মৌসুম শুরুর আগে সাধারণ সমর্থক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ সবাই যখন বলছিলেন, বার্সেলোনার এবারের স্কোয়াড তুলনামূলক দুর্বল, খুব একটা ভুল কিছু বলেননি তারা। দল ছেড়েছেন নেইমার, তার জায়গায় আসা ওসমান ডেম্বেলে আসতে না আসতেই চার মাসের জন্য মাঠের বাইরে। এদের অনুপস্থিতিতে গোল করার মূল দায়িত্ব যার কাঁধে, সেই লুইস সুয়ারেজও যেন নিজের ছায়া। কিন্তু তারপরেও সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সেলোনা একমাত্র দল হিসেবে এখনো অপরাজিত, মাদ্রিদের চেয়ে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে লীগের শীর্ষস্থানে, লীগে সবচেয়ে বেশি গোল দেয়া দল, চ্যাম্পিয়ন লীগেও জুভেন্টাসকে পেছনে ফেলে হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। কিভাবে সম্ভব হল তাহলে এতকিছু?
উত্তর আপনার অজানা থাকার কথা নয়। বার্সার সব সমস্যার উত্তর মেলে যার কাছে, সেই লিওনেল মেসিই আরও একবার ত্রাণকর্তা হয়ে এগিয়ে এসেছেন। বার্সার এখনো পর্যন্ত অপরাজিত থাকার মূল কারিগর হিসেবে যেই দুইজনের নাম নিতেই হবে, তাদের একজন গোলকিপার টের স্টেগান, আরেকজন মেসি। যতবারই দল পিছিয়ে পড়েছে, দলকে যোগ্য নেতার মত টেনে তুলেছেন সামনে।
সবচেয়ে খারাপ সময়টা গেছে সেপ্টেম্বরে। সুপার কাপে মাদ্রিদের কাছে দুই লেগেই বিধ্বস্ত হয়েছে, ইনজুরি কেড়ে নিয়েছে সুয়ারেজ ও ডেম্বেলেকে। বার্সার ভরসাত্রয়ী এমএসএন আর নেই তখন, আছে শুধু এমএমএম- মেসি, মেসি আর মেসি! বার্সার পারফরম্যান্স দেখে থাকলে আপনাকে অবশ্য স্বীকার করতেই হবে, তিন খেলোয়াড়ের কাজ মেসি একাই করে দিয়েছেন এখন পর্যন্ত। লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন লীগ মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ১৭ গোলের পাশাপাশি করেছেন ৫ অ্যাসিস্ট, আর কোন বার্সেলোনা প্লেয়ার ৯ টির বেশি গোলে অবদান রাখতে পারেননি।
শুধু এই মৌসুমে নয়, পুরো ২০১৭ জুড়েই ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে অনবদ্য ছিলেন মেসি। ইউরোপের শীর্ষ ৫ লীগে তার চেয়ে বেশি গোল এই বছর করতে পারেননি কেউ। লা লিগায় সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট, চান্স ক্রিয়েট, ড্রিবল আর কী পাস দেয়া লোকটির নামও লিওনেল মেসি। একটি লোক একাধারে সবচেয়ে বেশি গোল দিচ্ছেন, আবার সেরা প্লেমেকার ও হচ্ছেন! কেবল মেসির পক্ষেই বোধহয় সম্ভব এটা।
শুধু কি তাই, অনেকটা একা হাতে দেশকে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপের মূল পর্বে। মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা কতটা অসহায়, তা পরিষ্কার হয়ে গেছে বাছাইপর্বেই। আগুয়েরো-ডি মারিয়া-ডিবালাদের মত তারকা থাকার পরেও রক্ষাকর্তা হয়েছেন সেই মেসিই, জাতীয় দলের হয়ে কিছু জিততে পারেননি বলে যাকে নিজ দেশেই কথা শুনতে হয়েছে অনেকবার।
নিজের এমন পারফরম্যান্সেরই আরেকটা স্বীকৃতি পেলেন মেসি। ব্যালন ডি অরে রোনালদোর পিছনে পড়েছেন কেবলমাত্র দলীয় সাফল্য না পাওয়ার কারণে। রিয়াল যেখানে এই মৌসুমে শিরোপা জিতেছে ৫ টি, বার্সার সেখানে সম্বল কেবল কোপা ডেল রে। তবে ব্যালনে পিছনে পড়লেও কয়েকদিন আগে বর্ষসেরা প্লেমেকারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। এবার হয়েছেন জনপ্রিয় ফুটবল সাময়িকী ফোরফোরটু এর ২০১৭ সালের বর্ষসেরা ফুটবলারও।
বছরজুড়ে এমন অনবদ্য পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরুপই মেসি এই খেতাব জিতেছেন। অবধারিতভাবেই মেসির পরের জায়গাটি রোনালদোর, সেরা তিনের অপরজনের নামটিও আপনার অনুমান করতে পারারই কথা, নেইমার।
চারে আছেন বায়ার্নের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডোস্কি। ২০১৭ সালে বুন্দেসলিগায় ৩৩ গোল করেছেন লেভা, অন্য যে কারোর চেয়ে যা ৬ টি বেশি। মাত্র ৮ মৌসুম খেলেই বুন্দেসলিগার ইতিহাসে বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার নজির গড়েছেন, ২৪০ ম্যাচে ১৬৪ গোল নিয়ে বুন্দেসলিগার সর্বকালের সেরা গোলদাতাদের তালিকায় আছেন ১১ নম্বরে। যেভাবে এগোচ্ছেন, মৌসুম শেষে জার্ড মুলার, ইয়ুপ হেইঙ্কেসদের ছাড়িয়ে ৬ নম্বরে উঠে যাওয়াটাও তার পক্ষে অস্বাভাবিক নয়।
৫ নম্বর স্থানটি গেছে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা কেভিন ডি ব্রুইনের দখলে। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে কমপ্লিট মিডফিল্ডার বলা হচ্ছে তাঁকে। ২০১৪-১৫ মৌসুমে উলফসবার্গের হয়ে রেকর্ড ২১ অ্যাসিস্ট করেই নিজের পাসিং দক্ষতার জানান দিয়েছিলেন, তবে এই মৌসুমে গার্দিওলার অধীনে যেন নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন তিনি। গত মৌসুমে ১৮ অ্যাসিস্ট করে প্রিমিয়ার লীগের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টদাতা হয়েছিলেন, এবারো সতীর্থ ডেভিড সিলভার সাথে যৌথভাবে ৮ অ্যাসিস্ট তার। শুধু গোল করানোতে নয়, গোল করতেও পারদর্শী কেডিবি। এই বছর সব মিলিয়ে করেছেন ৯ গোল। চেলসির সাথে ম্যাচজয়ী গোলের পর গতকাল টটেনহামের সাথেও করেছেন গোল।
এছাড়া তালিকার ছয়ে আছেন লুকা মড্রিচ, সাতে এনগোলো কান্তে, আটে পিয়েরে এমেরিক অবামেয়াং, নয়ে সার্জিও আগুয়েরো ও দশে আছেন এডিনসন কাভানি।
ফোরফোরটু অবলম্বনে