ভারতের সেরা ধনী মুকেশ আম্বানিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী তিনি। বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত রিলায়েন্স গ্রুপের মালিক মুকেশ আম্বানি শুধু ভারত নয়, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী মানুষদের একজন। তার সমুদয় সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য হচ্ছে ২১.২ বিলিয়ন ডলার যা ভারতীয় রুপিতে যার মূল্যমান ১.২৯ লাখ কোটি!
সম্প্রতি মুকেশ আম্বানির বড় ছেলে আকাশ আম্বানির বিয়ে ঠিক হয়েছে। দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির ছেলের বিয়ে। তাহলে সেটা আলোচনার বিষয় হবেই। কিন্তু আম্বানির ছেলের বিয়ের আলোচনার তুলনায় বিয়ের কার্ড নিয়ে সব থেকে বেশি আলোচিত হচ্ছে। যে কার্ডটি আম্বানির পরিবার পছন্দ করেছে তার মূল্য জানার পর আপনি অবাক হযে যাবেন। বলা হচ্ছে যে একটি কার্ডের দাম প্রায় দেড় লাখ টাকা! এবার নিশ্চয়ই আপনাদের মধ্যে কৌতূহল হবে যে এই কার্ডের মধ্যে এমন কী বিশেষত্ব আছে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই কার্ডের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, কার্ডটি সোনার তৈরি। কার্ডের ওপর প্রচুর ব্যয়বহুল কারিগরি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই বছরের ডিসেম্বরে আকাশ আম্বানি বিয়ে করতে পারেন। তবে আম্বানি পরিবারের পক্ষ থেকে এখন কিছু বলা হয়নি বিয়ে কবে এবং কোথায় হবে। সম্ভবত এই সম্পর্কে শীঘ্রই তথ্য দেওয়া হতে পারে।
ভারতীয় নাগরিক হলেও মুকেশ আম্বানি ১৯৫৭ সালের ১৯ এপ্রিল ইয়েমেনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ধিরুভাই আম্বানি এবং মায়ের নাম কোকিলাবেন আম্বানি। তিনি তার বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। অনিল আম্বানি নামে মুকেশ আম্বানির আরও এক ভাই ও দুই বোন রয়েছে। আম্বানি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড থেকে এমবিএ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি স্টানফোর্ড থেকে পড়াশোনা শেষ করেন।
মুকেশ এবং তার পরিবার প্রথমে মুম্বাইয়ের ভুলেশ্বর এলাকায় দুই বেডরুমের আপার্টমেন্টে থাকতেন। তাদের এ বাসাকে আমেরিকানদের ভাষায় টেনামানট বলা হয়। যখন ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে রিলায়েন্স কোম্পানি বড় হয়ে উঠতে লাগল তখন আম্বানির পরিবার মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় উঠে আসে।
তাকে নিয়ে অনেক গল্প জানেন মানুষ। তার বিত্তের পরিমাণ তুলে ধরেন অনেকে। মুকেশ আম্বানি অধিকৃত সাতটি সম্পত্তির কথা তুলে ধরা হলো এখানে।
১. একটি বাড়ি
বিশ্বের সেরা ধনীর খেতাব অর্জন করতে না পারলেও বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ির মালিকানার খেতাব মুকেশ আম্বানির দখলে। আম্বানির পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়। এই ছয়জন সদস্যের জন্য বাড়ি বানানো হয়েছে ৪ লাখ বর্গফুটের। বাড়িটির নাম রাখা হয়েছে ‘এন্টিলিয়া’, যার ফ্লোর সংখ্যা ২৭। ২০০২ সালে মুকেশ আম্বানি মুম্বাই নগরীতে ৪৯ হাজার বর্গফুট জায়গা কিনে নেন। সাত বছরের নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হয়েছে ১শ’ কোটি ডলার। বাড়িটির উচ্চতা ১৭৩.১২ মিটার, যা একটি সাধারন ৬০ তলা দালানের উচ্চতার সমান। প্রথম ৬ তলা নির্ধারন করা হয়েছে কার পার্কিং স্পেস হিসেবে। সপ্তম তলা রাখা হয়েছে গাড়ির সার্বিক রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ওয়ার্কশপ হিসেবে।
