হাতে টানা রিকশা- শেষ হতে যাচ্ছে কলকাতার শতবর্ষীয় ঐতিহ্য? – Creative IT Blog
Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611

Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home1/cjsmpham/_addon/priyolekha.com/wp-content/plugins/taqyeem/taqyeem.php on line 611
Home / ফিচার / হাতে টানা রিকশা- শেষ হতে যাচ্ছে কলকাতার শতবর্ষীয় ঐতিহ্য?

হাতে টানা রিকশা- শেষ হতে যাচ্ছে কলকাতার শতবর্ষীয় ঐতিহ্য?

আমরা যারা ঢাকায় বাস করি, তাদের নিত্যদিনের একটি বাহন হচ্ছে রিকশা। উবার, পাঠাও ইত্যাদি নানা ধরনের অ্যাপনির্ভর যাত্রী সেবা চালু হলেও রিকশার প্রয়োজনীয়তা আপনি কখনোই নাকচ করে দিতে পারবেন না। এপাড়া থেকে ওপাড়া, এ স্থান থেকে সে স্থান, রিকশার ওপর ভরসা ঢাকাবাসীর আজো উঠে যায় নি। তবে কলকাতাবাসীর সে বিশ্বাস উঠে না গেলেও রিকশা ঠিকই উঠে যাচ্ছে। হয়ত কয়েকদিনের মাঝেই কলকাতার ঐতিহ্যবাহী হাতে টানা রিকশার দেখা আর মিলবে না। আধুনিক যুগে এসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শত বছরের এই অমানবিক ঐতিহ্যকে হয়ত আর রাখতে চান না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পুরনোকে বিদেয় দিতেই হবে।

কিছুদিন পর হয়তো বিদেশী পর্যটকেরা এসে কলকাতার রাস্তায় আর ঘুরতে চাইবেন না। তারা যাবেন জাদুঘরে, যেখানে রাখা আছে হাতে টানা রিকশার শেষ স্মৃতিটুকু। আধুনিকতার ছোঁয়া দিতেই হয়ত এই হাতেটানা রিকশাগুলোর জায়গা দখল করে নেবে মোটর কিংবা ব্যাটারীচালিত যানবাহন। এছাড়াও খুব দ্রুতই থমকে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী ট্রামের ইতিহাস। বর্তমান কলকাতায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হাতেটানা রিকশাওয়ালা আছেন, যাদের ভাগ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার লিখে দিতে চাইছেন মোটর কিংবা ব্যাটারীর প্রলেপ। এই রিকশাওয়ালারা প্রতিবাদও করেছেন। যুগ যুগ ধরে হাতে টেনে আসা বাপ-দাদার ব্যবসা এভাবে ছেড়ে যেতে চান না। তবে লাভ হয় নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবার বদ্ধপরিকর।
চা, ট্রাম, গথিক স্থাপত্য, ক্রিকেট আর হাতে টানা রিকশা- ব্রিটিশ রাজত্বে কলকাতার এই মহামূল্যবান সম্পদকে কিন্তু চাইলেও ভুলে থাকা সম্ভব না। কাঠের শরীরের এই রিকশাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পাতলা ফিনফিনে বানিয়ান আর রংচঙা লুঙ্গিতে আবৃত এক রিকশাওয়ালা- দৃশ্যটি আর দেখা যাবে না। প্রতি বছর শুধু বাইরের দেশেই নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকেও হাতেটানা রিকশার লোভে চলে আসেন কলকাতায় নানা মানুষ। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের ছবিতে ফুটে ওঠেছে তৎকালীন কলকাতার রাস্তার আভিজাত্য। তবে গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কলকাতার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করার পরও সরকার আর এই হাতে টানা রিকশার ওপর ভরসা করতে পারছেন না। কলকাতা শহরকে মানুষ একনামে চেনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ আর এই হাতেটানা রিকশায়।

ইতিহাসঃ
কলকাতায় হাতেটানা রিকশার শুরুটা হয়েছিল সিমলা থেকে। তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অবসর যাপনের কেন্দ্রস্থল ছিল এই সিমলা। সেখানেও রিকশা ছিল তবে সেটি আজকের মত কাঠের ছিল না। লোহায় গড়া এই রিকশা টানতে অন্তত চারজন মানুষের প্রয়োজন ছিল। ১৮৮০ এর দশকে ব্রিটিশ ঘরানার মহিলাদের প্রিয় বাহন ছিল এই লোহার রিকশা, যেন দেশী ঐতিহ্য পালকির বিপরীতটা সুদে আসলে এই রিকশায় মিটিয়ে নিচ্ছেন ব্রিটিশ নারীরা।
ততদিনে জাপানের তৈরি কাঠের রিকশা কলকাতায় চলে এসেছে। কলকাতার সম্ভ্রান্ত ঘরের লোকেরা, জমিদারেরা পালঙ্কতে চড়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করত। আভিজাত্য, বংশমর্যাদা ও নিজেদের শ্রেণী তারা বজায় রাখতে চাইত সর্বক্ষেত্রে। বাদ ছিল না চলাচল করার বাহনও। মধ্যবিত্ত সমাজের একটি সুন্দর প্রত্যুত্তর হয়ে এলো জাপানের হাতে টানা রিকশা, যেন পালঙ্কের সাথে টক্কর দিতেই আগমন তার।

