৪-১ এ পিছিয়ে থেকেও ৫-৫ এ সমতা, ফুটবল মাঠে এমন স্কোরলাইন নিঃসন্দেহে জন্ম দেবে অপরিসীম রোমাঞ্চের। মাঠের বাইরেও যে এই ‘স্কোরলাইন’ দারুণ রোমাঞ্চ ও অনুপ্রেরণার আধার হতে পারে, সেটাই গতকাল প্যারিসে প্রমাণ করে দিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। পঞ্চম ব্যালন ডি অর জিতে ভাগ বসালেন লিওনেল মেসির রেকর্ডে।
অথচ একসময় কত দূরের বাতিঘরই না মনে হয়েছে এই রেকর্ড! ২০১২ সালে লিওনেল মেসি যখন টানা চতুর্থবারের মত ব্যালন ডি অরের পুরষ্কার হাতে হাসিমুখে পোজ দিচ্ছেন, ক্রিশ্চিয়ানোর মুখ তখন নিকষ কালো অন্ধকারের ছাওয়া। নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীকে চোখের সামনে টানা চার বছর বিজয়োল্লাস করতে দেখে কেমন লেগেছে, সেটা রোনালদো ছাড়া আর কেই বা বুঝবেন! কম ট্রলও হয়নি তাঁকে নিয়ে। একদিকে ব্যালন হাতে মেসি, আরেকদিকে ক্লিয়ার মেন শ্যাম্পুর বোতল হাতে রোনালদো, এমন নিষ্ঠুর ট্রলও হয়েছে তাঁকে নিয়ে। টানা চারবার হারার পর খুব সহজেই হাল ছেড়ে দিতে পারতেন, দুমড়ে মুচড়ে যেতে পারত মনোবল। কিন্তু তাহলে আর তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কেন!
কি দুর্দান্ত কামব্যাকই না করলেন তিনি! যেন টানা চারবারের পরাজয়ের গ্লানিই নতুন করে জন্ম দিল এই গ্ল্যাডিয়েটরের, যিনি হারতে শিখেননি, মাথা নিচু করে বিদায় নিতে শিখেননি। এমন নয় যে মাঝের এই সময়ে মেসি খুব খারাপ খেলেছেন, মেসি বরাবরই ছিলেন নিজের মতই অসাধারণ। কিন্তু রোনালদো নিজের লেভেল এতটাই উপরে নিয়ে গেছেন মাঝের এই পাঁচ বছরে, তাঁর আলোকছটায় ম্লান হয়ে গেছেন মেসিও। ফলাফল, গত পাঁচ বছরে এই নিয়ে চতুর্থবারের মত ব্যালন জয়।
পঞ্চম ব্যালন জয় নিয়ে অবশ্য খুব একটা সন্দেহ ছিল না কারোর মনেই। ৩২ বছর বয়সী এই পর্তুগীজ পর্তুগালকে তুলেছেন বিশ্বকাপের মূল পর্বে, বাছাইপর্বে করেছেন ১৫ গোল। ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছেন, উয়েফা সুপার কাপ জিতেছে, লা লিগার শিরোপা জিতেছেন, স্প্যানিশ সুপার কাপও জিতেছেন। উয়েফা বর্ষসেরা প্লেয়ার ও ফিফা বেস্ট জয়ের পর রোনালদোর ব্যালন জয়ও অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। বিশ্বের ১৭৩ জন সাংবাদিকের ভোটে রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৯৪৬ পয়েন্ট, গত পাঁচবারের মধ্যে এই নিয়ে চতুর্থবারের মত দ্বিতীয় হয়ে শেষ করা মেসি পেয়েছেন ৬৭০ পয়েন্ট। আর মেসি-রোনালদোর রাজত্ব ভাঙবেন বলে ধরা হচ্ছে যাকে, সেই নেইমার পেয়েছেন ৩৬১ পয়েন্ট। এছাড়া সেরা দশে আরও জায়গা পেয়েছেন জিয়ানলুইজি বুফন, লুকা মদ্রিচ, সার্জিও রামোস, কিলিয়ান এম্বাপ্পে, এনগোলো কান্তে, রবার্ট লেভান্ডোস্কি ও হ্যারি কেন।
পুরষ্কার হাতে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উল্লসিত ছিলেন পর্তুগীজ যুবরাজ। মেসির সাথে এই সুস্থ প্রতিযোগিতা যে তিনিও উপভোগ করে, জানালেন সেটাও, ‘আমি অনেক খুশি। আমার ক্যারিয়ারের একটি দুর্দান্ত মুহূর্ত। এর জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করেছি আমি। এই বছরটা সত্যিই দুর্দান্ত কেটেছে। দলগত ট্রফিই এসব ব্যক্তিগত পুরষ্কার এনে দেয়, আর সেজন্য আমি আমার মাদ্রিদ ও পর্তুগাল সতীর্থদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আশা করছি আরও কয়েক বছর এই লেভেলে খেলে যেতে পারব। আশা করছি মেসির সাথে এই লড়াইটাও চলবে আরও’।
এর আগে ২০০৮, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে ব্যালন ডি অর জিতেছিলেন রোনালদো। ১৯৫৬ সাল থেকে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন কর্তৃক এই সম্মানজনক পুরষ্কার প্রদান করা হচ্ছে। মাঝে ৬ বছর ফিফার সাথে একীভূত হয়ে ফিফা ব্যালন ডি অর নাম নিয়েছিল, গত সেপ্টেম্বরে আবার আলাদা হয়ে গেছে দুটি পুরষ্কার।
২০১৭ সালে রোনালদো:
উয়েফা ক্লাব প্রতিযোগিতা-
ম্যাচ: ১৪ (চ্যাম্পিয়ন লীগে ১৩, সুপার কাপে ১)
গোল: ১৯ ( সবকয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লীগে)
লা লিগা-
ম্যাচ: ২৮
গোল: ১৭
ঘরোয়া কাপ:
ম্যাচ: ৩
গোল: ২
আন্তর্জাতিক:
ম্যাচ: ১১
গোল: ১১
মোট- ৫৪ ম্যাচে ৪৮ গোল (ম্যাচপ্রতি ০.৮৮ গোল)