অষ্টম তলায় রয়েছে একটি বিশাল বিনোদন কেন্দ্র, এখানে নির্মান করা হয়েছে ৫০ জনের আসনক্ষমতা নিয়ে একটি মিনি থিয়েটার। নবম তলা রিফিউজ ফ্লোর, জরুরী প্রয়োজনে উদ্ধার কাজের জন্য এটি ব্যবহার হবে। তার উপরের দুটি ফ্লোর স্বাস্থ্য কেন্দ্র। একটিতে রয়েছে সুইমিংপুল সহ খেলাধুলার সব সরঞ্জাম। অপরটিতে নির্মান করা হয়েছে আধুনিক সব উপকরন নিয়ে তৈরি সুবিশাল হেলথ জিম। তিনটি ফ্লোর জুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম ঝুলন্ত বাগান। নানা জাতের গাছ ও ফুলে শোভিত হয়েছে এই সুবিশাল বাগান। দুটি ফ্লোর রাখা হয়েছে আম্বানী পরিবারের আত্মীয়-স্বজন তথা অতিথিশালা হিসেবে। বাড়ির উপরের দিকে চারটি ফ্লোর, যেখান থেকে আরব সাগর ও আকাশের মিলনরেখার অবারিত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, নির্ধারিত হয়েছে মুকেশ, তার স্ত্রী নিতা, তিন সন্তান এবং মুকেশের মা কোকিলাবেনের জন্য। বাড়ির শীর্ষে দুটি ফ্লোরের মধ্যে একটি পরিবারের সার্বিক রক্ষনাবেক্ষনের জন্য এবং তার পরেরটি হ্যালিপেড এর নিয়ন্ত্রন কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হবে।
২. বহুতল গ্যারেজ
মুকেশ আম্বানির এই ভবনে বহুতল গ্যারেজ রয়েছে। সেখানে ১৬৮টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ভবনে তিনটি হেলিপ্যাডও রয়েছে। আমদানী করা ১৬৮টি লাক্সারী গাড়ি ব্যবহার হয় শুধুমাত্র পরিবারের প্রয়োজনে।
৩. মুভি থিয়েটার
মুকেশ আম্বানির ওই বাড়ির ৮তলায় আছে একটি ব্যক্তিগত মুভি থিয়েটার। এখানে ৫০ জন মানুষ একযোগে বসে সিনেমা দেখে।
৪. তুষারপাতের কক্ষ
মুকেশ আম্বানির বাড়িতে রয়েছে একটি ‘স্নো রুম’। গরমে চাইলেই সেখানে বসে তুষারপাত উপভোগ করা যায়। কৃত্রিমভাবে সেখানে তুষারপাতের ব্যবস্থা রয়েছে।
৫. সাড়ে আট কোটি রুপির বিএমডাব্লিউসহ গাড়ির বহর
ভারতের সেরা ধনী তিনি। মুকেশ আম্বানি একটি বিএমডাব্লিউ গাড়িতে যাতায়াত করেন। এর দাম ৮.৫ কোটি রুপি। বিএমডাব্লিউ ৭৬এলআই মডেলের গাড়িটি ভিআর৭ প্রোটেকশনের ব্যবস্থা রয়েছে। গাড়ির কাঁচগুলোর পুরুত্ব ৬৫ মিলিমিটার এবং প্রতিটির ওজন ১৫০ কেজি। গোটা গাড়িটি তো অবশ্যই বুলেট প্রুফ।
৬. বিশ্বের বৃহত্তম রিফাইনারি
সবাই হয়তো জানেন যে, জামনগর ওয়েল রিফাইনারির মালিক রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ১৯৯৯ সালের এক হিসাবে বলা হয়, এই রিফাইনারিতে প্রতিদিন ৬৬৮০০০ ব্যারেল তেল রিফাইন করা হয়।
৭. ভারতের সর্ববৃহৎ টেলিকম অপারেটর কম্পানি
খুব বেশি দিন হয়নি যাত্রা শুরু করেছে রিলায়েন্স জিয়ো। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া এ প্রতিষ্ঠান এখন ভারতের সবচেয়ে বড় টেলিকম অপারেটর কম্পানিতে পরিণত হয়েছে। মাত্র ১৭০ দিনে সাবস্ক্রাইবারের ভিত্তিতে ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায় এর আয়।