গত রবিবার ৪২ বছর বয়সী মুম্বাইয়ের সাবেক মডেল ও অভিনেত্রী বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পন্ডিত থ্যাকারি জানান, ‘বাদী থানায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, ইসলাম ধর্ম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে তার স্বামী আসিফ তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।’
ইসলামে ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন স্বামী। চালানো হচ্ছে অকথ্য অত্যাচার। এমনকী প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। ভারতে ‘লাভ জিহাদ’ বিতর্কে এবার সামনে এলো মু্ম্বাইয়ের সাবেক মডেলের এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।
রেশমি শাহবাজকর নামের সাবেক ওই মডেলের আরও অভিযোগ, সম্প্রতি ‘হাঁটুর বয়সী’ এক হিন্দু মেয়েকে ফের বিয়ে করেছেন তার স্বামী আসিফ। তারপর থেকে তাকে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তিনি চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে রাজি না হলে, তাকে খুনের হুমকি দিচ্ছেন তার স্বামী।
ইতিমধ্যে প্রাণের আশঙ্কার কথা জানিয়ে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন রেশমি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে তদন্ত। রেশমি জানিয়েছেন, ১২ বছর আগে ২০০৫ সালে আসিফের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। প্রথম প্রথম সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু বিয়ের তিন বছর ঘুরতেই আফিস তাকে ধর্মান্তরণের জন্য চাপ দিতে থাকেন। আসিফ নিজেও জন্মসূত্রে মুসলিম নন, ১৩ বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার কথায় রাজি না হওয়ায় রেশমির শুরু মারধর। দিন দিন সেই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে বলে অভিযোগ রেশমির।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে ওই মডেল বলছেন, ‘আমি একজন হিন্দু পরিবারের সন্তান। আমার স্বামী গায়ের জোরে আমাকে মুসলিম বানানোর চেষ্টা করছেন।’ তবে স্বামীর চাপের কাছে মাথা নত করেননি এই নারী। আসিফ যখন হাতের কাছ পায়, বোতল থেকে শুরু করে ঘরের আসবাবপত্র, তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রেশমির উপর। সম্প্রতি বিয়ারের বোতল দিয়ে রেশমির মাথায় আঘাত করা হলে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
পুলিশকে আগাম জানিয়ে রেখেছেন, এভাবে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার ‘অপরাধে’ তাকে খুন করা হতে পারে। সেক্ষেত্রেও যেন তদন্ত চালিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু কোনওমতেই তিনি হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করবেন না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
নিগৃহীতার দাবি, মুসলিম ধর্ম গ্রহণের জন্য তাকে শ্বশুরবাড়িতে মারধর করা হতো প্রায়ই। তবু তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ না করায় তার স্বামী আবার বিয়ে করেছেন। এবার প্রায় অর্ধেক বয়সী আর এক হিন্দু নারীকে বিয়ে করেছেন তিনি। সেই নারী প্রেমের টানে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। তখনই যাবতীয় দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। আসিফ ও তার কাজিন মুনিফ গত প্রায় তিন বছর যাবত রেশমিকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, যদি কোনো হিন্দু নারী মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করার পরেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করে তাহলে তার মতো পাপী আর কেউ হবে না। তারপরও নিজের অবস্থান থেকে নড়েননি রেশমি।
নয়া স্ত্রী পেয়ে পুরনো স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে অভিযুক্ত, পুলিশকে নিজের বয়ানে জানিয়েছেন এই মডেল। ৪২ বছরের প্রাক্তন মডেল রেশমির অভিযোগ, রেশমি ও আসিফের সন্তানকেও আসিফ জোর করে আটকে রেখেছেন। তাদের ৭ বছর বয়সী সন্তান না পারতে মায়ের কাছে আসে না, মাকে সে ভয় পায়। তাকে শেখানো হয়েছে, মা যেহেতু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি কাজেই সে একজন রাক্ষসী!
২০০৫ সালে আসিফের সঙ্গে বিয়ে হয় রেশমির। প্রথমদিকে সব ঠিকঠাক চললেও গত দেড় বছরে আসিফ তাঁর জীবনকে নরক করে তুলেছে বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন অভিযোগকারী মহিলা। তিনি আরও জানিয়েছেন, আসিফ তাঁকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, মুসলিম ধর্ম গ্রহণ না করলে ডিভোর্স দেবেন। পুলিশ এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩৫৪, ৩২৩, ৫০৪, ৫০৬ ও ৩৪ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করেছে।
প্রসঙ্গত, দিনকয়েক আগে এরকমই একটি অভিযোগ নিয়ে কেরালা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ২৫ বছরের এক যুবতী। ওই যুবতীরও অভিযোগ, বিয়ের পর জোর করে তাকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তিরত করা হয়। এমনকি তাকে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে দাসী করারও চেষ্টা করেন স্বামী।