‘ক্রিকেট ইজ অ্যা ফানি গেম’- কথাটা নিশ্চয়ই অনেকবার শুনেছেন। ক্রিকেটীয় পরিসংখ্যানের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নানা রোমাঞ্চ আর অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার। তেমনি এক অদ্ভুত বৈপরীত্য জানাবো আজ আপনাদের প্রিয়লেখার পাতায়।
২০১২ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়ার পর বিরাট কোহলির বুনো উল্লাসের কথা মনে পরে? এমন না যে সেঞ্চুরি তিনি আগে করেননি, তাহলে অমন বাঁধনহারা উল্লাসের কারণ? বুক থেকে পাথরসম ভার নেমে যাওয়া। ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পেলেও অনেক চেষ্টার পরেও যে পাওয়া হচ্ছিল না আরাধ্য টেস্ট সেঞ্চুরি!
১১৬ রানের ওই ইনিংসের আগে টেস্ট দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারছিলেন না কোহলি, কিন্তু ওয়ানডেতে ছিলেন দলের নিয়মিত মুখ। টেস্টে নিজের প্রথম সেঞ্চুরির আগে ওয়ানডেতে ৮ টি সেঞ্চুরি ছিল কোহলির, যা একটি রেকর্ড। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির আগে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড। অভিষেকের পর ৭৪ টি ওয়ানডে ও ৮ টি সেঞ্চুরির পর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান কোহলি।
কোহলি ভেঙ্গেছিলেন সাঈদ আনোয়ারের রেকর্ড। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির আগে আনোয়ারের ওয়ানডে সেঞ্চুরি ছিল ৬ টি। ১৯৯০ সালে ফয়সালাবাদে টেস্ট অভিষেকে জোড়া শূন্য পাওয়া আনোয়ারকে পরবর্তী টেস্ট খেলতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও তিন বছরেরও বেশি। এর মধ্যে ২০ ওয়ানডে খেলে করেছিলেন ৪ সেঞ্চুরি, যার মধ্যে শারজায় আবার টানা ৩ টি। টেস্ট অভিষেকের আগে ছিল আরও দুই ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এরপর ১৯৯৪ তে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে ১৬৯ রানের ইনিংস দিয়ে ঘুচান টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষা।
টেস্ট অভিষেকের আগে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে খেলার রেকর্ড কোহলির একসময়কার ভারতীয় সতীর্থ সুরেশ রায়নার দখলে। প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামার আগে ৯৮ ওয়ানডেতে ৩ সেঞ্চুরি ও ৩৭ গড়ে ২৩৭৯ রান করেছিলেন রায়না। রায়না ভেঙ্গেছিলেন সাবেক অজি অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সায়মন্ডসের রেকর্ড। টেস্ট অভিষেকের আগে সায়মন্ডস ওয়ানডে খেলেছিলেন ৯৪ টি। নিজের প্রথম টেস্টেই ১২০ রানের ইনিংস খেললেও এর পরে আরও ১৭ টি টেস্ট খেললেও আর একটিও সেঞ্চুরির দেখা পাননি রায়না।
কখনো টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পাননি, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরির মালিক দুইজন, ভারতের অজয় জাদেজা ও অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল বেভান। দুজনেই ছয়টি করে ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেছেন, কিন্তু টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া হয়নি কখনো। বেভান ওয়ানডে খেলেছেন ২৩২ টি, কিন্তু টেস্ট মাত্র ১৮ টি। জাদেজার অবস্থাও একই রকম, ১৯২ ওয়ানডে খেললেও টেস্ট খেলতে পেরেছেন মাত্র ১৫ টি।
আবার উল্টো দৃশ্যও আছে। টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন, কিন্তু ওয়ানডে সেঞ্চুরির নাম গন্ধ নেই, এমন ব্যাটসম্যানও আছেন অনেক। তাদের পথিকৃৎ কিংবদন্তি ভারতীয় সুনীল গাভাস্কার। কিছুটা অবিশ্বাস্য ঠেকতে পারে, নিজের ৩৪ টেস্ট সেঞ্চুরির সবকয়টিই গাভাস্কার করেছেন প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পাওয়ার আগে! আরেকটু হলে ওয়ানডে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আফসোস নিয়েই ক্যারিয়ার শেষ করতে হত গাভাস্কারকে, ১৯৮৭ বিশ্বকাপে নিজের শেষ ওয়ানডের আগের ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেন গাভাস্কার। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারা ম্যাচটাই ছিল গাভাস্কারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইনকেও পড়তে হয়েছে এরকম পরিস্থিতিতে। ১৯৮৯ এর অক্টোবরে, টেস্ট অভিষেকের চার মাস আগে ওয়ানডে অভিষেক নাসেরের। কিন্তু প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পেতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০০২ পর্যন্ত, মানে ১৩ বছর! এই সময়ের মধ্যে ৭২ ম্যাচে ১০ টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি ফাইনালে ১১৫ রানের ইনিংস দিয়ে অপেক্ষার যবনিকাপাত ঘটান নাসের।
টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছেন, কিন্তু কখনো ওয়ানডে সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শীর্ষে আছেন গ্যারি সোবার্স ও কলিন কাউড্রে। সোবার্সের ২৬ টি ও কাউড্রের ২২ টি টেস্ট সেঞ্চুরি থাকলেও একদিনের ক্রিকেটে নেই কোন সেঞ্চুরি। থাকবে কি করে, দুজনেই যে খেলেছেন মাত্র ১ টি করে ওয়ানডে! তাতে কাউড্রের সংগ্রহ ১ রান, আর সোবার্সের? শূন্য।
ক্রিকইনফো অবলম্বনে