অফিসে বসে কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন? খানিক সময় পরপর হয়তো এক আধবার আড়মোড়া ভাঙছেন, সহকর্মীদের সাথে গল্প করছেন কিংবা কফির পেয়ালায় চুমুক দিচ্ছেন? আসলে একটানা কাজ করতে করতে এ সবকিছুই হয়ে থাকে। তবে কেমন হবে যদি এই সময়টুকুই আমরা বাঁচিয়ে নিতে পারি গ্যাজেটের সাহায্যে? স্বল্প দামে এবং আকর্ষনীয় এসব অফিস গ্যাজেট যেমন কাজের মুহুর্তগুলো আকর্ষনীয় করে তুলবে, ঠিক তেমনি বাঁচিয়ে দেবে বেশ খানিকটা সময়। আসুন, তাহলে প্রিয়লেখার পাতায় আমরা চমৎকার কিছু অফিস গ্যাজেট সম্পর্কে জেনে নিইঃ
১) অফিসাইজারঃ
নামটি একটু অদ্ভুত লাগতে পারে কিন্তু যখন এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন যে এরচেয়ে যুতসই নাম আর কিছুই হতে পারে না। একটানা ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপের সামনে কাজ করছেন। মাঝে মাঝে পা দোলাচ্ছেন কিন্তু মনে হচ্ছে, নাহ! একটু হেঁটে নিই।
অফিসাইজার আপনার হাঁটার এই মুহুর্তগুলো বাঁচিয়ে দেবে। পায়ের নিচে এই গ্যাজেটটি রেখে অনুভব করতে পারবেন হাঁটার অনুভূতি। একইসাথে বেশ খানিকটা সময়ও বাঁচবে। আপনার জেনে আরো ভালো লাগবে যে, এটিই এই পর্যন্ত তৈরি একমাত্র অফিস গ্যাজেট যেটি পায়ের কাজ ও এর বিভিন্ন মাসলগুলো আরামদায়ক করবার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
২) ডেস্ক অর্গানাইজারঃ
টেবিলের ওপর মোবাইল, ফাইল, ল্যাপটপ, কলম, চার্জার, পেপার ওয়েট ইত্যাদি আরো এবং আরো অনেক কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হয়তো অনেক সময় খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্মও হতে হয়। তবে সবকিছু যদি একসাথে সাজানো থাকে, তাহলে কেমন হবে? সময় যেমন বাঁচবে, ঠিক একইসাথে কাজ করার পরিবেশটিও সুন্দর হবে। ডেস্ক অর্গানাইজার দিচ্ছে আপনাকে ঠিক এই সুবিধাটি।
৩) ইউএসবি হিটিং ব্লাংকেটঃ
অফিসের এসির বাতাসে অনেকসময়ই হয়তো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। তাছাড়া এই শীতকালে সমস্যাটা আরো বেড়েও যেতে পারে। ইউএসবি হিটিং ব্লাংকেটের সাহায্যে আপনার এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। মূলত, এই কম্বলের ভেতরে রয়েছে একটি উষ্ণ আরামদায়ক প্যাড। কম্বলটি গায়ে জড়ানোর সাথে সাথে প্লাগ অন করে দিলে মুহুর্তেই আপনার সমস্ত শরীরে উষ্ণতা চলে আসবে। চেয়ারে বসে কাজ করতে করতে বেশ আরামেই থাকবেন আপনি।
(তবে চুপি চুপি বলি, জরুরী মিটিং কিংবা সভায় কখনো এটি গায়ে চড়িয়ে যাবেন না যেন!)
