বোঁচা নাক, চোখা নাক, খানিকটা মোটা নাক, থ্যাবড়া নাক- কত নামেই না ডাকি আমরা চোখের নিচের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাঝে অন্যতম একটি ইন্দ্রিয় হচ্ছে নাক। নাক না থাকলে আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারতাম না বা কোন কিছুর গন্ধ পেতাম না। তবে পাঠক, কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আমাদের নাকের গঠন আসলে কিভাবে গঠিত হয়? বিজ্ঞানীরা এখন সে প্রশ্নের উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করছেন। বিবর্তন কিভাবে এলো এবং সময়ের সাথে সাথে মানুষের আকার আকৃতির পরিবর্তন কিভাবে এল, তা অনেক কিছুই এবার পরিষ্কার হয়ে যাবে।
“নিয়ানডারথাল থেকে আধুনিক মানুষ, এদের মাঝে হয়েছে নানা ধরণের বিবর্তন। প্রত্যেকটি অঙ্গের জিন কিভাবে কাজ করে তা জানার জন্য আমাদের এই পরীক্ষাটি করা খুবই জরুরী।” বলেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের কোষ ও এর উন্নতকরণ সম্পর্কিত বিদ্যার জীববিজ্ঞানী কুস্তভ অধিকারী।
এতকাল মানুষ ভেবে এসেছে যে নাকের গঠনের সাথে হয়ত নান্দনিকতার সম্পর্ক রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় এই ধারণাটি একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, স্থান কাল ও পরিবেশভেদে মানুষের নাকের গঠন তৈরি হয়ে থাকে।
“দেখুন, ইউরোপিয়ানদের নাকটা একটু সরু হয়ে থাকে। এর কারণ হচ্ছে, তারা বসবাস করে ঠান্ডা, শুষ্ক পরিবেশে। এশিয়া, আফ্রিকা এসব অঞ্চলের মানুষের নাকের আকার ভিন্ন ভিন্ন। যদি আমরা এই গবেষণার মাধ্যমে সফল হতে পারি, তাহলে মানুষের অন্যান্য অনেক অঙ্গই কিভাবে বিবর্তিত হয়ে এসেছে, তা সম্পর্কে জানতে পারব”- বলেছেন একই প্রতিষ্ঠানের প্রধান জীববিজ্ঞানী আন্দ্রে খুই লিনারেস।
কলাম্বিয়া, পেরু, ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকো ইত্যাদি নানা দেশের প্রায় ৬০০০ অধিবাসীদের নিয়ে এই গবেষণা চালানো হয়। এদের মাঝে ইউরোপিয়ান, আফ্রিকান ও ককেশিয়ানরাও রয়েছেন। গবেষণাটির নাম দেয়া হয়েছে ক্যানডেলা (CANDELA) স্টাডি।
গবেষণা দল ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি ও উন্নত যন্ত্রের সাহায্যে এসব অংশগ্রহণকারীদের নাকের পুনর্গঠন করেছেন এবং কম্পিউটার তাদের বিস্ময়কর কিছু তথ্য প্রদান করেছে। আমাদের শরীরের হাড় ও কার্টিলেজ গড়ে ওঠে যে সকল জিনের সাহায্যে, সেগুলো পরীক্ষা করে দুটো জিন পাওয়া গিয়েছে যেগুলো নাকের গঠনে সাহায্য করে থাকে। এদের নাম হচ্ছে GLI3 এবং PAX1. নাকের দৈর্ঘ্য কতটুকু হবে সেটি নির্ধারণ করবে DCH2 জিনের ওপর এবং প্রশস্ততা নির্ধারণ করবে RUNX2 নামক জিন।
চিত্তাকর্ষক ব্যাপার হচ্ছে, GLI3, RUNX2, DCH2- এই তিনটি জিন কালের বিবর্তনে নানা ধরণের পরিবর্তন এসেছে। গবেষকদের মতে, প্রাকৃতিক নানা কারণ ও পরিবেশের অভ্যাসগত কারণে মানুষের নাকের গঠন একেক অঞ্চলে একেক রকম হয়েছে।
(ফিচারটি প্রস্তুত করতে সাহায্য নেয়া হয়েছে এই সাইটের)