ছোটবেলায় আমরা যখন চিত্রাঙ্কন করতাম, রঙে রঙে ভরিয়ে দিতে চেষ্টা করতাম আঁকা ছবিটিকে। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, গোলাপী- ইত্যাদি নানা রঙে রঙিন করে ফুটিয়ে তুলতে চাইতাম ছবিটিকে।
রঙ। হ্যা, এই রঙের মাধ্যমেই আমাদের শরীর ও মনে এক ধরনের প্রভাব পড়ে। কখনো তা ইতিবাচক, আবার কখনো তা নেতিবাচক। কিছু রঙ আছে বিষণ্ণতার প্রতীক হিসেবে, আবার কিছু রঙ একেবারে মনটাকে প্রসন্নতায় ভরিয়ে দেয়। আচ্ছা, কখনো কি এমনটা ভেবে দেখেছেন যে ঘরের বাইরে বের হলেই কেবল রঙ আর রঙ দেখতে পাবেন? বাড়ি ঘর, দোকান অফিস আদালত সব জায়গায় কেবল রঙের ছড়াছড়ি? কেমন হবে তাহলে?
আসুন, আজ প্রিয়লেখার পাতায় জেনে নিই এমনই কিছু রঙিন শহরের কথা, যেখানে শুধু রঙ আর রঙের হাট।
১) উইলেমস্টাড- কুরাচাওঃ
ভেনেজুয়েলার একটু উত্তর দিকে গেলেই পাওয়া যাবে ডাচ ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ড অব কুরাচাও। এর পেছনের ইতিহাস অনেক আকর্ষনীয়। ১৮ শতকের দিকে ডাচরা যখন এই অঞ্চল শাসন করতো, তখন এখানকার গভর্নর মাইগ্রেনের ব্যথায় বেশ কাবু ছিলেন। তখন তিনি ঠিক করলেন যে তার আশেপাশে যেসব দালানকোঠা থাকবে, সেখানে সাদা ব্যতীত অন্য যে কোন রঙ করা যাবে। কারণ, সাদা রঙ দেখলেই নাকি তার মাথার ব্যথাটা প্রকট হয়ে উঠতো। সে থেকে এই অঞ্চলে যেসব স্থাপনা তৈরি করা হলো, সেগুলো রাঙিয়ে দেয়া হলো চমৎকার সব রঙে। ওপরের ছবিটিই তার প্রমাণ, তাই না?
২) সিনক্যু টেরে- ইতালিঃ
ইউরোপীয় রেনেসাঁর মধ্যমণি ইতালি ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে ছুটি কাটানোর অন্যতম এক স্থান। চমৎকার সব চিত্রকর্ম, সুবিশাল সমুদ্রের ধারে বসে কান পেতে শোনা হাহাকার- এসবকিছুই যেন পৃথিবীর অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না। তবে ছবির মতো সুন্দর সিনক্যু টেরের কথা যেন একদম আলাদা। রঙের এরকম চমৎকার মিশেল অন্য কোথাও নেই। কোন একটি উঁচু দালানের ওপর দাঁড়িয়ে যদি আপনি পুরো শহরটিকে দেখার চেষ্টা করেন, অবাক হয়ে দেখবেন যে চারদিকে উজ্জ্বল সব রঙের ছড়াছড়ি। চোখ ধাঁধানো সব রঙের কারুকাজ মুহুর্তেই মন ভালো করে দিতে বাধ্য।
৩) পাতায়া- থাইল্যান্ডঃ
থাইল্যান্ডের কথা বলতে গেলে অবশ্যই চলে আসে পাতায়া বীচের কথা। হলিউড বলিউডের নামকরা সব অভিনেতা অভিনেত্রীরা এখানে যান সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পিছিয়ে নেই আমাদের দেশও। চমৎকার সব লোকেশন আর মন মাতানো সব স্পটের জন্য পাতায়া বিখ্যাত। তবে আরো একটি জিনিসের জন্য পাতায়া বিখ্যাত, সেটি ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না। আর তা হচ্ছে, রঙ। একদম মানানসই ও মন মাতানো রঙের মিশেলে তৈরি পাতায়া আপনার মনকে চাঙা করে দিতে পারে মুহুর্তেই।
৪) ভ্যালপারাইসো- চিলিঃ
কেবল ভ্যালপারাইসোর বর্ষীয়ান কবি পাবলো নেরুদার জন্যই এই শহর বিখ্যাত নয়। তার সাথে রয়েছে ছবির মতো সাজানো বাড়িঘরের সৌন্দর্য। পাহাড়ের ওপর সাজানো বাড়িগুলো দেখলে আপনার মনে হবে ঠিক যেন ইজেল থেকে একটি সুন্দর ছবি চলে এসেছে বাস্তবের দুনিয়ায়। পাশেই রয়েছে সমুদ্র। বয়ে চলা পানি আর রঙের বাহার- দুটোর মিশেল আপনাকে নিয়ে যাবে বহুদূরের এক স্বপ্নরাজ্যে।
৫) জয়পুর- ভারতঃ
অনেক তো পশ্চিমে ভ্রমণ হলো। চলুন, এবার একটু পাশের দেশ ভারত থেকে ঘুরে আসা যাক। জয়পুর শহরটি বিখ্যাতই হয়েছে এর চিৎকার করে নিজেকে প্রকাশ করা চমৎকার সব বাহারী রঙের জন্য। প্রতি বছর এই অঞ্চলে ট্যুরিস্টরা আসেন রঙ উপভোগ করতে। সে সাথে রয়েছে রাজ-রাজরাদের মহল, তাদের চমৎকার সব নির্মাণ। এই শহরের মানুষের মনেও যেন রয়েছে রঙ। তাই তো নানা পেশার নানা বয়সের মানুষ নিত্যদিন বিলিয়ে যান অজস্র রঙ এই শহরের প্রতিটি কোণায়।
সবশেষে একটি কথা। যতই ভ্রমণ করুন না কেন বিদেশে, মাতৃভূমির চাইতে আপন আর রঙিন কোনকিছুই হতে পারে না। দেশকে ভালবাসুন, দেশের মানুষকে ভালোবাসুন, ভালবাসুন এই দেশের মাটির সোঁদা গন্ধ। অবাক বিস্ময়ে হয়তো দেখবেন, আমাদের দেশেও রঙের কোন অভাব নেই। মাতোয়ারা হয়ে উঠুন পৃথিবীর অপার এই রঙিন বিস্ময়ের সাথে।
আপনাকে স্বাগতম।
(ফিচারটি লিখতে সাহায্য নেয়া হয়েছে এই সাইটের)