নিত্যদিনকার মতোই কাজ করছিলেন জেমা রামিরেজ। গাল বেয়ে একটু একটু করে ঘামের ফোঁটা পড়ছিল। বাঁ হাতের তেলোয় ঘামটুকু মুছে নিয়ে আবার কাজ শুরু করলেন। কয়েক বছর আগে যীশুর এই কাঠের প্রতিমূর্তিটি একটু ক্ষয়ে গিয়েছিল। রামিরেজের প্রতিষ্ঠান ডা ভিঞ্চি রেস্টোরোতে সারানোর জন্য আনা হয়।
ঠুক ঠুক ঠুক ঠুক…খানিকপরই একটা আর্তচিৎকার শুনতে পেলেন রামিরেজ। লাফিয়ে কাছে চলে এলেন মূর্তিটির কাছে। তার এক কর্মী একটি ফাটলের দিকে ইঙ্গিত করছে। প্রথমে ভাবলেন হয়তো কোন পোকামাকড় হবে, কয়েক’শ বছরের পুরনো মূর্তি যেহেতু। একটু ভালো করে খেয়াল করতেই অস্ফুট চিৎকার করে উঠলেন তিনি। ১৮ শতকের কাঠের এই প্রতিমূর্তির কোমরের কাছে একটি ক্যাপসুলে খোদাই করে কিছু লেখা আছে।
জ্বী পাঠক, এতক্ষণ ধরে যা পড়লেন, তার মোদ্দাকথায় দাঁড়াচ্ছে- “ক্রিস্টো দেল মিজারের” নামক যীশু খ্রিস্টের কাঠের এই প্রতিমূর্তির গায়ে কিছু অক্ষর এতোদিন গোপন করে সংরক্ষিত ছিলো। কারো চোখেই পড়ে নি এই লেখা।
রামিরেজ ও তার কর্মীরা সাবধানতার সাথে হাতে লেখা স্ক্রলটি খুলে ফেললেন। তবে তার আগে ছবি তুলে নিতে ভুললেন না। কি লেখা ছিল সে স্ক্রলে?
ভেড়ার চামড়ায় বাদামী কালিতে ডোবানো এই স্ক্রলটি লিখেছিলেন জোয়াকিন মিংগুয়েজ নামক একজন পাদ্রী। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি একটি গীর্জার পাদ্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। স্ক্রলে আরো বলা আছে যে ম্যানুয়েল ব্যাল নামক এক ব্যক্তি এই প্রতিমূর্তির কারিগর।
চিঠিতে লেখা ছিল ১৭৭৭ সালে মানুষ কিভাবে সময় কাটাতো, সেটির কথা। প্রাকৃতিক নানা দূর্যোগ কিংবা ভূমিকম্প হলে মানুষ কিভাবে সাহায্য পেতো, গমের ক্ষেত, আঙুর বাগান ইত্যাদি ফসল মানুষ কিভাবে রক্ষা করতো, তা লেখা আছে। এছাড়াও লেখা আছে হরিণ কিংবা নেকড়ের শিকার কেমন সাহসিকতার সাথে করা হতো। এছাড়াও তিন চারদিনের জ্বরে মানুষ কেমন কাবু হয়ে যেতো, সেটিও লেখা আছে এই স্ক্রলে।
রামিরেজ লাইভ সাইন্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
“একটা কথা এখানে পরিষ্কার। আর তা হচ্ছে, আসন্ন দিনগুলোর জন্য নিজেদের সম্পর্কে একটি দিনলিপি বানিয়ে রেখে গিয়েছেন এর লেখক।”
স্ক্রলটি পরীক্ষা করার পর দেখা গিয়েছে যে এটি কোন অম্লীয় কিংবা ক্ষারীয় পদার্থের মাধ্যমে তৈরি নয়। অর্থাৎ, শত শত বছর ধরে প্রতিমূর্তিটি যাতে অক্ষত থাকে, তেমন ব্যবস্থাই করা হয়েছে এই স্ক্রলটি বন্দী করবার সময়।
(ফিচারটি লিখতে সাহায্য নেয়া হয়েছে এই সাইটের)