দিনকে দিন যেরকম অবস্থা দাঁড়াচ্ছে, তাতে করে এই নাম দেয়ার বোধহয় খুব বেশি দেরি নেই! শ্রীলঙ্কা সিরিজটা বিরাট কোহলি বোধহয় রেকর্ড গড়ার উদ্দেশ্য নিয়েই খেলতে নেমেছেন। কলকাতায় প্রথম টেস্টে করলেন প্রথম ভারতীয় হিসেবে একই টেস্টে ডাক ও সেঞ্চুরি পাওয়ার রেকর্ড, নাগপুরে দ্বিতীয় টেস্টে করলেন এক পঞ্জিকাবর্ষে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড, আর দিল্লিতে সেই রেকর্ডটাকেই আরও বর্ধিত করে নিয়ে গিয়ে করলেন আরেকটি নতুন রেকর্ড। অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড!
অথচ দেড় বছর আগে কেউ ঘুণাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারেনি, ব্রায়ান লারার এই রেকর্ডটি বিরাট কোহলির পায়ে এসে লুটাবে! নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ বছরে বিরাটের টেস্ট ক্যারিয়ারে ছিল না কোন ডাবল সেঞ্চুরি। অথচ মাত্র ১৮ মাসের মাথায়, ২২ টেস্ট ও ৩৩ ইনিংসের মধ্যে, সেই বিরাট কোহলিই করলেন কিনা ৬ টি ডাবল সেঞ্চুরি, হয়ে গেলেন টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি করা অধিনায়ক!
শুরুটা করেছিলেন ২০১৬ এর জুলাইয়ে অ্যান্টিগা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর একে একে ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা চার সিরিজে একটি করে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন, যেটিও একটি বিশ্বরেকর্ড। এর আগে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও রাহুল দ্রাবিড় টানা ৩ সিরিজে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন।
রেকর্ডের বাহার থামছে না এখানেই। টেস্ট ইতিহাসের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে তিন ম্যাচ সিরিজের সবকয়টিতেই সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করলেন কোহলি। ১১০ বলে করা এই সেঞ্চুরিটি কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্রুততম সেঞ্চুরি, আগের টেস্টের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেললেন পরের টেস্টেই!
সব ধরণের ক্রিকেট মিলিয়ে এই বছর এটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোহলির চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি। সবমিলিয়ে এই বছর কোহলির আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি হল ১১ টি, শচীন টেন্ডুলকারের এক বছরে ১২ সেঞ্চুরির রেকর্ড থেকে মাত্র ১ ধাপ পেছনে দাঁড়িয়ে তিনি।
নিজের হোমগ্রাউন্ডে এই ডাবল সেঞ্চুরি দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের একটি অভিজাত তালিকাতেও ঢুকে গেছেন ভারত অধিনায়ক। টানা দুই ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হলেন তিনি। এর আগে ওয়ালি হ্যামন্ড, ডন ব্র্যাডম্যান, বিনোদ কাম্বলি, কুমার সাঙ্গাকারা ও মাইকেল ক্লার্কেরই ছিল এই কৃতিত্ব। এদের মধ্যে হ্যামন্ড আবার করেছেন দুইবার।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মত দেশীয় অঙ্গনেও রেকর্ড করেছেন এই ডাবল সেঞ্চুরি দিয়ে। বীরেন্দর শেবাগ ও শচীন টেন্ডুলকারের মত কোহলিরও এখন ৬ টি ডাবল সেঞ্চুরি। মজার বিষয় হচ্ছে, ১৯৩২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কোন ভারতীয় অধিনায়ক ১টির বেশি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি। নেতৃত্ব দেয়াকালীন সময়ে মনসুর আলী খান পতৌদী, সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকার ও মহেন্দ্র সিং ধোনি একটি করে ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। সেখানে কোহলি পেয়ে গেলেন ৬টা! অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, কোহলি তাঁর প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়ার পর থেকে আর কোন অধিনায়ক একটিও ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি, অথচ কোহলি একাই করে ফেলেছেন ৬টা!
ভিনু মানকড়ের পর মাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে একই সিরিজে একের অধিক ডাবল সেঞ্চুরি করলেন কোহলি। মানকড় করেছিলেন ১৯৫৫-৫৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চার ম্যাচ সিরিজে। অধিনায়কদের মধ্যে এই কীর্তি আছে কোহলি ছাড়া আর চারজনের। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, গ্রায়েম স্মিথ, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও মাইকেল ক্লার্কের (ক্লার্ক দুইবার গড়েছেন এই কীর্তি)। টানা দুই বছরে (২০১৬ ও ২০১৭) ৩টি করে ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম ও একমাত্র ব্যাটসম্যানও হয়ে গেছেন কোহলি।
বয়স সবে ২৯, নিশ্চিত থাকতে পারেন, সামনের বছরগুলোতে বিরাট কোহলির আরও অনেক রেকর্ড ভাঙার কাহিনীই পড়তে হবে আপনাদের!