খুব প্রচলিত একটি কথা অনুযায়ী, নারীরা সর্বকালের সবচেয়ে হতভাগ্য সৃষ্টি যারা প্রতিনিয়ত অন্যদের বিশেষত পুরুষের ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়। তাদের বোকামি, নির্বুদ্ধিতা, অসহায়ত্ব নিয়ে ট্রল, মিম কোনো কিছুর অভাব নেই। তবে বিজ্ঞানীরা কিন্তু এই কথা একেবারেই সঠিক বলে মনে করেন না। বরং তাদের ভাষ্যমতে নারীদের রয়েছে প্রকৃতি প্রদত্ত এমন কিছু চমকপ্রদ ক্ষমতা যা পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। এই ক্ষমতাগুলো নারীরা কীভাবে অর্জন করল তা নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানে গবেষণা চলছে অবিরত। গবেষণা চলতে থাকুক, আমরা বরং জেনে আসি নারীদের তাক লাগানো কিছু সুপারপাওয়ার সম্পর্কে।
একসাথে বহুবিধ কাজ করতে পারেন নারীরা
২০১৩ সালে, যুক্তরাজ্যের কয়েকজন মনোবিদ দুইটি গবেষণা চালান। প্রথম গবেষণায় তারা ৫০ জন নারী এবং ৫০ জন পুরুষকে কম্পিউটারে গণনা এবং আকৃতি নির্ণয়ের ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি টাস্ক সম্পন্ন করতে বলেন। আলাদা আলাদাভাবে সবাই কাজগুলো ঠিকমতো সমাধা করতে পারলেও যখনই একসাথে দুটি কাজ করতে বলা হয়, তখন নারীদের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে পড়ে পুরুষরা।
দ্বিতীয় গবেষণায়, মানচিত্র দেখে একটি রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করা, লুকানো চাবি খুঁজে দরজা খোলা, সহজ কয়েকটি মানসিক দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তর দেয়া এবং ফোনে কথা বলার মতো কয়েকটি কাজ একসাথে করতে বলা হয়। সময় দেয়া হয় আট মিনিট। এই গবেষণায় দেখা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীরা খুব দ্রুত এবং সংগঠিত উপায়ে কাজগুলো সম্পন্ন করেছে। এজন্যই তো নারীরা দশভুজা, দুর্গার বাস্তব প্রতিমূর্তি।
আগে থেকেই বিপদ টের পায় তারা
সাধারণভাবে বলতে গেলে, নারীরা তাদের সন্তানদের প্রতি রক্ষণশীল একথা সর্বজন বিদিত। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে নারীরা কেবল সন্তান নয়, তাদের চারপাশের প্রতিটি মানুষের আসন্ন বিপদ আগে থেকেই আঁচ করতে পারেন। ২০১২ সালে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রমাণ করে দেখান, ৮০ জন নারীর মধ্যে ৬০ জন ছবিতে লুকিয়ে থাকা সাপ খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৮০ জনের মধ্যে মাত্র ৩৭ জন! মজার ব্যাপার হলো, ঋতুবতী নারীদের মধ্যে বিপদ টের পাওয়ার প্রবণতা আরও বেশি।
কাজের চাপ নারীদের আরও সমানুভূতিশীল করে তোলে
বিল জমা দেয়ার ডেডলাইনের চাপ কিংবা বাচ্চাকে খাইয়ে স্কুলে পাঠানোর দুশিন্তা- সবদিকের চাপ সামলানোর দুর্দান্ত ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে আসেন নারীরা। ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজের চাপ পুরুষদের ক্রমাগত আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর করে তোলে। অপরদিকে নারীরা ওই একই কাজের চাপে পরস্পরের মধ্যকার দুরত্ব ঘুচিয়ে সবাইকে আপন করে নিতে শেখে। প্রধান গবেষক জর্জিয়া সিলানীর জন্য এটি খুবই চমকপ্রদ একটি তথ্য ছিল। তিনি খুঁজে বের করেছেন, এর পেছনে হরমোনের পাশাপাশি শৈশব থেকে অন্যদের উপর নারীর নির্ভরশীলতা তৈরি করার প্রক্রিয়াটিও সমান গুরুত্ব বহন করে।
নারীরা বেশি রঙ চেনে
রংধনুর কয়টি রঙ? এই প্রশ্নের কোনো সোজাসাপ্টা উত্তর নেই। নারীদের ক্ষেত্রে রঙের সংখ্যা অসীম, পুরুষদের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাত্র সাতটি। ইসরায়েল আব্রামোভ নামের এক গবেষক প্রমাণ করে দেখান, রঙ দেখা ও চেনার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর ক্ষমতা আশ্চর্যজনক হারে বেশি। প্রায় ৫০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে তিনি দেখিয়েছেন সৃষ্টির শুরুর দিকে নারীরা কৃষিকাজ এবং পুরুষরা শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় নারীরা প্রকৃতির সান্নিধ্য পেয়েছে বেশি। কাজেই তাদের মধ্যে রঙ নিয়ে কাজ করার সুযোগও বেশি ছিল। ‘টেট্রাক্রোম্যাটস’ নামের একদল বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন নারী আছেন যারা ১০০ মিলিয়নেরও বেশি রঙ চিনতে পারেন!
নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষদের চেয়ে বেশ ভালো
লিঙ্গগত দিক থেকে যাদের আজীবন ‘দুর্বল’ খেতাব দেয়া হয়েছে, রোগ প্রতিরোধের দিক থেকে তারা কিন্তু পিছে ফেলে দিয়েছে সবল গোষ্ঠীকে। ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, নারীদের বাড়তি এক্স ক্রোমোজোমে থাকে বাড়তি মাইক্রো আরএনএ। এই আরএনএ ক্যান্সার দমন থেকে শুরু করে ক্যাস্পাস- ১২ এর মতো কিছু এনজাইমের উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে, যার ফলে নারীদের শরীরে অসুখ-বিসুখ খুব সহজে বাসা বাঁধতে পারে না। জাপানের এক দল গবেষক জানান, নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্টও হয় খুব ধীরে ধীরে। এ কারণেই বহুবিধ রোগের সাথে যুদ্ধ করে পুরুষ সঙ্গীর তুলনায় বেশিদিন টিকে থাকেন নারীরা।