প্রত্যেক হোম সীজন শুরুর আগে এই জিনিসটা যেন অবধারিতই। ব্রিসবেন ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের মধুর সম্পর্কের কথা নিয়ে মিডিয়ায় মাতামাতি। অস্ট্রেলিয়া দলও দায়িত্ব নিয়ে সেই সম্পর্ককে দিনকে দিন আরও মধুর করেই চলেছে। তা কি সেই সম্পর্ক ?
১৯৮৯ সালের জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত দীর্ঘ ২৮ বছরে ব্রিসবেনের গ্যাবায় ২৮ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া, তার মধ্যে হারেনি একটি ম্যাচও! ২৮ টির মধ্যে ২১ টিতেই জিতে মাঠ ছেড়েছে অজিরা, বাকি ৭ টি হয়েছে ড্র। ওই ২১ জয়ও কতটা বিধ্বংসী ছিল, সেটা জানতে পারবেন আরেকটি তথ্যে। ২১ টি জয়ের মধ্যে ৬ টিতে তারা জিতেছে ইনিংস ব্যবধানে, ৪ টিতে জিতেছে ৯ কিংবা ১০ উইকেটের ব্যবধানে, আর ৫ টি টেস্ট জিতেছে ২০০ কিংবা তারও বেশি রানের ব্যবধানে!
এরপরে নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না, গ্যাবার সাথে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্কটা কেমন! গত ২৯ বছরে একটি নির্দিষ্ট ভেন্যুতে এতটা আধিপত্য দেখাতে পারেনি আর কোন দলই। গত তিন দশকে অন্তত ১৫ টি টেস্ট খেলেছে এমন ভেন্যুর মধ্যে গ্যাবার পরে জয়-পরাজয়ের অনুপাত সবচেয়ে ভালো সাউথ আফ্রিকার। সেঞ্চুরিয়নে ২২ টি টেস্ট খেলে জিতেছে ১৭ টিতেই, হার মাত্র দুইটিতে। আর হিসাবটা যদি ১৫ টেস্ট থেকে নামিয়ে ১০ টেস্ট করা হয়, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে ভারত। দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলায় গত ৩ দশকে ১১ টি টেস্ট খেলে একটিও হারেনি তারা, ১০ জয়ের পাশে ড্র ১ টি।
এর আগে ১৯৪৮ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে টানা ২৭ টেস্ট বার্বাডোজে অপরাজিত ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জিতেছিল ১৬ টিতে, আর ড্র করেছিল ১১ টি। সেদিক থেকে হিসাব করতে গেলে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়েও ভালো।
হঠাৎ গ্যাবা নিয়ে এত আলোচনার কারণ, এই মাঠেই যে শুরু হচ্ছে ইংলিশদের অ্যাশেজ ধরে রাখার মিশন! গত ৩ দশকে এই মাঠে ৮ বার খেলতে নেমেছে ইংলিশরা, বলাই বাহুল্য, জয়ের মুখ দেখতে পারেনি একবারও। ৬ বার নিতে হয়েছে হারের লজ্জা, ২ বার করতে পেরেছে ড্র। তবে গ্যাবায় খেলা সর্বশেষ টেস্টের কথা নিশ্চিতভাবেই ভুলে যেতে চাইবে তারা। ২০১৩-১৪ অ্যাশেজে প্রথম টেস্টে একাই ৯ উইকেট নিয়ে ইংলিশদের ৩৮১ রানের বিশাল পরাজয় উপহার দিয়েছিলেন মিচেল জনসন। তবে চাইলে পাকিস্তানের থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে পারে ইংলিশ বাহিনী। গত বছর এই মাঠের প্রথম দিবারাত্রির টেস্টে অসম্ভবকে প্রায় সম্ভব করেই ফেলেছিল পাকিস্তান, দারুণ লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হেরেছিল মাত্র ৩৯ রানে।
গ্যাবায় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স
যে পিচে এসে খাবি খায় বাকি সব দলের ব্যাটসম্যান, সেই একই পিচে মুড়ি-মুরকির মত রান করেন অজি ব্যাটসম্যানেরা! পরিসংখ্যানই দেবে তার প্রমাণ। অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান স্কোয়াডের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানেরই এই মাঠে গড় ৫০ এর বেশি, এমনকি পেসার মিচেল স্টার্কের গড়ও ৪৭! গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে দিবারাত্রির টেস্টে দুই ইনিংসে স্টিভেন স্মিথ করেছিলেন ১৩০ ও ৬৩। এই মাঠে এখনো পর্যন্ত ৪ টেস্ট খেলেছেন স্মিথ, তাতেই ৩ সেঞ্চুরি সহ রান ৪৩৪।
ডেভিড ওয়ার্নারের রেকর্ড তো আরও ভালো। ৬ টেস্ট খেলে ৩ সেঞ্চুরি ও ৫৫ গড়ে রান করেছেন ৫৫০। ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন এই মাঠেই। উসমান খাজা এখানে খেলেছেন ৩ ম্যাচ, রান করেছেন ২৯৯। টেস্ট ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ স্কোর ১৭৪ ও এই মাঠেই। আর পিটার হ্যান্ডসকম্ব তো ১ ম্যাচ খেলেই করে ফেলেছেন ১৪০ রান!
গ্যাবার মাঠ বোধহয় সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল মিচেল জনসনেরই। মাত্র ৭ টেস্টেই ৩৪ উইকেট নিয়েছেন ২০১৩-১৪ অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে ধ্বংস করে দেয়া এই গতিদানব। বর্তমান দলে এই মাঠে সবচেয়ে বেশি উইকেট স্পিনার নাথান লায়নের, ৬ টেস্ট খেলে নিয়েছেন ২৬ উইকেট। এছাড়া মিচেল স্টার্ক ৪ ম্যাচে ১৭ উইকেট, জশ হ্যাজলউড ৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট ও জ্যাকসন বার্ড ১ ম্যাচেই নিয়েছেন ৬ উইকেট।
তবে এই মাঠেই আবার বেশ ভুগেছেন ইংলিশ বোলিং আক্রমণের সেরা দুই অস্ত্র ব্রড ও অ্যান্ডারসন। ২ টেস্ট খেলে ব্রড তাও নিয়েছেন ৯ উইকেট, অ্যান্ডারসন তো ৩ টেস্ট খেলে সর্বসাকুল্যে পেয়েছেন ৫ উইকেট! আর বর্তমান স্কোয়াডের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই মাঠে একের বেশি টেস্ট খেলেছেন কেবল অ্যালিস্টার কুক। মনে রাখার মত বেশ সুখস্মৃতিও আছে সাবেক ইংলিশ অধিনায়কের। ২০১০ সালে ২৩৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি, চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস আছে আরও ৩ টি। কোন ভেন্যুতে অন্তত ৫ বার ব্যাট করেছেন, এমন ভেন্যুর মধ্যে গ্যাবাতেই কুকের গড় সবচেয়ে বেশি, ৮৬.৮০।
এবার শুধু কুক নয়, জ্বলে উঠতে হবে গোটা ইংলিশ দলকেই। ২০১৩-১৪ অ্যাশেজের হোয়াইটওয়াশের পুনরাবৃত্তি ঘটা নাহলে অসম্ভব কিছু নয়!
ক্রিকইনফো অবলম্বনে