৪) মনিটির স্ট্যান্ডঃ
বিজ্ঞানীরাও বলেন যে আমরা যে ধরনের কম্পিউটারে কাজ করি, তার সাথে চোখের একটি ন্যুনতম দূরত্ব থাকতে হবে। তা না হলে চোখের নানা ধরনের ক্ষতি সাধন হতে পারে। একটি মনিটর স্ট্যান্ড দিতে পারে আপনাকে এই সুবিধা।
টেবিলের ওপর একটি মনিটর স্ট্যান্ড স্থাপন করে তার ওপর ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপটি রাখুন। চোখের সাথে এটি যেমন সুন্দর দূরত্ব স্থাপন করবে, ঠিক তেমনি বর্ধন করবে সৌন্দর্য। চাইলে নিজেও বানিয়ে নিতে পারেন চমৎকার একটি মনিটর স্ট্যান্ড।
৫) লিটল হেনরি ভ্যাকুয়ামঃ
অফিসের টেবিলে দেখলেন অনেক ধূলার স্তুপ জমে আছে। কি করবেন? রুমাল দিয়ে মুছবেন না টিস্যু দিয়ে? নাকি হাত দিয়েই ঝেড়ে ফেলবেন টেবিলের ওপরে জমে থাকা ধূলিকনা? আপনার এই পরিষ্কার করার সময়টি বাঁচিয়ে দিতে পারে লিটল হেনরি নামক খেলনাটি। এটি মূলত একটি ভ্যাকুয়াম টয়, আকৃতিতে খুবই ছোট এবং নান্দনিক। আমাদের ঘর মুছতে কিংবা ঝাড়তে যে ধরনের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করে থাকি, ছোট্ট হেনরি ঠিক তাই। তবে এটি শুধুমাত্র একটি ছোট জায়গার ধূলোবালি নিমিষে ঝেড়ে দিতে পারে। চাইলে সংগ্রহ করে নিতে পারেন। সময় যেমন বাঁচবে, ঠিক তেমনি অফিসের অন্যান্য সহকর্মীদেরও তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন।
৬) সেলফ স্টিয়ারিং মগঃ
ল্যাপটপে জরুরী ফাইল দেখছেন কিংবা কিছু একটা মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। হাতে আনমনে নাড়ছেন চামচ, মগে কফি। হঠাৎ করেই কফি ছলকে উঠলো। সাথে সাথে সুন্দর শার্টটি নষ্ট। কি করবেন?
আচ্ছা এমন যদি হয় যে মগটি নিজেই আপনার জন্য নাড়িয়ে দিচ্ছে কফি? কেমন হবে? সেলফ স্টিয়ারিং মগ দিচ্ছে আপনাকে ঠিক এই সুবিধা। চমৎকার অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি এই মগে রয়েছে একটি সুইচ, যেটি প্রেস করার সাথে সাথে আপনাতেই কফি কিংবা অন্যান্য তরল জাতীয় পদার্থ নাড়তে শুরু হবে।
৭) জাদুর বাক্সঃ
নামে জাদুর বাক্স হলেও এটির কাজ কিন্তু একেবারেই আলাদা। তবে এটি আপনি কিনতেও পারেন কিংবা নিজে নিজে বানাতেও পারেন। কিভাবে?
অফিসে হাজারো ফাইল চিঠি জরুরী কাগজ থাকে। সবকিছু একসাথে রেখে দিলে দরকারের সময় খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল হয়ে যায়। দুটো বাক্স তৈরি করুন। একটিতে লিখুন প্রয়োজনীয়, অপরটিতে লিখুন অপ্রয়োজনীয়। হাতে কাগজ আসা মুহুর্তেই আপনি বুঝতে পারবেন কোনটি দরকার আর কোনটি নয়। নির্ধারিত বাক্সে রেখে দিন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, যা দরকারী নয়, তা ময়লার ঝুড়িতে কেন ফেলব না? কারণ, আপনি জানেন না এই অপ্রয়োজনীয় বাক্সের কাগজ কখন দরকার হতে পারে। তাই সংরক্ষণ করুন। বাঁচিয়ে দিতে পারে আপনার সময়।
একটু বুদ্ধি ও স্বল্প পরিমাণ টাকা খরচ করলেই আমরা অফিসের মুহুর্তগুলো চমৎকারভাবে উপভোগ করতে পারি। আর বসের প্রিয়পাত্র কে না হতে চায় বলুন? বুদ্ধিমত্তা ও সময়োপযোগীতাই নিয়ে যাবে অন্যদের চাইতে কয়েক ধাপ ওপরে।