আমরা যারা সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে থাকি; যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ- অনেকেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে থাকি। আশির দশকে যখন ইন্টারনেটেরও আবির্ভাব হয় নি, তখন থেকেই ইনফরমেশন টেকনোলজির খাতে যারা কাজ করেন, তাদের কাছে হ্যাশের (#) অনেক বড় একটি অর্থ রয়েছে। মূলত, সামাজিক কোন সচেতনতা, কোন কিছুকে বড় আকারে ছড়িয়ে দেয়া, প্রচারণা, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু- ইত্যাদি নানা ধরনের বিষয়ে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমরাও অনেকে বুঝে না বুঝে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে থাকি।
২০১৭ সাল প্রায় শেষ হয়েই এলো। তবে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা কিংবা জয়রথ কখনো থামবে না, সেটি বলাই বাহুল্য। প্রিয়লেখার পাতায় আসুন আজ জেনে নিই, ২০১৭ সালে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে সেরা অন্যতম সেরা হ্যাশট্যাগ কোনগুলো ছিলঃ
১) #ScienceMarch:
২০১৭ সালের এপ্রিলের ২২ তারিখ দ্য মার্চ ফর সাইন্স বা বিজ্ঞানের দিকে পদযাত্রা ধারণাটি বিশ্বের নানা শহরে শুরু হয়। তবে যা ভাবা হয়েছিলো, ঘটনাটি তার চাইতেও অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পদযাত্রাটি মূলত বৈজ্ঞানিক কোন প্রমাণের বিষয়ে যখন জনগণের কাছে একটি পলিসি বা নীতিমালা তৈরি করে, সেক্ষেত্রে নিয়মনীতি কি হবে- সেটি নিয়ে শুরু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই হ্যাশট্যাগ প্রচলনের মাধ্যমে বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান নিয়ে যারা জনসংযোগ তৈরি করে থাকেন, চিন্তাবিদ ইত্যাদি নানা পেশার মানুষেরা অন্তর্ভুক্ত হন।
২) #BestCarcass:
টুইটারে এই হ্যাশট্যাগটি আলোড়ন তোলে হাঙরের আধখাওয়া একটি ডলফিনের শরীরের মাধ্যমে। প্রকৃতিতে টিকে থাকতে হলে প্রাণীদের নানাভাবে লড়াই করে বাঁচতে হয়। তবে তার মাঝেও একটি সৌন্দর্য রয়েছে। ঠান্ডায় জমে যাওয়া মৃত ব্যাঙের শরীর কিংবা শিকারী বাঘের তাড়া খাওয়া হরিণের মৃত লাশ- ইত্যাদি ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হলে একইসাথে মানুষ যেমন শিউরে ওঠে, ঠিক তেমনি এক ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুঁজে পায়। তাই এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে এটির প্রচলন।
৩) #ActualLivingScientist:
ডেভিড স্টিন নামক একজন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও অধিকার বিষয়ক বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম এই হ্যাশট্যাগের প্রচলন করেন। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন যে বেশিরভাগ আমেরিকানরাই একজন বিজ্ঞানীর সাথে পরিচিত হবার সময় ভালোভাবে সহজ হতে পারে না। তাই তিনি বিজ্ঞানীদের কাজ ও তাদের সাথে পরিচিত হবার জন্য এই হ্যাশট্যাগটি প্রচলন করেন। ম্যারি রবলিয়ার নামক একজন অনুসারী এই আইডিয়াটি খুব পছন্দ করেন এবং আস্তে আস্তে এই প্রচলনটি ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা তাদের নাম ও পরিচয়, কর্মক্ষেত্রের সাথে মানুষের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে শুরু করেন।
৪) #SciArt:
চিত্র, ভিজুয়াল গ্রাফিক্স, জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক আলোকচিত্র ইত্যাদি নানা বিষয়ে ছবি দেখলে আপনার মন নিশ্চয়ই ভালো হয়ে উঠবে? আমাদের মাথার ওপর ঝিলমিল করতে থাকা অজস্র তারকারাজি জানান দেয় তাদের কথা। এসবকিছুই ছবি তুলে রাখা যায়। বিজ্ঞানের চমৎকার এসব ছবি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্যই এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে।
৫) #MyOneScienceTweet:
টুইটারে মনের ভাব প্রকাশ করবার জন্য খুব বেশি জায়গা আপনি পান না। তাই নিজেদের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও কর্মক্ষেত্রের কথা একবাক্যের মাধ্যমে জানানোর জন্য চমৎকার এই হ্যাশট্যাগের প্রচলন করা হয় এই বছরেরই অক্টোবর মাসে। মিসৌরির এক পতঙ্গবিষয়ক (Entomologist) গবেষক প্রচলন করেন এই হ্যাশট্যাগের। একটি বাক্যের মাঝে আকর্ষনীয় সব তথ্য ও আবিষ্কার সম্পর্কে জানান দেয়া হয় এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে।
৬) #ScanAllFish:
অ্যাডাম সামার্সের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এই হ্যাশট্যাগটি খুব বেশি মানুষের নজর কাড়তে পারে নি, তবে এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে চমৎকার একটি কাজকে দৃশ্যপটে এনেছে অবশ্যই। পৃথিবীতে প্রায় ৩০ হাজারেরও অধিক মাছের সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য ও ছবি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে প্রচলন করা হয় এই হ্যাশট্যাগের।
৭) #SolarEclipse2017:
এই হ্যাশট্যাগটি বুঝবার জন্য কাউকে বিজ্ঞানী হতে হবে না। ২০১৭ সালের অন্যতম একটি বড় প্রেক্ষাপট ছিল এটি। সোলার একলিপসের সাথে যারাই এদিন পরিচিত হয়েছিলেন, তারা তাদের ছবি, চেক ইন, নানা ধরনের স্ট্যাটাস ইত্যাদির মাধ্যমে এই হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করেছিলেন। ক’দিনের জন্য হলেও পুরো পৃথিবী যেন বিজ্ঞান বিষয়ক হ্যাশট্যাগে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
(ফিচারটি তৈরি করতে সাহায্য নেয়া হয়েছে এই সাইটের)