ভারত স্বাধীন হবার পর ব্রিটিশেরা বিহার ও ওড়িশায় এই হাতেটানা রিকশার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে যায়। তৎকালীন যেসব ভারতীয় অবস্থাসম্পন্ন ছিল না, তাদের টিকে থাকার একটি সগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিল হাতে টানা এই রিকশা। ব্রিটিশরা হয়ত তাদের ডিভাইড এন্ড রুল অভ্যাসটি ভারত থেকে চলে যাবার পরও বজায় রেখেছিল। এই হাতে টানা রিকশা একইসাথে হয়ে উঠেছিল অমানবিকতার এক মূর্ত উদাহরণ আবার একইসাথে এই অমানবিকতাকে ঘাড়ে বয়ে হাজার হাজার মানুষ করেছিল।
কলকাতার যেসব সরু অলিগলিতে ট্যাক্সি কিংবা গাড়ি চলাচল করতে পারে না, সেখানে আজো এই হাতেটানা রিকশাই ভরসা। বৃষ্টির সময়ও এই হাতেটানা রিকশার দিকে নজর পড়ে রাস্তায় তবে বয়োবৃদ্ধ এক লোক প্রতিকূলতার সাথে সাঁতরে যাত্রীকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে দিচ্ছেন, সেটি দেখলে যে কারো কাছেই দৃশ্যটি অমানবিক ঠেকবে। এশিয়ার মাঝে ভারতই একমাত্র দেশ যেখানে এখনও হাতেটানা রিকশার প্রচলন রয়েছে। জাপান, চীন, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশে রিকশার প্রচলন উঠে গেলেও কিংবা তাদের আধুনিক সংস্করণ এলেও একবিংশ শতাব্দীতে কলকাতা এই একটি ক্ষেত্রে এখনো পড়ে আছে ব্রিটিশ রাজত্বেই।

কলকাতায় এই হাতে টানা রিকশাকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে নানা সাহিত্য, ছবি, প্রামাণ্যচিত্র। ১৯৮০ সালের সিমলাকে কেন্দ্র করে রুডইয়ার্ড কিপলিং লিখেছিলেন ‘দ্য ফ্যান্টম রিকশা’। গ্রেগ ভর, একজন ফটোগ্রাফার। কলকাতার অলিতে গলিতে তিনি ক্যামেরার ক্লিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন ইতিহাস সংস্কৃতি ও কৃষ্টি। সেখানে হাতেটানা রিকশা একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া বিমল রায়ের “দো বিঘা জমিন”-এ ফুটে ওঠেছে এক কৃষকের গল্প, যিনি পরবর্তীতে কলকাতায় এসেছেন এবং রিকশার চালনার পেশা গ্রহণ করেছেন।
একইসাথে অমানবিক ও ইতিহাসের স্বাক্ষর, কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন আপনি? হাতেটানা রিকশা বহন করছে কলকাতার শত বছরের পুরনো ইতিহাস, আবার মুদ্রার বিপরীত দিকে এসে দেখা যাচ্ছে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কলকাতার রাস্তায় এক অমানবিক দৃশ্য। মানুষ মানুষকে কাঁধে করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হয়ত অতীত তার কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান আর ভবিষ্যতকে। কে জানে!
(ফিচারটি লিখতে সাহায্য করেছে এই সাইট)

About ahnafratul

লেখালেখি করতে ভালোবাসি। যখন যা সামনে পাই, চোখ বুলিয়ে নেই। চারদিকে তাকাই, উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। দুনিয়াটা খুব ছোট, তারচাইতেও অনেক ছোট আমাদের জীবন। নগদ যা পাই, হাত পেতেই নেয়া উচিত। তাই না?

Check Also

কথা বলবার সময় আমরা ‘অ্যা’, ‘উম’ এসব উচ্চারণ করি কেন?

কথা বলবার সময় আমরা অনেকেই মুখ দিয়ে ‘অ্যা’, ‘উম’ ইত্যাদি আওয়াজ নিঃসরণ করে থাকি। এর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *