মাঝে মাঝে আপনার একটি বই কিংবা ছবি দেখে মনে হতেই পারে, যে চরিত্রটি সম্পর্কে পড়ছেন কিংবা দেখছেন তা কি কোন বাস্তবের মানুষ হতে পারে কি না? এই যেমন ধরুন, কোন হরর ছবির আগে যদি আপনার জানা থাকে যে সেটি বাস্তব ঘটনার আলোকে নির্মিত হয়েছে, তাহলে ভয়টা কি আরো বেশি লাগবে না? আবার ধরুন, একটা প্রেমের উপন্যাস পড়ছেন। পড়তে পড়তে নায়ক কিংবা নায়িকাকে ভালো লেগে যেতেই পারে। হিমু কিংবা রুপার প্রেমে পড়েন নি এমন মানুষ বোধহয় কমই আছে। আবার ব্যাটম্যানের চিরশত্রু জোকারকেও হয়ত আপনি ঘৃণা করে এসেছেন সারাজীবন। সে যাই হোক না কেন, সবকিছুর পেছনেই হয়ত এই নির্মাতার একটি কল্পনা রয়েছে, কিংবা একটি বাস্তব চরিত্রের ছোঁয়া। আসুন, আজ জেনে নিই এমনই কিছু বাস্তব চরিত্রের ছায়ায় নির্মিত বিখ্যাত সব চরিত্রদেরঃ
১) জন নেটলশীপ বনাম সেভেরাস স্নেইপঃ
হ্যারি পটারের সেই অনবদ্য চরিত্র পোশন শিক্ষক সেভেরাস স্নেইপের কথা মনে আছে তো? হগওয়ার্টসের প্রথম দিন থেকেই যিনি হ্যারির প্রতি কড়া নজর রেখেছিলেন? ছবির শেষভাগে আমরা জানতে পারি স্নেইপ হ্যারির কতটা আপন ছিলেন। তবে সে যাই হোক, এই স্নেইপ চরিত্রটি নির্মিত হয়েছে কিন্তু একজন বাস্তব মানুষের ছায়া অবলম্বনে। লেখিকা জে কে রাওলিং তার ওয়াইডিন স্কুলের রসায়নের শিক্ষক জন নেটলশীপের ছায়ায় তৈরি করেছেন তার স্নেইপ চরিত্রটি। জন যখন জানতে পারেন এই কথা, তিনি হাসতে হাসতে বলেন,
“আমি জানতাম আমি একজন কড়া শিক্ষক। কিন্তু এতটা খারাপ, তা জানতাম না।”
ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করা এই শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেন ২০১১ সালে।
২) এড গেইন বনাম নরম্যান বেটস, বাফেলো বিল, লেদারফেসঃ
সাইকো চলচ্চিত্রের নরম্যান বেটস, দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বসের বাফেলো বিল কিংবা দ্য টেক্সাস চেইনশ ম্যাসাকারের লেদারফেস- এই তিনটি খল চরিত্র কিন্তু দর্শকের কিংবা পাঠকের মনে সারাজীবন গেঁথে থাকবে। চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খল চরিত্র বলেও মানা হয়ে থাকে এদের। তবে এদের চরিত্র সৃষ্টির পেছনে রয়েছে একজন বাস্তব মানুষের ছায়া। তার নাম হচ্ছে এড গেইন।
এড গেইন তার শিকারকে খুন করবার পর শরীরের চামড়া এবং হাড় সংরক্ষণ করত। এমনও দেখা গিয়েছে যে, কবর থেকে মৃতের শরীর থেকে সে চুরি করেছে হাড় এবং চামড়া। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে জন্ম নেয়া এই কুখ্যাত খুনী ১৯৮৪ সালে মৃত্যুবরণ করে। জন্ম ১৯০৬ সালে।
৩) তৃতীয় হিরাম বিংহ্যাম বনাম ইন্ডিয়ানা জোনসঃ
