এল ক্লাসিকোর আগে সুযোগ ছিল ব্যবধানটা ১১ তে নিয়ে যাওয়ার, সুযোগটা পুরোপুরিই কাজে লাগিয়েছে আর্নেস্তো ভালভার্দের দল। সুয়ারেজ ও পাউলিনহোর জোড়া গোলে দেপোর্তিভো লা করুণিয়াকে ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে রিয়ালের সাথে পয়েন্ট ব্যবধানটা ১১ তে নিয়ে গেলো বার্সেলোনা।
তবে বড় এই জয় ছাপিয়েও বড় হয়ে উঠেছে আরেকটি ঘটনা। এর আগে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে মেসির ন্যায্য গোল বাতিল হয়েছিল রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। বার্সাও হারিয়েছিল মূল্যবান দুইটি পয়েন্ট। কাল আবারো একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হয়েছে বার্সার সাথে। এবার গোল বঞ্চিত হয়েছেন সুয়ারেজ। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে দুরূহ কোণ থেকে শট নিয়েছিলেন। গোলকিপার রুবেনকে ফাঁকি দিয়ে বল গোললাইন পেরোলেও গোলের বাঁশি বাজাননি রেফারি। ফলে প্রাপ্য হ্যাটট্রিকটিও আর পাওয়া হয়নি এই উরুগুইয়ানের। বারবার বার্সেলোনার ম্যাচেই কেন এরকম ভুল হচ্ছে, প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে এটা নিয়েও। সাথে লা লিগায় দ্রুত ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি সিস্টেম চালু করার দাবিও উঠছে জোরেসোরে।
তবে কাল আর পয়েন্ট হারানোর শঙ্কায় পড়তে হয়নি মেসিদের। লিওনেল মেসি গোল না পেলেও সেই অভাব ঘুচিয়ে দিয়েছেন সুয়ারেজ ও পাউলিনহো। সুয়ারেজ জালে বল জড়িয়েছিলেন ম্যাচের শুরুতেই। তবে ৬ মিনিটে করা সেই গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। এরপর মেসির দুইটি ও ভিদালের একটি শট বাঁচিয়েছেন দেপোর্তিভো কিপার রুবেন মার্টিনেজ। শেষ পর্যন্ত দেপোর্তিভোর রক্ষণভাগ খোলে ২৯ মিনিটে। রাকিটিচের কর্ণার থেকে বল পান ইনিয়েস্তা, সেই বল বাড়ান মেসিকে। মেসি বাড়িয়ে দেন সুয়ারেজের দিকে। অল্প দূরত্ব থেকে গোল করতে ভুল করেননি তিনি।
৩৭ মিনিটে প্রতিদান প্রায় দিয়েই দিয়েছিলেন সুয়ারেজ। মেসির উদ্দেশ্যে বল বাড়িয়েছিলেন, মেসির নেয়া শট ক্রসবারে লেগে ফেরত আসলে ২য় গোল পাওয়া হয়নি বার্সার। তবে তার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বার্সাকে। চার মিনিট পরে আর ক্রসবার বাঁচাতে পারেনি দেপোর্তিভোকে। মেসির নেয়া শট আবারো ক্রসবারে লেগে ফেরত আসলে ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দেন পাউলিনহো। এই নিয়ে এই মৌসুমে ৬ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট হয়ে গেল পাউলিনহোর।
