আর্জেন্টিনা আর নাইজেরিয়ার বিশ্বকাপ ভাগ্য বোধহয় একসূত্রে বাঁধা পরে গেছে। নাহলে টানা তিনবার কেন মুখোমুখি হতে হচ্ছে দল দুটোকে! ২০১০ আর ২০১৪ বিশ্বকাপের পর এবার ২০১৮ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেও মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়া। তবে শুধু নাইজেরিয়া নস্টালজিয়া নিয়ে পরে থাকার সুযোগ নেই মেসিদের। গ্রুপের বাকি দুই দল নিয়েও যে সমান মনোযোগী হতে হবে এবার!
ইউরোপের দুটি দলকে এক গ্রুপে পেতে হতে পারে, এমন একটা সম্ভাবনার কথা আগেই জানা ছিল। হয়েছেও তাই। স্পেনের মত শক্তিশালী দলকে না পেলেও যাদের পেয়েছে, তাদের উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই একদমই। ‘ডি’ গ্রুপে এবার মেসিদের সঙ্গী হয়েছে নাইজেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও আইসল্যান্ড।
নামের ভারে ভারী মনে হচ্ছেনা? তাহলে আরেকটু ভেঙ্গেই বলা যাক। নাইজেরিয়ার কাছে ৪-২ গোলে হারের স্মৃতি তো এখনো টাটকাই থাকার কথা আর্জেন্টাইন ফ্যানদের। গত বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেও ৩-২ গোলের কষ্টার্জিত জয় পেয়েছিল ‘সুপার ঈগল’দের বিপক্ষে। উড়িয়ে দেবেন না আইসল্যান্ড কিংবা ক্রোয়েশিয়াকে। গত ইউরোতে রুপকথা লিখে আইসল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার রেশ এখনো আছে ফুটবলপ্রেমীদের। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও দলটি খেলেছে দুর্দান্ত। সর্বশেষ প্রকাশিত ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দলটির অবস্থান ২২ তম।
আরেক প্রতিপক্ষে ক্রোয়েশিয়া যে শক্ত দল, সে ব্যাপারে সন্দেহ থাকার কথা নয় কারোর। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আছে ১৭ তম স্থানে। প্লে-অফ খেলে বিশ্বকাপে জায়গা পেলেও দলটিতে আছেন লুকা মদ্রিচ, মারিও মানজুকিচ, ইভান রাকিটিচ, ইভান পেরিসিচ ও মাতেও কোভাচিচের মত অসম্ভব প্রতিভাবান ও রিয়াল-বার্সার মত বিশ্বের সেরা ক্লাবে খেলা কিছু ফুটবলার।
স্বস্তিতে নেই ব্রাজিল ভক্তরাও। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মত তাদের গ্রুপটাও যে খুব একটা সহজ নয়! গ্রুপ ‘ই’ তে ব্রাজিলের সঙ্গী হয়েছে র্যাঙ্কিংয়ে ৮ম সুইজারল্যান্ড, ২৬ এ থাকা কোস্টারিকা ও ৩৭ এ থাকা সার্বিয়া। তবে শুধু র্যাঙ্কিং বিবেচনায় এদের মাপতে যাওয়াটা হবে বড় বোকামো। দলগত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে শক্তিমত্তার ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখে দলগুলো।
তবে বড় দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা হয়তো দিতে হবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে। গ্রুপ ‘এফ’ এ জার্মানির প্রতিপক্ষ মেক্সিকো, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে মেক্সিকো আছে ১৬ তে, সুইডেন ১৮ তে আর কোরিয়া আছে ৫৯ নম্বরে। তবে এখানেও শুধু র্যাঙ্কিং দিয়ে বিবেচনা করাটা ভুল হবে। র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা জার্মানি হয়তো উতরে যাবে, কিন্তু পরীক্ষাটা বেশ ভালোই কঠিন দিতে হবে জোয়াকিম লো শিষ্যদের।
খেলা জমবে ‘বি’ গ্রুপেও। ইউরোপের দুই পরাশক্তি যে পড়েছে একই গ্রুপে! ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে গ্রুপ পর্বেই মোকাবেলা করতে হবে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট স্পেনকে। সাথে আছে মরক্কো ও ইরান। গত বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার মত দলকে প্রায় রুখেই দিয়েছিল ইরান, ইরানের ডিফেন্সিভ ফুটবলে তাই আটকে যেতে পারে স্পেন-পর্তুগালের যে কেউ। সেক্ষেত্রে দল দুটির নিজেদের মধ্যকার ম্যাচটিই হয়ে উঠতে পারে নির্ধারক ম্যাচ।
ড্র শেষ, এবার অপেক্ষা শুধুই বিশ্বকাপের। অপেক্ষা ফুটবলের নির্মল আনন্দে মেতে ওঠার!