টি-২০ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দুই বিজ্ঞাপন তাঁরা। ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে এক দলে পাওয়া যেকোনো দলের জন্যই সৌভাগ্যের ব্যাপার। বিপিএলে এবার সেই সৌভাগ্যের অধিকারী হতে যাচ্ছে মাশরাফি মর্তুজার রংপুর রাইডার্স। শুরু থেকে না হলেও টুর্নামেন্টের যেকোনো পর্যায়ে এসে জুটি বাঁধবেন সময়ের অন্যতম বিস্ফোরক দুই ব্যাটসম্যান। আর গেইল-ম্যাককালামের ব্যাটে চড়েই গতবারের দুর্ভাগ্য কাটানোর পরিকল্পনা রংপুরের।
গতবার ৫ম হওয়া দলটি এবার খেলা শুরুর আগেই আলাদাভাবে নজর কেড়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। বাকি সব দল যেখানে ঝুঁকেছে খ্যাত-অখ্যাত সব পাকিস্তানিদের দিকে, রংপুর রাইডার্স স্কোয়াড সেখানে সম্পূর্ণই পাকিস্তানি বিবর্জিত। তাই বলে তাদের দল কম শক্তিশালী হয়নি। কাগজে কলমে এবার সবচেয়ে ব্যালান্সড দলগুলোর একটি রংপুর রাইডার্স।
গেইল-ম্যাককালাম ছাড়াও রংপুর স্কোয়াডে আছেন আরও দুই বিস্ফোরক ওপেনার, জনসন চার্লস ও অ্যাডাম লিথ। কিছুদিন আগেই ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-২০ লিগে বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছেন লিথ। আর ক্যারিবীয় ওপেনার চার্লসের বিগ হিটিং এর কথাও আলাদা করে বলার কিছু নেই। মিডল অর্ডার দক্ষ হাতে সামলানোর জন্য থাকবেন টি-২০র অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রবি বোপারা। আছেন শ্রীলঙ্কার বিস্ফোরক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কুশাল পেরেরাও। রংপুর দলে যে মারকুটে ব্যাটসম্যানের অভাব হবে না, সেটা গ্যারান্টি দিয়েই বলা যায়।
দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে থাকছেন মোহাম্মদ মিঠুন, শাহরিয়ার নাফীস, জিয়াউর রহমানের মত ব্যাটসম্যানেরা। তবে ব্যাটিংয়ের চেয়েও বেশি ভারসাম্যপূর্ণ রংপুরের বোলিং লাইন-আপ। বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে থাকবেন অধিনায়ক মাশরাফি। থাকবেন দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক, সোহাগ গাজী ও ইলিয়াস সানিও বাড়াবেন বোলিং আক্রমণের বৈচিত্র্য। এছাড়াও থাকবেন মিতব্যয়ী বোলিংয়ের জন্য সুপরিচিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যামুয়েল বদ্রিও।
রংপুরের পেস অ্যাটাকেও থাকছে ধারালো নাম। মাশরাফির সাথে হাল ধরবেন স্পীডস্টার রুবেল হোসেন, থাকবেন রবি পেসার হান্ট থেকে বের হয়ে আসা ইবাদত হোসেন। নতুন বলে আক্রমণ শানানোর জন্য থাকবেন ইংল্যান্ডের ডেভিড উইলিও।
অলরাউন্ডার কোটায়ও বৈচিত্র্য থাকছে রংপুরের স্কোয়াডে। শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলার জন্য থাকবেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা ও আফগানিস্তানের সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। সব মিলিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ স্কোয়াডই বানিয়েছে রংপুর।
চোখ রাখতে হবে যার উপর:
টুর্নামেন্টের শুরু থেকে পাওয়া যাবে না তাঁকে, তবে একবার দলে যোগ দেয়ার পর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম নিশ্চিতভাবেই বাড়তি মাত্রা যোগ করবেন রংপুর দলে। এই বছর টি-২০ তে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক এই কিউই ব্যাটসম্যান, ১৫২.২০ স্ট্রাইক রেটে এখনও পর্যন্ত এ বছর ১১৭২ রান করেছেন ম্যাককালাম। এই টুর্নামেন্টে ৩য় ম্যাচ খেলার পথে ব্যক্তিগত একটি মাইলফলকও ছোঁওয়া হয়ে যাবে তাঁর। মাত্র ৫ম ক্রিকেটার হিসেবে টি-২০ তে ৩০০ ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার হবেন তিনি।
কোচ:
কোচিং প্যানেলে টম মুডির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতভাবেই বাড়তি আকর্ষণ যোগ করবে বিপিএলের উন্মাদনায়। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ও পিএসএলে মুলতান সুলতানের কোচের দায়িত্ব সামলানো এই অস্ট্রেলিয়ান এবার থাকছেন রংপুর রাইডার্সের ডাগআউটে। এছাড়া বিগ ব্যাশে মেলবোর্ন রেনেগেডস দলের পরিচালকের পদও সামলাচ্ছেন তিনি। অভিজ্ঞতার ব্যাপারে তাই মুডির থেকে ভালোই সুবিধা পাবে রংপুর।
শাহজাদকে মিস করবে রংপুর:
২০১৬ বিপিএলে রংপুরের হয়ে প্রায় প্রতি ম্যাচেই ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন আফগান সেনসেশন মোহাম্মদ শাহজাদ। ১১০.০৬ স্ট্রাইক রেটে গতবার ৩৫০ রান করেছিলেন এই আক্রমণাত্মক আফগান ওপেনার। তবে আইসিসি থেকে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ায় গত এপ্রিল থেকেই ক্রিকেটের বাইরে আছেন শাহজাদ।
আলো কাড়তে পারেন স্থানীয় যে তরুণ:
এবাদত হোসেনের সামনে সুযোগ থাকছে লাইমলাইটে আসার। ২০১৫ বিপিএল দিয়ে যেমন সবার নজর কেড়েছিলেন আবু হায়দার রনি, এবার একইরকম সুযোগ থাকছে রবি পেসার হান্ট দিয়ে উঠে আসা এবাদতের সামনেও। গত বছর পর্যন্তও বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের ভলিবল দলের সদস্য থাকা এবাদত এক বছরের মধ্যেই জায়গা করে নিয়েছেন বিসিবি হাই পারফরমেন্স ইউনিট ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলে। প্রতিযোগিতামূলক টি-২০ ম্যাচে এবারই প্রথম খেলতে নামবেন রংপুরের জার্সি গায়ে।
স্কোয়াড:
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মোহাম্মদ মিঠুন, রুবেল হোসেন, সোহাগ গাজী, শাহরিয়ার নাফীস, নাজমুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, ফজলে মাহমুদ, আব্দুর রাজ্জাক, এবাদত হোসেন, ইলিয়াস সানি, নাহিদুল ইসলাম, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, ক্রিস গেইল, রবি বোপারা, ডেভিড উইলি, অ্যাডাম লিথ, জনসন চার্লস, স্যামুয়েল বদ্রি, কুশাল পেরেয়া, থিসারা পেরেরা, স্যাম হেইন, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, জহির খান।