নবদম্পতির গাঁটছড়া বাঁধা নিয়ে সারা বিশ্বে হবুদম্পতিদের মধ্যে রয়েছে অসীম উৎসাহ। সে উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেও। কোথাও কোথাও শুভ মুহূর্তের অনেক আগে থেকেই চলে তোড়জোড়। বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রীতিনীতি আছে। আজ আপনাদের জানাবো কিছু দেশের বিয়ের অদ্ভুত যত রীতিনীতি সম্পর্কে।
ফ্রান্স
পারফিউম বা খাওয়াদাওয়াতে ফ্রান্স বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ফ্রান্সের নবদম্পতিদের বিয়ের পর খেতে দেওয়া হয় টয়লেট স্যুপ। বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হওয়ার পর নবদম্পতিকে এই স্যুপ খাওয়ানোর জন্য বন্ধুরা ওঁত পেতে বসে থাকেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবার কমোডের ভেতর ফেলে এই সুপ বানানো হয় এবং নবদম্পতি যতক্ষণ এই খাবার না খাবেন ততক্ষণ তাদের একসাথে রাত কাটাতে দেওয়া হয় না। কী বিদঘুটে ব্যাপার!
ইন্দোনেশিয়া
টয়লেটের কথা যখন আসলোই তখন আসা যাক ইন্দোনেশিয়ার বিয়ের একটি রীতি নিয়ে। নবদম্পতিকে ৩ দিন কোন রকম টয়লেট ব্যবহার করতে দেওয়া হয়না এখানে। আর এই ৩ দিন তাদের দেওয়া হয় অল্প খাবার ও পানি যেন তাদের টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন না হয়। কোনোভাবে যেন তারা টয়লেট ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য রীতিমত আত্মীয়স্বজন মিলে তাদের পাহারায় রাখা হয়।
কেনিয়া
কেনিয়ার ম্যাসাই উপজাতির বিয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে এক অদ্ভুত আশীর্বাদের প্রথা। প্রথা মেনে নববধূকে তার স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময় নববধূর বাবা মুখে পানি নিয়ে সেই পানি ছুড়ে দেন মেয়ের মুখে, এভাবে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ দেওয়া হয়। এরপর নববধূ তার বাপের বাড়ীর দিকে আর তাকাতে পারেনা। পাড়ি দেন শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
চায়না
বহুদেশে বিয়ের মজার মজার প্রথা থাকলেও চিনের প্রথাকে একটু পাশবিকই বলা যায়। বিবাহের দিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠী একটি ছোট্ট মুরগির বাচ্চাকে মেরে তার লিভার পরীক্ষা করে, লিভার তাজা ও রঙ গাঢ় লাল হলে সেই দিনই বিয়ের জন্য নির্বাচিত হয়। আর যদি লিভার আর রঙ পছন্দ মতো না হয়, তাহলে যতদিন না ভালো কোনো লিভার পাওয়া যাচ্ছে ততদিন এভাবে মুরগির বাচ্চার প্রাণ নিয়ে এই কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে, আর এই কাজটি করতে হয় হবুদম্পতিদের ।
ফিজি
এবার আসা যাক ফিজির কথায়। ফিজির কোন যুবকের যদি কোন মেয়েকে পছন্দ হয় এবং তার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যেতে হয় তাহলে তাকে উপহার হিসাবে দিতে হয় তিমি মাছের দাঁত। এটাই ফিজির বিয়ের প্রথা, আর তার জন্য যদি ছেলেকে মাঝ সমুদ্রে তিমি শিকারেও যেতে হয় তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে অধিকাংশ পুরুষ সময় বাঁচাতে বিভিন্ন ভাবে এই দাঁত সংগ্রহ করে। আর তার জন্য পকেটের ওজন বেশ খানিকটা হালকাও করতে হয় তাদের।
স্কটল্যান্ড
ইতিহাস ও স্থাপত্যে ঘেরা এই দেশে বিয়ের অনুষ্ঠান বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিয়ের দিন এখানে নবদম্পতিকে নোংরা আর কাদা মাখিয়ে নাস্তানাবুদ করা হয়। এই মহান কাজটি করেন তাদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরা। নবদম্পতির কপালে জোটে পচা ডিম, পচা সবজী, দুধ ইত্যাদি। আর এটাই নাকি নবদম্পতির জন্য আসন্ন নতুন জীবনের আশীর্বাদ।
সুইডেন
এবার আসা যাক একটু দুষ্টু মিষ্টি বিষয়ে। সুইডেনে বিয়ের পরে নবদম্পতি একে অপরকে একা ছাড়তেই চাননা। কেন জানেন? একে অপরকে ছেড়ে টয়লেট গেলেই নববধুকে চুম্বন করতে হাজির হয়ে যায় ছেলেরা আর বরের জন্য মেয়েরা, এটাই নাকি সুইডেনের বিবাহ রীতি! তারা নাকি দারুণ মজা পান এই রীতিতে।
ভারত
এবার আসি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথায়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এখানে বহু মানুষের বাস। তাই আছে রীতিনীতিরও হাজারো রকমফের, যার বেশ কিছু রীতি রীতিমতো অদ্ভুতও বটে। কোন মেয়ের জন্ম যদি মাঙ্গলিক লগ্নে হয় অর্থাৎ জ্যোতিষ শাস্ত্রমতে মঙ্গল ও শনি একসঙ্গে সপ্তমে অবস্থান করলে সেই সময়টিকে অশুভ ধরা হয়। এই সময়ে যদি কোন মেয়ের জন্ম হয় তাহলে তাকে মাঙ্গলিক বলা হয়। এবং তাদের সেই দোষ কাটানোর জন্য বিয়ে দেওয়া হয় গাছ অথবা সারমেয়র সাথে। কারণ হিসাবে বলা হয় তাদের দোষ না কাটলে তাদের স্বামী মারা যাবে। আর এ কারণে এই অদ্ভুত নিয়ম।
সে যাই হোক, বিয়ের পরে সংসারে সুখ শান্তি রাখার জন্য বিভিন্ন দেশে এত রীতি, এত প্রথা। আর এসব কানুন অক্ষরে অক্ষরে মেনেই সকলে বিয়ে করেন। এরপরও শান্তি পরবর্তীতে থাকে কি না সে নিয়ে প্রশ্ন করতে ছাড়েননা বিজ্ঞজনেরা।