ইয়েতি
যাদের কমবেশি জানাশোনা আছে, তারা হয়ত অনেকেই একে রহস্যময় একটি প্রাণী মনে করেন। ইয়েতি সম্পর্কে যেসব গল্প শোনা যায়, তা সম্বন্ধে বাস্তব কোন তথ্যপ্রমাণ না থাকলেও ইয়েতি নিয়ে গবেষণা বা অনুসন্ধান কিন্তু কম হচ্ছে না। নেপাল, ভুটান ও তিব্বতের পর্বতশৃঙ্গে আবাস রয়েছে রহস্যময় ইয়েতিদের, এটাই অনুমান করেন অনেকে। তবে ইয়েতি নিয়ে প্রশ্নে ঘি ঢালতেই যেন নতুন একটি বিষয়ের উদয় হয়েছে। এশিয়ার কিছু পার্বত্য অঞ্চলে বিশাল বড় চুল, হাড় এবং অন্যান্য অজানা কিছু প্রমাণ মিলেছে, যার ফলে সেখানকার অধিবাসীরা বলছেন ইয়েতির যেন সত্যিই হদিশ এবার পাওয়া গেল।
১৯৫১ সালে বিখ্যাত পর্বতারোহী এরিক শিপটন মাউন্ট এভারেস্টে একটি অভিযান চালান। সেখানে তিনি তুষারের মাঝে বড় বড় কিছু পদচিহ্নের খোঁজ পান। সেখান থেকেই ফ্রিঞ্জ তাঁর তত্ত্বানুসারে বলেন এশিয়ার এসব অঞ্চলে হয়ত এমন কিছু হিউম্যানয়েড (মানুষের মত আকার আকৃতিবিশিষ্ট কিন্তু মানুষ নয়) প্রাণী রয়েছে, যাদের সম্পর্কে বিজ্ঞানের এখনো অনেক কিছুই অজানা। বিজ্ঞানীদের মতে বিবর্তনের ধারা অনুযায়ী এসব প্রাণী হয়ত আদিম মানুষের শেষ বংশধর হিসেবে সাক্ষর বহন করছে। নিয়ানডারথাল কিংবা বিলুপ্ত শিম্পাঞ্জি প্রজাতির প্রাণী জাইগ্যান্টোপিথেকাস থেকে এসব প্রাণী এসেছে। আবার অনেকে বলে থাকে ইয়েতি আদতে এসব কিছুই নয়। আদিম মানুষ আর বর্তমান আধুনিক মানুষের একটি হাইব্রিড (সংকর) জাত হচ্ছে রহস্যময় এই ইয়েতি। (আরো জানতে পড়ুন এই লেখাটি)
২০১৪ সালের একটি গবেষনায় দুটো উপাদান পরীক্ষা থেকে বলা হয় যে মেরু ভালুক ও বাদামীপশম ভালুকের সংকরায়ন হচ্ছে আজকের এই ইয়েতি। নিউ ইয়র্কের ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর প্রধান জীববিজ্ঞানী শার্লোতে লিন্ডভিস্ট বলেন,
“ হিমালয়ের পাহাড়ে কিছু আজব সংকর জাতের ভালুক ঘুরে বেড়ায়। এদেরকেই ইয়েতি বলা হচ্ছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে বিজ্ঞান এদের সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই জানে না।”
এছাড়াও এই গবেষণা থেকে লিন্ডভিস্ট বলেন যে ইয়েতি যদি সত্যিই এক প্রজাতির ভালুক হয়ে থাকে, তবে হিমালয় সম্পর্কে নতুন নতুন সম্ভাবনা দুয়ার খুলে যাবে বিজ্ঞানীদের কাছে। তিনি ও তাঁর দল এসব অঞ্চলের যেখানেই কোন স্যাম্পল খুঁজে পান না কেন, তা সংগ্রহ করেন এবং পৃথিবীর অন্যান্য মেরু অঞ্চলের ভালুকের স্যাম্পলের সাথে মিলিয়ে দেখেন যে কোন ধরণের সামঞ্জস্য আছে কি না বা বৈসাদৃশ্য ঠিক কতটুকু। নয়টি ইয়েতির স্যাম্পলের মাঝে আটটি ছিল এশিয়ান কালো ভালুকের জাতের, হিমালয়ান ব্রাউন বিয়ার বা বাদামী ভালুক ও অপরটি ছিল টিবেটান ব্রাউন বিয়ার। নবম স্যাম্পলটি ছিল একটি কুকুরের।
লিন্ডভিস্ট বলেন যে হিমালয়ের সব অঞ্চল মানুষের কাছে এখনো রহস্যে ঢাকা। এমনও হতে পারে যে আদিম মানুষ আফ্রিকায় যাবার পূর্বেই হয়ত হিমালয়ের উঁচু পর্বতশৃঙ্গে বসবাস করত। মানুষ ও ভালুকের মাঝে তৈরি হয়েছিল অদ্ভুত এক সংমিশ্রণ। দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু কিছু অঞ্চলে এরকম হাজারো মিথ ও মিথিকাল প্রাণী রয়েছে। যাদের সম্পর্কে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীরা এখনো সন্দিহান। এখনো খোঁজ চলছে, গবেষণা চলছে।
পূর্বের কথায় ফিরে আসি। নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে ইয়েতির হদিশ সত্যিই পাওয়া গেল কি না! তবে হতাশ হতে হচ্ছে এবারও। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর যে এই স্যাম্পলগুলো এসেছে ভালুক ও কিছু কুকুরের থেকে। তবে নতুন এক আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা। হিমালয়ের যে অঞ্চল থেকে এসব স্যাম্পল পাওয়া গিয়েছে, সেখানে কোন প্রাণীর আবাস নেই বলেই জানতেন তারা। তবে কি নতুন এক রহস্যের উন্মোচন হল বিজ্ঞানীদের সামনে ?
(ফিচারটি লেখা হয়েছে এই সাইটের সাহায্যে)
আরো পড়ুন হিমালয়ের রহস্যমানব ইয়েতি উপাখ্যান