন। এখানে বসবাসরত ১৫০ জন ভারতীয়র বেশিরভাগই বংশানুক্রমে দাসের সন্তান। তারা প্রকৃতির মাঝে বাস করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং বাইরের লোকদের সঙ্গ বিশেষ পছন্দ করে না। এই উপজাতির সভ্যতা বাচিয়ে রাখতেই এবং কিছুটা নিরাপত্তার কারণেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের জন্য এই এলাকাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
৫। পিটকেয়ার্ন্স আইল্যান্ড, ব্রিটিশ প্রাদেশিক এলাকা
এই দ্বীপে বসবাসরত ৫০ জন লোক রয়েছে যারা একরকম নিজ ইচ্ছেতেই সভ্যতা থেকে দূরে সরে রয়েছেন। তারা বেশিরভাগই এইচএমএস বাউন্টির জাহাজীদের বংশধর, বর্তমান নিবাসীদের পূর্বপুরুষরা শুধুমাত্র এই দ্বীপটিতে থাকার জন্যই এইচএমএস বাউন্টি জাহাজটি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। এই দ্বীপে পৌঁছানোর একটি নির্দিষ্ট উপায় আছে যার সন্ধান নিউজিল্যান্ড থেকে এখানে আসা নামমাত্র কয়েকটি জাহাজের জানা রয়েছে। বাকীদের জন্য আজও এই দ্বীপে প্রবেশাধিকার নেই।
৪। সিনসিনাটি সাবওয়ে, ওহায়ো, যুক্তরাষ্ট্র
এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় পরিত্যক্ত টানেল যা ২০ শতকে নির্মিত হয়েছিল। অত্যাধিক নির্মাণ ব্যয়ের কারণে নির্মাণ কাজ স্থগিত করা হয় এবং প্রজেক্টটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কথিত রয়েছে ভুল নির্মাণের কারণে সাবওয়েটি ভেঙে পড়েছিল যার ফলে অনেক শ্রমিক মারা গিয়েছিল। অনেকে আজও বিশ্বাস করে সে সকল মৃত শ্রমিকদের আত্মা এখনও পাতাল রেল স্টেশনে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু পর্যটকদের জন্য সুখবর হচ্ছে, প্রতি বছর মে মাসে যে কেউ এই স্থান পরিদর্শন করতে পারেন।
৩। মক্কা – মদিনা
যারা আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে তাদের পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনার মসজিদগুলির মহিমান্বিত সৌন্দর্য এবং এই পবিত্র শহরগুলির ধ্বংসাবশেষ দর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। অ-মুসলমানদের কঠোরভাবে পবিত্র শহরগুলিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং কেউ যদি জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করে তবে শরিয়া আইনের অধীনে সে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হবে।
২।কারাকোরাম হাইওয়ে
এই হাইওয়ে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক অবস্থানটাই এমন যে ভূমিধস ও তুষার ধসের কারণে প্রায় সময়ই মহাসড়কটি বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই পথে ভ্রমণ কোন কাজের কথা নয়।
১। সর্পদ্বীপ, ব্রাজিল
নাম হতেই খুব সুস্পষ্ট কি কারণে এই দ্বীপে কেউ বাস করে না। ব্রাজিলের সর্প দ্বীপ কে আপনি মৃত্যু বাগান বলে অভিহিত করতে পারেন। সম্পূর্ণ দ্বীপ মারাত্মক বিষাক্ত সাপে পরিপূর্ণ যার ফলে পর্যটক ভ্রমনের নেশায় সেখানে গিয়ে মৃত্যুর সাথে টক্কর দিবে এমন ভাবা নিতান্তই বাতুলতা। তাই বলে দুঃসাহসী অভিযাত্রীর সর্প দংশনে বিষে নীল হবার অনেক ঘটনাই শুনতে পাওয়া যায়। ল্যান্সহেড, বিশ্বের সব থেকে মারাত্মক ও বিষাক্ত সাপের দেখা ব্রাজিলের সর্প দ্বীপেই মেলে। তাই ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনগণের জন্য এই দ্বীপে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে।
আজকের আয়োজন এই পর্যন্তই। দ্রুত আপনাদের সামনে হাজির হবো নতুন ভাবে নতুন কোন বিষয়কে সামনে রেখে। ‘প্রিয়লেখার’ সাথেই থাকুন।
বিঃদ্রঃ- তথ্য ও ছবি ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত।