- সুখী গানের ফর্মূলা
আচ্ছা সুখের গানের বুঝি কোন ফর্মূলা হয়?! দুঃখের গানের থেকে তার ফারাকই বা কতটা? প্রশ্নগুলো মাথায় কিলবিল করেছে কখনো? স্বরলিপি চিরে চিরে খুঁজেছেন কখনো কোন সে সুর যাতে ‘গায়ে পুলক লাগে’। যদি ভেবে থাকেন, তবে বিজ্ঞানী হবার অনুসন্ধিৎসু মন আপনার আছে।
ওপরের প্রশ্নগুলোকে যতই আবোলতাবোল লাগুক না কেন, আমেরিকার ভেরমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্ক ও রাশিবিদ্যা বিভাগের একদল বিজ্ঞানীর মনে কিন্তু এসব প্রশ্নের উদয় ঘটেছিল। পিটার শেরিডান ডডসের নেতৃত্বাধীন বিজ্ঞানীরা খুঁজে বার করেছেন সেই প্রশ্নের উত্তর। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নব্বই হাজার জনপ্রিয় গান যাদের প্রকাশকাল ১৯৫০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেন! গানগুলি ইংরাজি ভাষার এবং সুরের ভিত্তি গিটারের কর্ড। তারা মিলিয়ে মিলিয়ে দেখেন গিটারের কোন কোন কর্ডের সাথে কোন কোন কথা মিলেছে। এভাবে তারা খুঁজে বার করেন এমন দশ হাজার খুব প্রচলিত ইংরাজি শব্দ যারা আনন্দ আর দুঃখের অনুভূতির সাথে যুক্ত। তারপর গানগুলিকে সাজানো হয় একটি নির্দিষ্ট ‘সুখ সূচক’-এর ভিত্তিতে। তারা দেখেন দুঃখের অনুভূতিগুলোকে মূলত প্রকাশ করা হয় ‘মাইনর কর্ড’-এর মাধ্যমে আর আনন্দের অনুভূতিগুলোর বাহক ‘মেজর কর্ড’। কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সব থেকে আনন্দের বা সুখের অনুভূতির প্রকাশ ‘সেভেন্থ কর্ড’-এর মাধ্যমে। তা সে মেজরই হোক বা মাইনর, আনন্দের গানে সেভেন্থ কর্ডেরই জয়জয়কার।
কিন্তু পরীক্ষা নিরিক্ষা এখানেই শেষ নয়! তাদের পরবর্তী ফলাফলে অবশ্য আমাদের কলার কিছুটা উঁচু হতেই পারে। তারা বলেছেন এশিয়া এবং ওশিয়ানিয়া মহাদেশের গানে আনন্দ বা আশাবাদের বহিঃপ্রকাশ আমেরিকা বা স্ক্যান্দেনেভিয় দেশগুলির থেকে বেশি। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সারা পৃথিবীর গানেই আনন্দের ভাগ কমেছে বলে মন্তব্য তাদের। কিন্তু তাদের শেষ মন্তব্যটি বড়ই আশাব্যঞ্জক। তাদের ফলাফল এও বলছে মন্দা কাটিয়ে দ্রুত আশাবাদ ও আনন্দের দিকে ফিরছে পৃথিবীর গান।
আগ্রহী পাঠকেরা পড়ে ফেলতে পারেন ‘Plos One’ পত্রিকায় প্রকাশিত মূল গবেষণাপত্রটি (https://doi.org/10.1371/journal.pone.0026752)।
দাঁতমাজা বাঁদর
টিভি খুললেই টুথপেস্ট টুথব্রাশের বিজ্ঞাপণ। সাদা এপ্রন পরা ডাক্তারেরা কতবার বলছেন সকালে উঠে দাঁত মাজার কথা আর মনে করিয়ে দিচ্ছেন প্রতিবার খাবার পর দাঁত মাজতে ভুলিনা যেন। কিন্তু মনে করে প্রতিবার খাবার পর দাঁত মাজছেন কি? আমরা ভুলে যেতে পারি কিন্তু সকলে ভোলে না। বিশেষত ভারতীয় মহাসাগরের পূর্ব দিকে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের লম্বা লেজের বাঁদর প্রজাতির কিছু প্রাণী তো নয়ই।
বাঁদর প্রজাতির ‘মাকাক’(Macaque) শ্রেণীর এই প্রাণীদের বিজ্ঞানসম্মত নাম Macaca fascicularis umbrosus. তাদের বসবাস মূলত ভারত মহাসাগরের তিনটি দ্বীপে। ভারতের ‘সেলিম আলি পক্ষীবিদ্যা কেন্দ্র’-এর একদল বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ ছিল বেশ কৌতূহলউদ্দীপক। তারা দেখেন লম্বা লেজের এই প্রাণিরা খাবার খাওয়ার আগে শুধুমাত্র ভালো করে জলে ধুয়ে বা শুকনো পাতা দিয়ে মুছেই নেয়না, কখনো কখনো ভালো করা ধরার জন্য ব্যবহার করে কাগজ, পড়ে থাকা কাপড়ের টুকরো বা প্লাস্টিক।
কিন্তু শুধু এখানেই শেষ নয়! বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে দেখেন খাওয়া দাওয়ার পর দাঁত মাজার ব্যাপারেও তারা বেশ সচেতন। শক্ত সরু সুতো, পাখির পালক, ধাতব তার, নারকেলের ছোবড়া বা নাইলনের দড়ি দিয়ে দিব্যি দাঁত পরিষ্কার করে তারা। অনেকটা আমাদের ‘ডেন্টাল ফ্লস’ এর মতো। ব্যবহার করার আগে প্রয়োজনমতো ছোট বড়ো করে বা বাঁকিয়েও নেয়। তবে নিকোবর দ্বীপের বাসিন্দা এই বাঁদরেরাই একমাত্র প্রজাতি নয় যারা খাওয়ার পর দাঁত মাজে। তাঁদের এক জাপানি প্রজাতি এই কাজে ব্যবহার করে নিজের লেজ আর তাদের থাইল্যান্ডের আত্মীয়েরা অবশ্য মানুষের চুল ব্যবহার করে ‘ফ্লস’ হিসাবে। কিন্তু ভারতীয় মহাসাগরের দ্বীপবাসি লম্বা লেজের এই বাঁদরদের বৈশিষ্ট্য তারা শুধু দাঁত মাজেই না নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে ‘পার্সোনালাইজ’ও করে নেয়।
এরপর তাহলে টুথপেস্ট বা টুথব্রাশের বিজ্ঞাপণে এই স্বাস্থ্যসচেতন বাঁদরদের দেখলে চমকে যাবেন না যেন।
আগ্রহী পাঠকেরা পড়ে ফেলতে পারেন ‘Plos One’ পত্রিকায় প্রকাশিত মূল গবেষণাপত্রটি (doi:10.1007/s10329-017-0635-6)।