স্টিভেন স্পিলবার্গ ও জর্জ লুকাসের সৃষ্ট অনবদ্য চরিত্র ইন্ডিয়ানা জোনসকে চেনেন না, এমন দর্শক বোধহয় খুব একটা নেই। শিক্ষক, অভিযাত্রীক, রহস্যভেদী-কি না বিশেষণে ভূষিত করা যায় তাকে! স্যার শন কনারির সাথে ইন্ডিয়ানা জোনসের তৃতীয় কিস্তি এখনো দর্শকের স্মরণে আছে। ইন্ডিয়ানা জোনসের ভূমিকায় চমৎকার অভিনয় করেছেন হ্যারিসন ফোর্ড। অচিরেই আসতে যাচ্ছে এর পঞ্চম কিস্তি। নির্মাতারা সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে ইন্ডিয়ানা জোনস চরিত্রটি কিন্তু একদম কাল্পনিক নয়। তৃতীয় হিরাম বিংহ্যামের আদলে তৈরি করা হয়েছে এই চরিত্রটি। হিরাম নিজেও একজন অভিযাত্রীক ছিলেন যিনি পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। জর্জ লুকাস মাঝে মাঝেই ইন্ডিয়ানা জোনসের সৃষ্টির পেছনে হিরামের অনুপ্রেরণার কথা স্মরণ করতেন।
হিরামের জন্ম ১৮৭৫ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে। ১৯৫৬ সালে ৮১ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৪) ডেভ টচি বনাম ডার্টি হ্যারিঃ
“ডার্টি” হ্যারি কালাহান সান ফ্রান্সিসকো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের একজন ইন্সপেকটর, যিনি কুখ্যাত বৃশ্চিক খুনী (স্করপিও কিলার)-কে আইনের আওতায় এনে সাজা দিতে চান। ক্লিন্ট ইস্টউড অভিনীত ডার্টি হ্যারি যারা দেখেছেন, তাদের এই স্করপিও কিলারের কথা মনে থাকার কথা। তবে আমরা এখানে খুনীকে নিয়ে কথা বলছি না। বলছি ডার্টি হ্যারিকে নিয়ে।
ষাট ও সত্তরের দশকের শুরুর দিকে ডেভ টাচি নামক এক ইন্সপেকটর জোডিয়াক খুনীর পেছনে আদাজল খেয়ে লেগেছিলেন। তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের কর্মকান্ড ও পুলিশি অভিযান চালিয়েছিলেন ডেভ।
৫) পেল হাল্ড বনাম টিনটিনঃ
টিনটিনের কমিক পড়ে নি, এমন কমিকপ্রেমী বোধহয় পাওয়া যাবে না। সাদা ধবধবে কুকুর স্নোয়ি এবং সঙ্গী ক্যাপ্টেন হ্যাডকের সাথে শ্বাসরুদ্ধকর নানা অভিযানে অংশ নিয়েছিল কমিকের টিনটিন। তবে টিনটিনের এই চরিত্রটির পেছনে কিন্তু বাস্তবের একজন ছায়াদান করেছেন। তার নাম পেল হাল্ড।
পেল হাল্ড একজন লেখক ও অভিনেতা ছিলেন, যিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সেই জুল ভার্নকে নিয়ে একটি প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করবার সৌভাগ্য অর্জন করেন। অনেকে মনে করেন হার্টজের সৃষ্ট টিনটিন চরিত্রটি এই হাল্ডকে দেখেই অনুপ্রাণিত। এমনকি টিনটিনের পোষাকের ওপরও হাল্ডের প্রভাব রয়েছে।
১৯১২ সালে জন্ম নেয়া পেল হাল্ড ৯৮ বছর বয়সে ২০১০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্মস্থান ছিল ডেনমার্কে।
(ফিচারটি তৈরি করতে সাহায্য করেছে এই সাইট)