বিরতি থেকে এসেই নিজের ২য় গোলের দেখা পেয়ে যান সুয়ারেজ। ৪৭ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে সার্জি রবার্তোর বাড়ানো বল সহজেই জালে জড়িয়ে দেন সুয়ারেজ। জয় মোটামুটি নিশ্চিত জেনে সামনের এল ক্লাসিকোর জন্য সতেজ রাখতে ৫৬ মিনিটে ইনিয়েস্তাকে তুলে আন্দ্রে গোমেজকে নামান বার্সা কোচ।
৭০ মিনিটে গোলের কাছাকাছি গিয়েও গোল করতে না পারার দায়টা নিজের ঘাড়েই নেবেন মেসি। মাত্র ১২ গজ দূর থেকেও জালে বল পাঠাতে পারেননি আর্জেন্টাইন জাদুকর। ম্যাচে পেনাল্টি মিসের যন্ত্রণায়ও পুড়তে হয়েছে মেসিকে। তবে ৭৫ মিনিটে সেই ভুল করেননি পাউলিনহো। জর্ডি আলবার শট বারে লেগে ফেরত আসলে আবারো বল জালে জড়িয়ে নিজের ২য় গোলের দেখা পান এই ব্রাজিলিয়ান।
তবে জয়ের পাশাপাশি একটা দুঃসংবাদও শুনেছে বার্সা। ইনজুরির কারণে উমতিতিকে হারিয়েছে আগেই, এবার এল ক্লাসিকোর আগে পাকো আলকাসারকেও হারালো বার্সা। ২১ মিনিটে বাম পায়ের পেশীর ইনজুরিতে পড়ে ৩ সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেছেন এই স্ট্রাইকার। ফলে নিশ্চিতভাবেই এল ক্লাসিকোতে খেলা হচ্ছে না তার।
খুঁটিনাটি কিছু তথ্য:
- এই নিয়ে লিগে দেপোর্তিভোর বিপক্ষে ৮ গোল হল সুয়ারেজের। স্পোর্টিং গিজন ছাড়া আর কোন দলের বিপক্ষে ৮ গোল করতে পারেননি তিনি।
- লিগে এই নিয়ে সর্বশেষ ২৩ ম্যাচে অপরাজিত বার্সা (২০ জয়, ৩ ড্র)। ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে এর চেয়ে বড় অপরাজিত থাকার ধারা বজায় আছে কেবল ম্যানচেস্টার সিটির। প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ২৬ ম্যাচে অপরাজিত তারা (২৩ জয়, ৩ ড্র)।
- ২০১৭ সালে সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ টি অ্যাসিস্ট করেছেন মেসি, যা অন্য যেকোনো লা লিগা ফুটবলারের চেয়ে বেশি।
- লা লিগায় সুয়ারেজের জন্য ১৯ টি অ্যাসিস্ট করেছেন এখনও পর্যন্ত মেসি, অন্য যেকোনো বার্সা সতীর্থের চেয়ে বেশি।
- এই মৌসুমে এখনও পর্যন্ত ২৬ বার ক্রসবারে বল লাগিয়েছেন বার্সা খেলোয়াড়েরা, ইউরোপের শীর্ষ ৫ লীগে অন্য কোন দলের খেলোয়াড়েরা এতবার বল ক্রসবারে লাগাননি। এর মধ্যে লিওনেল মেসি একাই লাগিয়েছেন ১৪ বার। এছাড়া লুইস সুয়ারেজ ৪ বার, জেরার্ড পিকে ৩ বার, পাউলিনহো ও রাকিটিচ ২ বার এবং জর্ডি আলবা ও ডেউলোফিউ ১ বার করে বল বারে লাগিয়েছেন।
- লা লিগায় এই মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করা মিডফিল্ডার এখন পাউলিনহো।
- এই নিয়ে বার্সেলোনার হয় ৬০৭ ম্যাচে ২০০ অ্যাসিস্ট হল মেসির।
- স্যামুয়েল ইতোর পর এক পঞ্জিকাবর্ষে লা লিগায় অন্তত ৩ টি পেনাল্টি মিস করা বার্সা খেলোয়াড় মেসি।
- বার্সেলোনার জার্সি গায়ে এখনও পরাজয়ের স্বাদ পাননি থমাস ভারমিউলেন। ১৫ টি ম্যাচে মাঠে নেমে জিতেছেন ১২ টিতে, ড্র হয়েছে বাকি ৩ টি ম্যাচ।