সাম্প্রতিক সময়ে দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন। স্মার্টফোনের ব্যবহার যেমন গাণিতিক হারে বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এর নেতিবাচক ব্যবহারও। বিশ্বব্যাপী নয় হাজার স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ওপর চালানো হয়েছিলো ‘ট্রুথ অ্যাবাউট কানেক্টেড ইউ’ জরিপ। যার ফল অনুযায়ী, স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের আচরণ অনেকটাই সদ্য কিশোর বয়সে পা দেয়া ব্যক্তিদের মতো। নতুন অভিজ্ঞতার খোঁজে বাধা নেই কিছুতেই, অনৈতিক বা নেতিবাচক কাজেও পিছপা হচ্ছেন না অনেকেই।
‘ট্রুথ অ্যাবাউট কানেক্টেড ইউ’ জরিপটি চালিয়েছিলো ভোক্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাককান ট্রুথ সেন্ট্রাল’। ওই জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ম্যাককান চিহ্নিত করেছে স্মার্টফোনের সাতটি নেতিবাচক ব্যবহার।
যৌনতা
স্মার্টফোন প্রযুক্তির বদৌলতে কাউকে বর্ণবাদী মেসেজ বা উগ্র ছবি আর যৌনতাপূর্ণ মেসেজ পাঠানো ব্যবহারকারীদের জন্য যেন সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের বিষয়কে ‘সেক্স’ এবং ‘টেক্সট মেসেজ’ এই দু’টি শব্দকে একসঙ্গে মিলিয়ে বলা হচ্ছে ‘সেক্সট’। ম্যাককানের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০জন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে অন্তত একজন একবার করে হলেও আদানপ্রদান করেছেন সেক্সট।
অতিভক্ষণ
আদতে এখানে ‘অতিভক্ষন’ শব্দটি দিয়ে বোঝানো হয়েছে স্মার্টফোনের অতিব্যবহার। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা যেন চোখের অড়াল করতেই চান না তাদের স্মার্টফোনটি। রেস্টুরেন্টেও খাবার টেবিলে অথবা উরুর উপরেই থাকে স্মার্টফোনটি। এমনকি শতকরা ৩৮ শতাংশ মানুষ তাদের স্মার্টফোনটি বাথরুমেও সঙ্গে করে নিয়ে যান বলেই জানিয়েছেন।
লোভ
বৈধ বলুন আর অবৈধ উপায়ে বলুন, স্মার্টফোন হাতে থাকলে অভাব হয়না ডিজিটাল বিনোদনের। এরপরেও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ নিয়মিত ব্যবহার করেন পাইরেটেড কনটেন্ট। জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এই হার শতকরা ২৯ শতাংশ। আর কেবল চীনের ব্যবহারকারীদের মধ্যে এর হার ৫০ শতাংশ।
আলসেমী
প্রযুক্তির যতোটা জয়জয়কার ঠিক যেন ততোটাই অলস হয়ে উঠছে আধুনিক মানুষ। আর স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই আলসেমীটা আরো বেশি। মোবাইল যুগ শুরু হবার পর থেকেই মুখোমুখি দেখা করে কথা বলার বদলে ফোনেই জরুরি আলোচনা সেরে নিতে চান অনেকেই। আর এখন মোবাইল ফোনে কথা বলাটাও যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝামেলার ব্যাপার। কথা বলার চেয়ে টেক্সট মেসেজ পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন অনেকেই। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের অনেকে আবার টেক্সট মেসেজ পাঠাতেও আলসেমী বোধ করেন। জরিপের অংশ নেয়া অর্ধেক ব্যক্তি স্বীকার করেছেন যে, তারা অনেকসময়ই ইচ্ছে করে ফোন ধরেন না বা মেসেজের উত্তর দেন না।
ক্ষোভ প্রকাশ
রাগ ক্ষোভ প্রকাশের বেশ ভালো একটা মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে স্মার্টফোন। ক্ষেপে গেলেই কিছু একটা লিখে টেক্সট পাঠিয়ে দেয়া তো এখন একেবারেই সাধারণ ব্যাপার। এছাড়া বিভিন্ন অ্যানিমেটেড ইমোশন তো আছেই। প্রতি ১০ জন ব্যবহারকারীর মধ্যে দু’জন জানিয়েছেন, তারা যখন-তখন ব্যবহার করেন ইমোটিকন।
ঈর্ষা
একটা সময় ছিলো যখন মানুষের সামাজিক অবস্থাটি কেমন, তা বিবেচনা করা হতো তার জুতো দেখে। সাম্প্রতিক সময়ে জুতোর স্থানটি যেন দখল করে নিয়েছে হাল আমলের স্মার্টফোন। আপনার স্মার্টফোনটি যতোটা উন্নত, সামাজিক অবস্থানের দিক থেকেও যেন আপনি ততোটাই উঁচুতে। জরিপে অংশ নেয়া শতকরা ৫৫ ভাগ ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, তারা পাশের মানুষটির সামাজিক অবস্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনেন তার হাতের ডিভাইসটি।
গর্ব
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে যেন শেষ নেই তাদের ডিভাইসটি নিয়ে গর্বের। শতকরা ৪৪ শতাংশ ব্যবহারকারী মনে করেন, যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন তারা নিজের স্মার্টফোনটি দিয়ে। যে কোন কিছুর ছবি খুলে নেয়া, রেস্টুরেন্টে বসে ছবি তোলা, খাবার সময় কথা বলা এবং বন্ধুদের মাঝে বসে হেডফোনে গান শোনা তাদের কাছে যেন কোন ব্যাপারই নয়।
প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেক এগিয়েছে সভ্যতা। কিন্তু তারপরও হাতে নতুন প্রযুক্তির পণ্য আসলে প্রত্যেকেই যেন পরিণত হয় কিশোরে। অন্তত এমনটাই মনে হচ্ছে ম্যাককানের জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে।